বুধবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

রাজশাহীতে বিচ্ছেদ বাড়ার তিন কারণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

সামাজিক জটিলতার প্রভাবে দেশে বিবাহিত নর-নারীর মধ্যকার সম্পর্কের বন্ধন দিন দিন শিথিল হয়ে পড়ছে। বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা গত এক দশকে দ্বিগুণ বেড়েছে। এর মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদে দেশের শীর্ষ অবস্থায় আছে রাজশাহী বিভাগ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এ হার সবচেয়ে বেশি রাজশাহী বিভাগে। কিন্তু কেন? নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা উন্নয়নকর্মীরা বলছেন, তিন কারণে বাড়ছে বিবাহ বিচ্ছেদ। বিশেষজ্ঞদের চিহ্নিত তিন কারণ হলো— এ অঞ্চলে বাল্যবিয়ের হার বেশি, পারিবারিক সচেতনতার অভাব ও সীমান্ত অঞ্চল। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে শীর্ষে রাজশাহী বিভাগ। প্রতি হাজারে সেখানে এক দশমিক ৯ জনের বিচ্ছেদ হয়। রাজশাহীর পরে বিচ্ছেদ বেশি হয় খুলনায় এক দশমিক ৩ ভাগ। রাজশাহী অঞ্চলে বিচ্ছেদের হার বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে মহিলা পরিষদের সভাপতি কল্পনা রায় জানান, এ অঞ্চলে বাল্যবিয়ে বেশি। বাল্যবিয়ের কারণে সেই বিয়ে বেশিদিন টেকে না। বাল্যবিয়ে রোধে যে সচেতনতা দরকার, সেটি গড়ে তোলা যায়নি। সমাজ, নারী সংগঠনগুলো এখনো সেই শিক্ষা দিতে পারছে না। ফলে বিচ্ছেদের হারটাও বাড়ছে। বরেন্দ্র উন্নয়ন প্রচেষ্টার নির্বাহী প্রধান ফয়জুল্লাহ চৌধুরী জানান, এক সময় পরিবার বা নিজেরা পছন্দ করে বিয়ে করেছে। কিন্তু সংসার জীবনে মতের নানা অমিলের কারণে বিচ্ছেদ হয়ে যাচ্ছে। এর মূল কারণ এ অঞ্চলের দরিদ্রতা। বাল্যবিয়ের পাশাপাশি কাজের আশায় অনেকে শহরে গিয়ে একাধিক বিয়ে করছে। আবার সীমান্ত অঞ্চলে বিয়ে করে ওপাড়ে চলে যাচ্ছে। পারিবারিক সচেতনতা না থাকায়ও বাড়ছে এমন বিবাহ বিচ্ছেদের হার বলে মনে করেন রাজশাহীর নারী ও শিশু আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট ইসমত আরা। তিনি জানান, আগের তুলনায় আদালতে বিচ্ছেদ মামলা বেড়েছে। বিবাহ বিচ্ছেদের ফলে সীমান্ত অঞ্চলে নারী পাচারের হারও বাড়ছে বলে মনে করেন মনোবিজ্ঞানী ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবা কানিজ কেয়া। তিনি বলেন, ‘সীমান্ত অঞ্চল হওয়ায় এখানে পাচারের হার বেশি। পাচারের শিকার বেশি হয় তালাকপ্রাপ্তরা। অনেকে কৌশলে বিয়ে করে তালাক দিচ্ছে। পরে ওই নারীকে নানা প্রলোভন দিয়ে পাচারের ভিকটিমে পরিণত করা হচ্ছে।’

সর্বশেষ খবর