শনিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগে একাধিক প্রার্থী বিএনপি-জামায়াত দ্বন্দ্ব

মো. রফিকুল আলম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

আওয়ামী লীগে একাধিক প্রার্থী বিএনপি-জামায়াত দ্বন্দ্ব

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ ও ২ সংসদীয় আসন এলাকায় আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য একাধিক প্রার্থীর জনপ্রিয়তা না থাকলেও মনোনয়ন প্রত্যাশায় তারা কেন্দ্রে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। অন্যদিকে কেন্দ্রে বিএনপি ও জামায়াতের জোট থাকলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনে মনোনয়ন নিয়ে প্রার্থীদের দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। নেতারা বলছেন, এই আসনে বিএনপি প্রার্থী দিলে জামায়াতও প্রার্থী দেবে। একাদশ সংসদ  নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের মধ্যে গ্রুপিং চরম পর্যায়ে থাকলেও বিএনপির মধ্যে তা কিছুটা কম। আর জামায়াতও স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে চলেছে গোপনে। এমনিতেই জামায়াত-বিএনপি অধ্যুষিত এই জেলার ৩টি আসনই স্বাধীনতার পর থেকে তাদের দখলে ছিল। কিন্তু তাদের দুঃশাসনের কারণে নবম সংসদ নির্বাচনে জেলার ৩টি আসনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিজয়ী করেন ভোটাররা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসন এলাকায় আওয়ামী লীগের পরিস্থিতি খুব কঠিন অবস্থায়। কারণ এখানে বিএনপি-জামায়াতের অবস্থান শক্ত। যুদ্ধাপরাধ মামলায় জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর শাস্তি ঘোষণা করা হলে শিবগঞ্জ এলাকায় তারা ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। ওই সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এনামুল হকসহ আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতা কর্মীদের বিপদের মুখে ফেলে রেখে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। ওই সময় জামায়াত-বিএনপির তাণ্ডবে নয়জন প্রাণ হারান। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় কানসাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সদর দফতর। এতে প্রায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এ ছাড়া কানসাট পল্লী বিদ্যুৎ আন্দোলনের নেতা মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছেন এমন খবরে তার বাড়িও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। রাব্বানী আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দশম সংসদে নির্বাচিত হন। তারপর তিনি আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করে জামায়াত-বিএনপির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। নবম সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে গোলাম রাব্বানী ৫০ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। তাই এই আসনটি ধরে রাখতে হলে ত্যাগী নেতা মূল্যায়ন করে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া প্রয়োজন বলে অনেকেই মনে করেন। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, বর্তমান সংসদ সদস্য গোলাম রাব্বানী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ এনামুল হক, ইঞ্জিনিয়ার মাহতাব উদ্দিন এবং জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল। এই আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা সাবেক হুইপ অধ্যাপক শাহজাহান আলী মিয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে দলীয় সূত্র জানায়। তবে কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকতও নির্বাচন করবেন বলে তিনি ইদানীং এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছেন। এই দুজনই দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় থাকেন না। অন্যদিকে এই আসনটিতে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলেও সংসদ নির্বাচনে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা কেরামত আলী প্রার্থী হবেন এই ঘোষণা দিয়ে রেখেছে দলটি। অন্যদিকে জাসদ (আম্বিয়া) থেকে মো. আজিজুর রহমান আজিজ এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে মো. আলাউদ্দিন টিপু ও মো. নজরুল ইসলামের নাম শোনা যাচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল-গোমস্তাপুর-ভোলাহাট) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা বিশ্বাসের সঙ্গে সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ জিয়াউর রহমানের চরম দ্বন্দ্ব রয়েছে। এনিয়ে সাধারণ কর্মীরাও দুই ভাগে বিভক্ত। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর মোস্তফা বিশ্বাস অধিকাংশ সময় ঢাকায় থাকেন। তবে তিনি যখনই এলাকায় আসেন দলের জন্য কাজ করেন। নবম সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন সংসদ সদস্য জিয়াউর রহমান নির্বাচনে অংশ না নিয়ে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। পাশাপাশি তখন থেকেই তিনি এলাকায় আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করে চলেছেন। তিনি মনে করেন আগামী নির্বাচনে দল যাকেই মনোয়ন দেবে তিনি তার পক্ষে কাজ করবেন। তবে আগামীতে এই আসনটি ধরে রাখতে হলে ত্যাগী নেতা বেছে প্রার্থী দেওয়া প্রয়োজন বলে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা মনে করেন। এই আসনে আওয়ামী লীগের যারা প্রার্থী হবেন বলে শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস, সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউর রহমান, মহন্ত এস্টেটের মহন্ত মহারাজ শ্রী ক্ষিতীশ চন্দ্র আচারী, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট মো. আফসার আলী, নাচোল উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আবদুল কাদের ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. আনোয়ারুল ইসলাম আনোয়ার। অপরদিকে বিএনপি থেকে কেন্দ্রীয় যুবদলের অর্থ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ আমিনুল ইসলাম, যুবদল নেতা মো. আসাদুল্লাহ আহমেদ ও সাবেক গোমস্তাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান খুরশিদ আলম বাচ্চু প্রার্থী হবেন বলে শোনা যাচ্ছে। অন্যদিকে নাচোল উপজেলা জামায়াতের আমির ইয়াহিয়া খালেদ প্রার্থী হবেন বলে শোনা যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর