শনিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ থামছে না কেন

দুই দিনে ঢুকল ৬৫০ জন, প্রত্যাবাসনে আলোচনায় রাজি জাতিসংঘ

রেজা মুজাম্মেল, কক্সবাজার থেকে

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ থামছে না কেন

মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পালিয়ে আসা বন্ধে চুক্তি হয় দুই দেশের মধ্যে। কিন্তু চুক্তির পরও রোহিঙ্গা আসা অব্যাহত আছে। প্রতিদিন নতুন নতুন রোহিঙ্গা যোগ হচ্ছে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে। প্রতিদিন নতুন করে গড়ে যুক্ত হচ্ছে ২০০ থেকে ৩৫০ জন। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার আসেন ৩৫০ জন এবং গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশে প্রবেশ করেন ৩০০ জন রোহিঙ্গা। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবর্সন কমিশন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৫ আগস্ট থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সর্বসাকুল্যে দেশে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ৬ লাখ ৩৭ হাজার ১৭০ জন। তাছাড়া ২৫ আগস্টের আগে দেশে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৪ হাজার ৬০ জন। নতুন-পুরনো মিলে বর্তমানে দেশে রোহিঙ্গা অবস্থানের সংখ্যা ৮ লাখ ৪১ হাজার ২৩০ জন। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রতিদিনই আমাদের বিভিন্ন ক্যাম্পে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছেন। তবে সব মিয়ানমার থেকে আসা নয়। এর মধ্যে কিছু টেকনাফ বা অপর কোনো ক্যাম্প থেকেও শিফটিং করে আসছেন। যারা অপেক্ষাকৃত ভালো একটা ক্যাম্পে আছেন তারা তাদের আত্মীয়স্বজনকে ফোন করে নিজেদের কাছে নিয়ে আসছেন।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আশরাফুল আজাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘চুক্তি ঠিক আছে। কিন্তু তা বাস্তবায়ন কঠিন। কারণ চুক্তি আর বাস্তবতা এক নয়। রোহিঙ্গারা মনে করেন, তারা কোথায় ফিরবেন, কার কাছে ফিরবেন, ফিরে কী করবেন, সেখানে তাদের কর্মসংস্থান নেই, ফসলি জমি নেই, খাবার নেই, ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবেন না। এর বিপরীতে তারা এখানে ভালো আছেন। জরুরি কথা হলো- তারা সেখানে নিজেদের নিরাপদ মনে করছেন না। তাই এখনো যারা মিয়ানমারে আছেন, তারা নানাভাবে বাংলাদেশে চলে আসছেন।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমানে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা কথা বলছে, ফলে আন্তর্জাতিক প্রত্যাবাসন আইন অনুসরণ করে তাদের ফেরত পাঠাতে হবে। প্রথম কথা হলো- তারা যেতে রাজি কিনা? রাজি হলেও তখন তো মিয়ানমার সরকার তাদের নিবন্ধনের মাধ্যমে ফেরত নেবে। সেটি হবে আরেক দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া।’ রোহিঙ্গাবিষয়ক এই গবেষক বলেন, ‘বিষয়টি যেহেতু পোক্ত হয়ে গেছে। তাই এটির সমাধানও সময়সাপেক্ষ। এর জন্য প্রয়োজন সরকারকে আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখা, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে এ ব্যাপারে সবসময় সচেতন রাখা এবং রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারকে চাপে রাখা।’  

আলোচনায় প্রস্তুত ইউএনএইচসিআর : রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার। জেনেভায় দেওয়া এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছেন ইউএনএইচসিআর মুখপাত্র অ্যাড্রিয়ান এডওয়ার্ডস। তিনি বলেন, ২৩ নভেম্বর মিয়ানমার ও বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছাকৃত পুনর্বাসনের বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির বিষয়ে ইউএনএইচসিআর ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা এখনো হয়নি, তবে আমরা সেদিকে এগোচ্ছি। আমরা আগেই বলেছি, সব শরণার্থীরই মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার অধিকার রয়েছে। তবে এটা অবশ্যই স্বেচ্ছাকৃত হতে হবে।

এডওয়ার্ডস বলেন, ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার চুক্তির সঙ্গে জড়িত ছিল না। তবে নথিপত্রে এর কথা উল্লিখিত রয়েছে। এখানে প্রস্তুতি বলতে চুক্তি স্বাক্ষরের তিন সপ্তাহের মধ্যে (১৪ ডিসেম্বরের আগে) একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ তৈরি করার দিকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। আমরা এই দলের অংশ হয়ে সংশ্লিষ্ট দুই সরকারকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের বিষয়ে সাহায্য করতে প্রস্তুত। যে প্রস্তুতি গ্রহণের মাধ্যমে শরণার্থীরা স্বাধীনভাবে, নিরাপদভাবে ও সম্মানের সঙ্গে সঠিকভাবে ফেরত যেতে পারবে। আমাদের মতে, এতে একটি ত্রিদলীয় স্বেচ্ছাকৃত পুনর্বাসন চুক্তি থাকা উচিত।

সর্বশেষ খবর