শনিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

প্রতিশ্রুতিতে মন গলছে না ভোটারদের

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্ ও শাহজাদা মিয়া আজাদ, রংপুর থেকে

প্রতিশ্রুতিতে মন গলছে না ভোটারদের

তুঙ্গে উঠেছে রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনী প্রচারণা। সকাল থেকে প্রার্থীরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ছড়িয়ে ভোট প্রার্থনা করলেও ভোটারদের মন গলাতে পারছেন না। তবু ভোটারদের মন জয় করতে নানা কৌশলে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন প্রার্থী ও তাদের কর্মীরা। আর এ প্রচারণা চলছে গভীর রাত পর্যন্ত। গতকাল ছিল আনুষ্ঠানিক প্রচারণার পঞ্চম দিন। আর এ দিনে প্রার্থীরা ভোটারদের মন কাড়তে মসজিদে মসজিদে জুমার নামাজে শরিক হয়ে ভোট প্রার্থনা করতে দেখা গেছে। কে কার চেয়ে বেশি প্রচারণায় এগিয়ে থাকবেন এমন প্রতিযোগিতাও দেখা যায় মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে। তবে প্রচারণায় পিছিয়ে নেই কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। অনেকটা পাল্লা দিয়ে তারা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রচারণায় ব্যস্ত রয়েছেন। নগরের মোড়গুলো এখন পোস্টারে ছেয়ে গেছে। দেখে মনে হয় যেন পোস্টারের নগর। আবার অলিগলিতে চলছে মাইকিং। গানে, কবিতায় ও ছড়ায় মাইকে নানা রংঢংয়ে চলছে প্রচারণা। সিটির এ প্রান্ত থেকে ওই প্রান্ত সবখানেই এখন প্রচারণা। কেউ বলছেন, নৌকা, লাঙ্গল। আবার কেউ বলছেন ধানের শীষ। তবে আলোচনার মধ্যে হাতি প্রতীকও রয়েছে। এদিকে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফকে জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভাতিজা আসিফ দলের যুগ্ম-মহাসচিব ছিলেন।

এবার প্রথম রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে। আর এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু (নৌকা), বিএনপির কাওসার জামান বাবলা (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা (লাঙ্গল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এ টি এম গোলাম মোস্তফা বাবু (হাতপাখা), বাসদের আবদুল কুদ্দুস (মই) ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির সেলিম আখতার (আম) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ (হাতি) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এবারের নির্বাচনে ব্যক্তির চেয়ে দলীয় প্রতীককে প্রাধান্য দিচ্ছেন ভোটাররা। প্রার্থীরাও ভোটের পাল্লা ভারী করতে নানারকম প্রতিশ্রুতি দিয়ে বেড়াচ্ছেন। এখন পর্যন্ত প্রতিশ্রুতি দিয়ে খুব একটা সাড়া পাচ্ছেন না প্রার্থীরা। ভোটাররা বলছেন, আর প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাসী নই। নির্বাচিত হলে মেয়র ও কাউন্সিলররা এলাকার সমস্যা সমাধানে কী করতে চান, সে ব্যাপারে শপথ করতে হবে। নগরের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম খাসবাগ এলাকার ভোটার কামাল হোসেন বলেন, গত নির্বাচনে প্রতিশ্রুতির ফুলঝরি ছড়ানো হয়েছিল। নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকার রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করেননি মেয়র ও কাউন্সিলররা। এবার আর প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করি না। সুনির্দিষ্টভাবে শপথ করতে হবে। ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের ঘাঘটপাড়ার ভোটার তালেব আলী বলেন, ‘ভোট আইলে প্রার্থীরা এটা করবে, সেটা করবে বলেন। ভোটে জিতি যাওয়ার পর এলাকার উন্নয়ন করা তো দূরের কথা, মেয়র-কাউন্সিলরদের দেকায় পাওয়া যায় না।’ ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বড়বাড়ী এলাকার গৃহিণী হোসনে আরা বেগম বলেন, ‘এবার মেয়র-কাউন্সিলরদের মিটা কথায় আর ভোলব না। ভোটের কয়দিন পরে রাস্তা হামার ঠিক করি দেবে, সেটা ঠিকমতো কয়াই ভোট নেওয়া নগবে।’ ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মালেক নিয়াজ আরজু বলেন, ‘অনেক প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, কোনো সাড়া পাচ্ছি না। ভোটারদের মন গলাতে শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’ সংরক্ষিত ১০ নম্বর ওয়ার্ডের (২৮, ২৯, ৩০) নারী কাউন্সিলর প্রার্থী সাজনিম শিউলি বলেন, ‘গত নির্বাচনে যিনি নারী কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি এলাকায় কোনো কাজ করেননি। যে কারণে ভোটাররা এবার প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করছেন না।’ বিএনপির মেয়র প্রার্থী কাওসার জামান বাবলা বলেন, ‘নগরের পল্লী এলাকায় প্রচারণায় গিয়ে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছি। গত পাঁচ বছরে ১৮টি ওয়ার্ডের পল্লী এলাকায় কাজের কাজ কিছুই হয়নি। নানা কৌশলে ভোট প্রার্থনা করলেও ভোটাররা মুখ খুলছেন না।’

সর্বশেষ খবর