রবিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে মনোনয়ন নিয়ে দ্বন্দ্ব চরমে

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে মনোনয়ন নিয়ে দ্বন্দ্ব চরমে

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নওগাঁ ৩ ও ৪ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের পদচারণা শুরু হয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা সভা, সমাবেশ, গণসংযোগ, পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন টাঙিয়ে নিজেদের প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ ফেসবুক-টুইটারের পাশাপাশি মতবিনিময় সভা করে নির্বাচন করার আগ্রহ প্রকাশ করছেন।

নওগাঁ-৩ (বদলগাছী-মহাদেবপুর) : এ দুই উপজেলায় ক্ষমতাসীন দলটির মনোনয়ন নিয়ে আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দীন তরফদার এবং সাবেক সংসদ সদস্য ও বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আকরাম হোসেন চৌধুরী। ছলিম উদ্দিন তরফদার ছিলেন মহাদেবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। দশম সংসদ নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়ায় তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। সেই নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী আকরাম হোসেনকে ৩০ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। নির্বাচিত হওয়ার প্রায় সাড়ে তিন বছর পর গত ৭ মে আওয়ামী লীগ তাকে দলীয় সংসদ সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এ দুই উপজেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সুপ্ত দুটি ভাগ রয়েছে বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্যকে ঘিরে। স্থানীয় সভা-সমাবেশগুলোতে প্রায়ই সেটা পরিলক্ষিত হয়। আকরাম হোসেন চৌধুরী নবম জাতীয় সংসদে থাকা অবস্থায় তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে দুই উপজেলার নেতা-কর্মীদের মাঝে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা যায়। এরই ফলশ্রুতিতে দশম সংসদ  নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন তিনি। এ দুই উপজেলায় বিএনপির কোন্দল ছিল চরমে। একটিতে নেতৃত্ব দিতেন সাবেক ডেপুটি স্পিকার আখতার হামিদ সিদ্দিকী ও অপরটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা ও বদলগাছী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফজলে হুদা বাবুল। তবে গত ১৯ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে সাবেক ডেপুটি স্পিকার আখতার হামিদ সিদ্দিকীর মৃত্যুর পর কপাল খুলে যায় ফজলে হুদা বাবুলের। বর্তমানে তিনি এ দুই উপজেলার সব নেতা-কর্মীদের পাশে রয়েছেন সব সময়। রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে দলীয় নেতা-কর্মীদের বিভিন্নভাবে সম্পৃক্ত রেখেছেন। ভিশন ২০৩০ এবং দলীয় সদস্য সংগ্রহ বিষয়গুলো এলাকার দলীয় এবং সাধারণ জনগণের মাঝে তুলে ধরার ক্ষেত্রে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তিনি দাবি করেন, ভোটাররা এখন প্রার্থী হিসেবে অপেক্ষাকৃত কম বয়সীদের পছন্দ করেন। কেননা তারা চিন্তা চেতনায় অনেক আধুনিক ও পরিশ্রমী হয়। এ ছাড়া বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আসফ কবির চৌধুরী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা ও জেলা বিএনপির সদস্য রবিউল আলম এবং জাতীয় পার্টি থেকে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা শাখার সভাপতি  তোফাজ্জল হোসেন। নওগাঁ-৪ (মান্দা) :  এ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী মাঠ পর্যায়ে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি অনেকে আবার দৌড়-ঝাঁপ শুরু করেছেন কেন্দ্রে। এদের মধ্যে কেউ কেউ লবিং-গ্রুপিংকে প্রাধান্য দিয়ে জেলা, বিভাগ ও কেন্দ্রীয় নেতাদের নিকট ধর্ণা দিতে শুরু করেছেন। উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের প্রতিশ্রুতিও শোনা যাচ্ছে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মুখে। বর্তমান সরকারের বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বর্ষীয়ান নেতা মুহা. ইমাজউদ্দিন প্রামাণিক এমপি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানা গেছে। তবে বয়সের ভারে ন্যুব্জ এই নেতার মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে শঙ্কায় রয়েছেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। এরপর আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে যথেষ্ট এগিয়ে রয়েছেন নওগাঁ জেলা আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সভাপতি আবদুল বাকী। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়াকালীন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন। এরপর তিনি নিজ উপজেলায় আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক, ২০০৭ সালে নওগাঁ জেলা আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও ২০১৬ সালে নওগাঁ জেলা আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত হন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ থেকে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে, তারা হলেন,  উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমদাদুল হক মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক সরদার জসিম উদ্দিন, সহ-সভাপতি আবদুল লতিফ শেখ ও ব্রহানী সুলতান মাহামুদ, আইনবিষয়ক সম্পাদক মির্জা মাহবুব বাচ্চু। অপরদিকে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ও বর্তমান উপজেলা বিএনপির সভাপতি শামসুল আলম প্রামাণিক এবারও নির্বাচন করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তবে তিনি দুর্ঘটনাজনিত কারণে সাময়িক অসুস্থ থাকায় রাজনীতি থেকে অনেকটা দূরে রয়েছেন। আর এ সুযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সদস্য আবদুল মতিন নির্বাচন করার জন্য কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন। তিনি বলেন, বিএনপিতে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকতে পারেন। এটা সমস্যার কিছু নয়। ধানের শীষ প্রতীক পেলে জয় নিশ্চিত। এছাড়া যাদের নাম শোনা যাচ্ছে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. ইকরামুল বারী, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মকলেছুর রহমান, জাতীয় পার্টি থেকে জেলা জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক ও মান্দা উপজেলা শাখার সভাপতি আলতাব হোসেন, জেলা জামায়াতের আমির খন্দকার আবদুর রাকীব। তবে সাধারণ জনগণের প্রত্যাশা এসব আসনে ভোটের লড়াই হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর মধ্যেই।

সর্বশেষ খবর