বৃহস্পতিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বাংলাদেশকে দায়ী করে বিবৃতি ফিলিপিনো ব্যাংকের!

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি

মানিক মুনতাসির

নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় জড়িতদের ধরার ব্যাপারে প্রথম দিকে বাংলাদেশকে সহায়তা দিয়েছে  ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন তারা উল্টো পথে চলতে শুরু করেছে। দায়ী প্রতিষ্ঠান রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনকে (আরসিবিসি) এ ঘটনার জন্য প্রথম দফায় গত বছরের আগস্টে ২ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার জরিমানা করে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দ্বিতীয় দফায় জরিমানার জন্য যখন আলোচনা চলছে, ঠিক সেই সময় আরসিবিসি এ ঘটনার জন্য বাংলাদেশকে দায়ী করে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছে। শুধু তাই নয়, এ ঘটনায় বাংলাদেশের করা তদন্ত প্রতিবেদনের অনুলিপি চেয়ে আবারও বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, চুরি হওয়া রিজার্ভের বাকি অর্থ পেতে হলে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের      (বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা) সম্পর্কিত তথ্য তাদের দিতে হবে। এর আগেও একাধিকবার তারা এ-সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে বাংলাদেশকে চিঠি দিয়েছিল। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় এবারও তা নাকচ করে দিয়েছে বলে জানা গেছে। অথচ এ বছরের শুরু থেকেই আরসিবিসি বলে আসছিল, হ্যাকারদের ধরতে বাংলাদেশকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি বছরের শুরুতে এ ঘটনার জন্য দায়ী সে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংক আরসিবিসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল। এতে সামান্য কিছু জরিমানা করেই তারা দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে বলে মনে করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ক্ষেত্রে আবারও বাংলাদেশকে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়েছে সে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অবশ্য এরই মধ্যে ফিলিপাইন থেকে এখন পর্যন্ত ফেরত এসেছে মাত্র দেড় কোটি ডলার। বাকি আরও সাড়ে ৬ কোটি ডলার (৫১০ কোটি টাকা) ফেরতের ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি নেই বলে অর্থমন্ত্রীর দফতরকে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এমনকি এই অর্থ কোথায় গেছে আদৌ তার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি বলে বাংলাদেশ বাংককে জানিয়েছে ফিলিপাইন। রিজার্ভ চুরির এ ঘটনার প্রায় দুই বছর পেরিয়ে গেছে। ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমে গচ্ছিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার (প্রায় ৮০০ কোটি টাকা) হাতিয়ে নেয় একটি হ্যাকার চক্র। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘আমরা আরসিবিসিকে দুনিয়া থেকে বিদায় করতে চাই।’

এর মাত্র কয়েক দিনের মাথায়, আরসিবিসির আইন কর্মকর্তা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির জন্য বাংলাদেশকেই দায়ী করে বক্তব্য দিয়েছেন। সূত্র জানায়, ফেডারেল রিজার্ভ, ফিলিপাইন কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং আরসিবিসির বিরুদ্ধে কী ধরনের আইনি পদক্ষেপ নেওয়া যায় সে ব্যাপারে এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ (এপিজি) ও আন্তর্জাতিক অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিলের (এএমএলসি) সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে এপিজি ও এএমএলসি আরসিবিসির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার পরামর্শ দিয়েছে বলে জানা গেছে। এপিজির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ফেডারেল রিজার্ভ ও ফিলিপাইনের আরসিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করে অর্থ আদায় করা দীর্ঘ প্রক্রিয়া হলেও বাংলাদেশের উচিত হবে সেটাই করা। বাংলাদেশ ব্যাংকও এ ব্যাপারে প্রস্তুতি নিচ্ছে। খুব শিগগিরই মামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ডেপুটি গভর্নর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা মামলার প্রস্তুতির শেষ পর্যায়ে রয়েছি। এ ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। যে কোনো সময় আরসিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।’

সর্বশেষ খবর