শনিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

হাসপাতালে মিলবে বিশ্বমানের সেবা

জিন্নাতুন নূর

হাসপাতালে মিলবে বিশ্বমানের সেবা

দেশে প্রতিবছর দুর্ঘটনা ও সহিংসতায় ছয় লাখেরও বেশি মানুষ দগ্ধ হচ্ছেন। এসব রোগীর উন্নত চিকিৎসা দান বা তাদের জীবন বাঁচানোর একমাত্র প্রতিষ্ঠান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট। এ ইউনিটের সেবাকে বিশ্বমানের করে তুলতে শুরু হয়েছে নানা প্রস্তুতি ও নির্মাণ সংক্রান্ত নানা কাজ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি রোগী হওয়ায় এবং বার্ন ইউনিটকে পূর্ণাঙ্গ ইনস্টিটিউট করার উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান সরকার। এজন্য দগ্ধ রোগীদের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট। যার নামকরণ করা হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে। গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর রাজধানীর পুরান ঢাকার চানখাঁরপুলে ১৭ তলা বিশিষ্ট এই ইনস্টিটিউটের অবকাঠামোগত কাজ শুরু হয় এবং এ কাজ এখন অনেকদূর এগিয়েছে। একইসঙ্গে এ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ও নার্সদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে প্রশিক্ষণ প্রদানের কাজ। বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে এটিকে গড়ে তোলার জন্য অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজও জোরেশোরে চলছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে এ প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও, কাজের ইতিবাচক ধারাবাহিকতার কারণে আগামী বছরের সেপ্টেম্বরেই এটি যাত্রা শুরু করতে পারে। প্রকল্পের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, আগামী বছরের মাঝামাঝিতে এই ইনস্টিটিউটটি চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে প্রকল্প ব্যয় ৫২২ কোটি টাকা ধরা হলেও সংশ্লিষ্ট মহল জানিয়েছে প্রকল্প ব্যয় বাড়তে পারে। সরেজমিন প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ভবনটির ভিত শক্ত করতে মাটির অনেক গভীরে খনন কাজ করা হয়েছে। ভবনের চারটি লেভেলের অবকাঠামোগত নির্মাণ কাজ এরই মধ্যে শেষ করা হয়েছে। অবকাঠামো নির্মাণে ব্যবহার করা হচ্ছে বিশাল ধাতব পাত। দেখা গেছে, দিনরাত নির্মাণ শ্রমিকদের শ্রমে জাতীয় বার্ন ইউনিটের কংক্রিটের অবয়ব ক্রমে একটি উচ্চ ভবনের আদল পেতে যাচ্ছে। সড়কের পাশে ভবন নির্মাণ স্থানের আশপাশে দুর্ঘটনা ও ধুলোবালি এড়াতে টিন দিয়ে ঘেরা দিয়ে রাখা হয়েছে।  ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, এরই মধ্যে ১৭ তলা বিশিষ্ট ইনস্টিটিউটটির তিনটি বেজমেন্ট নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। এর উপরের অংশে অন্যান্য তলায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অধ্যয়নরত মেডিকেল শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, লাইব্রেরি ও হাসপাতাল তৈরি করা হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এই ভবনের একটি ব্লকে বার্ন, একটিতে প্লাস্টিক সার্জারি এবং অন্যটিতে একাডেমিক ভবন চালুর পরিকল্পনা আছে। একইসঙ্গে হাসপাতালের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয়ের প্রক্রিয়াও চলছে। আন্তর্জাতিক মানের সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে এখানে যে চিকিৎসক ও নার্সরা কাজ করবেন— তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য বর্তমানে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বার্ন ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ও নার্সদের প্রশিক্ষণ প্রদান করছেন। এরই মধ্যে বাংলাদেশি চিকিৎসকদের দুটি গ্রুপের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। রোগীদের সেবা প্রদানের জন্য এই ইনস্টিটিউটে ৪০টি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট, ৬০টি হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিট এবং ১২টি আধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ অপারেশন থিয়েটার রাখা হবে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য থাকবে ল্যাবরেটরি, শ্রেণিকক্ষ এবং সেমিনার কক্ষ।

বার্ন ইউনিট সূত্রে আরও জানা গেছে, বিশ্বমানের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে আধুনিক এই ইনস্টিটিউটে আধুনিক স্কিন ব্যাংক, স্পেশালাইজড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মাইক্রোসার্জারি ল্যাবরেটরি, হাইপারবারিক অক্সিজেনসহ অন্যান্য সুবিধা থাকবে। বাংলাদেশে দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা ও প্লাস্টিক সার্জারির জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন মাত্র ৫২ জন। বিশেষজ্ঞরা জানান, এই রোগীদের সেবা প্রদানে কমপক্ষে ১৫০০ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রয়োজন। জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ১২০০ নার্স ও ৫০০ চিকিৎসক নিয়োগের কথা থাকলেও জনবল নিয়োগের বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন আছে। বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি।

সূত্র জানায়, বাইরের দেশের রোগীরাও যাতে বিশেষায়িত এই ইনস্টিটিউটে এসে চিকিৎসা নিতে পারেন— তা মাথায় রেখেই জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট নির্মাণ করা হচ্ছে। অসচ্ছল রোগীদের এখানে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হবে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের বিভাগীয় প্রধান এবং এই প্রকল্পের পরিচালক ডা. আবুল কালাম বলেন, আমাদের মূল সমস্যা প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব। দেশে মোট জনসংখ্যার অনুপাতে দগ্ধ রোগীর জন্য চিকিৎসকের সংখ্যা হাতেগোনা। আশা করছি এই ইনস্টিটিউটটি নির্মাণ হলে প্রশিক্ষিত জনবল দিয়ে রোগীদের আন্তর্জাতিক মানের সেবা দিতে পারব। তিনি জানান, সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কাজ চলছে। আগামী বছরের নির্ধারিত সময়ের আগেই এ কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর