শনিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ত্রিপুরায় মৈত্রী উদ্যান ১৬ ডিসেম্বর উদ্বোধন

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

অবশেষে দীর্ঘ আট বছরের প্রচেষ্টায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ স্মরণে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য সরকার তৈরি করেছে একটি ১৯৭১-এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ স্মারক স্মৃতি পার্ক। ভারতের ত্রিপুরার চোত্তাখোলায় ২০ হেক্টর জমির ওপর গড়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক মানের এই পার্ক। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবসে এই উদ্যানের উদ্বোধন করবেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। এর নাম রাখা হয়েছে ‘ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী  পার্ক’। এ ব্যাপারে গতকাল ত্রিপুরা রাজ্যের স্বাস্থ্য ও রাজস্ব আদায় মন্ত্রী বাদল চৌধুরী জানান, ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ ত্রিপুরার চোত্তাখোলায় ৭ কোটি রুপি খরচে এ উদ্যানটি নির্মাণ করা হয়েছে। আগামী ১৬ ডিসেম্বর ভারত ও বাংলাদেশের শিল্পীদের উপস্থিতিতে উদ্যানটির উদ্বোধন করা হবে। এরপর সেটি সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হবে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় এই চোত্তাখোলাতেই মুক্তিযোদ্ধাদের অলিখিত ছাউনি ছিল। সে সময় মুক্তিবাহিনী চোত্তাখোলায় বেসক্যাম্প স্থাপন করে দেশের ভিতরে প্রবেশ করে পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। সেই স্মৃতি ধরে রাখতেই ২০০৯ সালে স্থানীয় এমএলএ সুধন দাস ওই স্থানকে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি পার্ক নাম দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ উৎসব শুরু করলেও পরবর্তী সময় ওই স্থানের নামকরণ করা হয় ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী উদ্যান এবং ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি এই পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

প্রবীণ কমিউনিস্ট নেতা ও এমএলএ সুধন দাস জানান, ‘২০০৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর যখন বাংলাদেশের বিজয় দিবস উদ্যাপন করি তখনই মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণের ব্যাপারে আমরা প্রথম এ ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করি ও কাজ শুরু করি। ২০১০ সালের মার্চে বাংলাদেশ সফরকালে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে উদ্যান নির্মাণের বিষয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার আলোচনা করেছিলেন। এর পরই সরকারিভাবে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।’ সুধন দাস আরও জানান, ‘এটি শুধু একটি পার্কই নয়, আরও অনেক কিছু রয়েছে এতে। একটি যুদ্ধ জাদুঘর, উঁচু টিলা, সবুজ উপত্যকা, হ্রদ, গাছপালা, ভাস্কর্য, বাংলাদেশি মুক্তিযোদ্ধাদের কবরস্থান ছাড়াও আরও অনেক উপাদান থাকবে। এই পার্কটি নির্মাণ ও উন্নয়নে ফরেস্ট মন্ত্রণালয় ছাড়াও ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের অন্তত ১০টি মন্ত্রণালয় একযোগে কাজ করেছে। এই পার্কের ভিতরেই থাকছে একটি বিশাল ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সরাসরি চাক্ষুষ করা যাবে বাংলাদেশের কুমিল্লা, ফেনী ও নোয়াখালীর একাধিক অংশ।’ এই উদ্যানের ভিতর বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বিশাল ভাস্কর্য থাকছে বলেও জানান তিনি। সম্প্রতি ত্রিপুরা রাজ্য সফর করে যাওয়া বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী এ কে এম মোজাম্মেল হক জানান, ‘এ রকম একটি পার্ক ও জাদুঘর নির্মাণের জন্য আমরা ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ।’

সর্বশেষ খবর