রবিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

সরকার বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছে

—খালেদা জিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, জোর করে ক্ষমতা ধরে রাখতে গিয়ে সরকার বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, সরকারের কোনো গণভিত্তি নেই। ভোটারবিহীন নির্বাচনে গঠিত এ সরকার জুলুম-নির্যাতন ও সন্ত্রাসের হোতা। দেশের জনগণের কাছ থেকে এবং আন্তর্জাতিকভাবেও বিচ্ছিন্ন হয়ে সরকার ক্রুদ্ধ হয়ে উঠেছে। আর এই ভয়ঙ্কর ক্রুদ্ধতার বিষাক্ত ছোবল গিয়ে পড়ছে বিরোধী নেতা-কর্মীদের ওপর। সেজন্যই দেশে আইনের শাসনের বদলে আওয়ামী শাসনের এক বীভত্স বিকৃত রূপ তীব্র মাত্রা ধারণ করেছে।

জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভূইয়া জুয়েলকে তার বাসা থেকে গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে শুক্রবার রাতে দেওয়া এক বিবৃতিতে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। বিবৃতিতে খালেদা জিয়া বলেন, দেশের সর্বত্র সরকারের উন্মত্ত আচরণকে প্রতিহত করতে ঐক্যবদ্ধ গণতান্ত্রিক শক্তির এগিয়ে আসার কোনো বিকল্প নেই। তা না হলে জনসমাজে কারও কোনো নিরাপত্তা থাকবে না। তিনি বলেন, সারা দেশে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের ধারাবাহিকতায় আবদুল কাদের ভূইয়া জুয়েলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মূলত দুঃশাসনের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ প্রতিবাদী নেতৃত্বকে ধ্বংস করতেই সরকার বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের গ্রেফতার করছে, আর তারই শিকার হলো জুয়েল। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, জুয়েলকে গ্রেফতার করা হলেও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরা কেউ বিপর্যস্ত হবে না। বরং আরও বলীয়ান হয়ে বর্তমান ভোটারবিহীন নির্বাচনে বিজয়ী শাসকগোষ্ঠীর চলমান নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে আরও বেশি প্রতিবাদী হয়ে উঠবে। বিবৃতিতে তিনি অবিলম্বে জুয়েলের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বানোয়াট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সব মামলা প্রত্যাহারসহ নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।

আজ স্থায়ী কমিটির বৈঠক : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। আজ রাতে তার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক হবে। বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে সহায়ক সরকার ও বিএনপির সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে দেওয়াসহ মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সম্ভাব্য নির্বাচন ছাড়াও সাংগঠনিক অবস্থা, দলীয় নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার, তাদের বিরুদ্ধে মামলা-হামলাসহ দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে।

বধ্যভূমিতে পরিণত করা হয়েছে : অন্য এক বিবৃতিতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, বাংলাদেশে এখন ভয়াবহ দুঃসময় চলছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পূর্বাপর বাংলাদেশকে বধ্যভূমিতে পরিণত করা হয়েছে। বর্তমান অবৈধ ক্ষমতাসীন জোট সীমাহীন রক্তপাত ও বেপরোয়া নিপীড়ন-নির্যাতনের মধ্য দিয়ে জনগণের সব গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে নিয়েছে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার মানবাধিকারের পরিপূরক। অথচ বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের মানবাধিকার শূন্যের নিচে অবস্থান করছে। আজ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে গতকাল গণমাধ্যমে বিবৃতি দেন বেগম জিয়া। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশে শুধু বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরাই নন, সাংবাদিক, কূটনীতিক, মানবাধিকার কর্মী, ছাত্র, শিক্ষক, শ্রমিক, নারী, শিশুসহ কারোই কোনো নিরাপত্তা নেই। এদের অধিকাংশই গুম, গুপ্তহত্যা এবং বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হচ্ছেন। সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করলেই বিরোধী দলের নেতা-কর্মী ছাড়াও দলনিরেপক্ষ রাজনৈতিক বিশ্লেষক, টক-শো আলোচকদের বিরুদ্ধেও মিথ্যা মামলা দায়ের করা হচ্ছে। অনেককে কারান্তরীণও করে রাখা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘মানবাধিকার দিবস’-এর এ বছরের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘আমাদের অধিকার, আমাদের স্বাধীনতা : সর্বদা’।

বর্তমানে বাংলাদেশে জনগণের না আছে নাগরিক স্বাধীনতা, না আছে মৌলিক মানবিক অধিকার। সুতরাং এই নৈরাজ্যকর দুঃশাসনের ছোবল থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের এই মুহূর্তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। দেশের মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তার জন্য জনগণের মিলিত কণ্ঠের আওয়াজ তুলে বর্তমান অপশাসনের অবসান ঘটাতে হবে। জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকার দিবসে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

সর্বশেষ খবর