রবিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
সন্দেহভাজন একজন আটক

মিলু গোমেজ খুনের নেপথ্যে সম্পদ!

নিজস্ব প্রতিবেদক

মহাখালীর আজরতপাড়ায় খ্রিস্টান বৃদ্ধা মিলু মিলরেট গোমেজ (৬৫) খুনের নেপথ্যে তার সম্পদের বিষয়টি যুক্ত থাকতে পারে বলে তদন্তসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। তাকে শুক্রবার সকালে নিজ ভবনে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় গতকাল বিকালে কিরণ নামে আজরতপাড়ার এক ব্যক্তিকে পুলিশ আটক করেছে। একই সঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃত ছুরিটি সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হবে এবং অনিল গোমেজের মুখের আচড়গুলো ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। নিহতের পারিবারিক সূত্র বলছে, ৭৯ গ্রিন রোডের তৃতীয় তলার দুটি ফ্ল্যাট ছাড়াও গাজীপুরের কালীগঞ্জে অনেক সম্পদ রয়েছে মিলু গোমেজের নামে। ৩৮ আজরতপাড়ার ৮ কাঠা জমির ওপর তিন তলা বাড়িটি স্বামী অনিল গোমেজের নামে হলেও ওই পরিবারের সবকিছুই দেখভাল করতেন বৃদ্ধা মিলু গোমেজ। তার বোন রিটা পেরেরা শেলী জানান, হত্যাকাণ্ডের পর ওই ফ্ল্যাট থেকে জমিজমার কাগজপত্র, দম্পতির কানাডার গ্রিনকার্ডসংবলিত দুটি পাসপোর্টসহ অনেক কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না। পারিবারিক সূত্র জানায়, প্রতি বছর একবার কানাডায় যাওয়া-আসা করলেও আগামী বছর থেকে পাকাপাকিভাবেই চলে যাওয়ার কথা ছিল মিলু গোমেজের। এজন্য সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন করছিলেন হিউবার্ট অনিল গোমেজ (৭৮) ও মিলু মিলরেট গোমেজ দম্পতি। তাদের চার সন্তানের তিনজন কানাডা, একজন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। দেশের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে দেওয়ার জন্য চার ছেলেই বৃদ্ধ বাবা-মাকে দীর্ঘদিন ধরে পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন। এদিকে তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, তারা সম্পদের বিষয়টি ছাড়াও কারও সঙ্গে ব্যক্তিগত কিংবা পারিবারিক বিরোধ ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখছেন। তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘আমরা সম্ভাব্য সব কারণই খতিয়ে দেখছি। আটক কিরণকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার কাছ থেকে সন্দেহভাজন কিছু ব্যক্তির নাম পেয়েছি। দেখা যাক কিছু পাই কিনা। এর বাইরে আর কিছু বলা যাচ্ছে না।’ র‌্যাব-২-এর উপ-অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘পুলিশের পাশাপাশি আমরাও চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটির ছায়াতদন্ত করছি। সম্ভাব্য বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখছি।’ মহাখালীর বেসরকারি আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতালসংলগ্ন খ্রিস্টান গলির দক্ষিণ দিকের ডান দিকে ৮ কাঠা জমির ওপর নির্মিত ভবনের মালিক হিউবার্ট অনিল গোমেজ। এ বাড়িরই তিন তলার উত্তর দিকের ফ্ল্যাটে খুন হয়েছেন মিলু গোমেজ। গতকাল দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নিহতের ভাইবোনসহ অন্য স্বজনরা ঘটনার পর থেকে ওই ফ্ল্যাটেই অবস্থান করছেন। সবাই শোকে মুহ্যমান। আগের রাতে অনিল গোমেজকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তেজগাঁও থানায় নিয়ে যাওয়া হলেও রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ তাকে বাসায় রেখে যায়। নিহতের ছেলেরা কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফেরার পরই সমাহিত করা হবে মিলু গোমেজকে। এর আগ পর্যন্ত মৃতদেহ থাকবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে। কিরণের বিষয়টি জানতে চাইলে নিহত মিলুর ছোট ভাই হেনরি গোমেজ বলেন, ‘কিরণ পাশের একটি খ্রিস্টান পরিবারের কেয়ারটেকার। মহাখালীতে সব মিলিয়ে সাত-আটটি খ্রিস্টান পরিবার থাকে। তাদের সবার সঙ্গেই হৃদ্যতা ছিল দিদির। দিদি দেশে থাকলে কিরণকে ফোন দিলে বাজার করাসহ নানা কাজ করে দিত। এজন্য দিদিও তাকে বিভিন্ন সময় টাকাপয়সা দিতেন।’

সর্বশেষ খবর