বুধবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বন্দরে পণ্য হ্যান্ডলিং সচল রাখার নির্দেশ

চট্টগ্রাম-বেনাপোল মনিটরিংয়ে জাতীয় কমিটি গঠন করেছে নৌমন্ত্রণালয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রাণ নৌ ও স্থলপথের প্রধান দুই বন্দর কনটেইনার জট মুক্ত করতে ২৪ ঘণ্টা পণ্য হ্যান্ডলিং নিরবচ্ছিন্ন রাখার দিকনির্দেশনা দিয়েছে সরকার। এ জন্য ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকবে ব্যাংক, কাস্টমস, বন্দরসহ অন্যান্য সরকারি অফিস। পণ্য খালাসের পর প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হবে। এসব কাজ সঠিকভাবে হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখতে নৌ-সচিবের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যবিশিষ্ট জাতীয় মনিটরিং কমিটি গঠন করেছে নৌ মন্ত্রণালয়।

এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয় ও ২০৪১ সালে উন্নত দেশ গড়ার জন্য সরকারের লক্ষ্য সামনে রেখে বন্দর ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনা উচিত। চট্টগ্রাম বন্দর অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম হলেও তাদের যন্ত্রপাতি অন্যরা ব্যবহার করছে। যদিও তাদের অর্থের অভাব নেই। বন্দর নিজেই ভালো ব্যবস্থাপনা করতে পারে। তাই বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো উচিত। নৌ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. আবদুস সাত্তার স্বাক্ষরিত ৫ নভেম্বর জারি করা এক আদেশে গঠিত জাতীয় মনিটরিং কমিটির কার্যপরিধিও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এই কমিটিকে প্রতিমাসে কমপক্ষে একবার সভা করার নির্দেশনা দিয়ে জারি করা আদেশে বলা হয়, চট্টগ্রাম ও বেনাপোল বন্দর সপ্তাহে সাত দিনই ২৪ ঘণ্টা খোলা রেখে কার্যক্রমের গতিশীলতা বাড়ানো নিশ্চিত করতে হবে; সব ধরনের কর পরিশোধের পর একই সময়ে অফিস খোলা রেখে দ্রুত কাগজপত্র ছাড়করণ নিশ্চিত করবে কাস্টমস বিভাগ; এই কর পরিশোধের জন্য বন্দর এলাকায় ব্যাংকের শাখাসমূহও ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখতে হবে। একই সঙ্গে কৃষি, প্রাণিসম্পদ, মত্স্য, বিএসটিআই, আণবিক শক্তি কমিশনসহ সরকারি অন্যান্য বিভাগকে ছাড়পত্র প্রদানের জন্য ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখতে বলা হয়েছে। মালামাল ছাড়করণের জন্য ডেলিভারি অর্ডার প্রাপ্তির পর ফি আদায় করে পণ্য খালাস করতে ২৪ ঘণ্টাই বন্দর কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। আর বন্দর থেকে পণ্য খালাসের পর প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের দিকনির্দেশনাও প্রদান করতে বলা হয়েছে জাতীয় মনিটরিং কমিটিকে। এই কমিটি প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট যে কোনো ব্যক্তিকে সদস্য হিসেবে কোঅপ্ট করতে পারবে। নৌ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে সভাপতি করে গঠিত ১৯ সদস্যবিশিষ্ট ওই জাতীয় মনিটরিং কমিটিতে সদস্যসচিব হিসেবে রাখা হয়েছে চবক এবং বাস্থবকের সদস্য (প্রশাসন ও উন্নয়ন)। আর সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের (বাস্থবক) চেয়ারম্যান, অর্থ বিভাগ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, স্বরাষ্ট্র, কৃষি, মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, এফবিসিসিআই, বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ), সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশন, আইসিডি, অফডক অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা) এবং শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি। এর আগে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে ৩১ জুলাই চট্টগ্রাম ও বেনাপোল স্থলবন্দর সপ্তাহে সাত দিন ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখতে অংশীজনদের নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে সভা হয়। এর কার্যবিবরণীতে বলা হয়, চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য জাহাজীকরণ ও খালাসে দীর্ঘসূত্রতার কারণে আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হয়। এতে খরচ বাড়ছে। আবার যথাযথ সময়ে পণ্য প্রেরণে ব্যর্থ হলে কনসাইনমেন্ট বাতিল হয়ে যায়। ফলে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি ও দেশের ভাবমূর্তিও নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে একটি পণ্য খালাস করার পর তা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় বিএসটিআই কিংবা আণবিক শক্তি কমিশনে পাঠাতে হয়। কারণ তাদের কোনো অফিস চট্টগ্রামে নেই। এতে কোনো কোনো পণ্য খালাস করতে দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগে। এ সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া যাবে না। ওই কার্যবিবরণীতে আরও বলা হয়, বেনাপোল বন্দরে জায়গার সংকট রয়েছে। তা দ্রুত সমাধান জরুরি। একই সঙ্গে ক্রেন ফ্রকলিফট সমস্যারও সমাধান দরকার। বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও বিদ্যুৎ সরবরাহের নিশ্চয়তা জরুরি।

সর্বশেষ খবর