সোমবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভবিষ্যতে যুদ্ধজাহাজ রপ্তানি

চট্টগ্রামে নেভাল একাডেমিতে প্রধানমন্ত্রী

প্রতিদিন ডেস্ক

ভবিষ্যতে যুদ্ধজাহাজ রপ্তানি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বিএনএ ফ্লোটিলায় রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন—বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করে বলেছেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে ধীরে ধীরে ‘বায়ার নেভি’ থেকে ‘বিল্ডার নেভি’-তে পরিণত করা হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ যুদ্ধজাহাজ রপ্তানি করতে সক্ষম হবে। খবর : বাসস’র।

প্রধানমন্ত্রী গতকাল চট্টগ্রামের বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিতে রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ মিডশিপম্যান-২০১৫ পরিদর্শন এবং বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণ দেন। এ সময় তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে এসেই দেশে নৌবাহিনীর দক্ষ ব্যবস্থাপনায় খুলনা শিপইয়ার্ড এবং নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ডে দেশীয় প্রযুক্তিতে আধুনিক যুদ্ধজাহাজ নির্মিত হচ্ছে। গত মাসে খুলনা শিপইয়ার্ডে নির্মিত দুটি সাবমেরিন-বিধ্বংসী লার্জ পেট্রল ক্র্যাফট ‘দুর্গম’ ও ‘নিশান’ নৌবহরের কমিশন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেডে আধুনিক ফ্রিগেট তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। প্রধানমন্ত্রী ক্যাডেটদের উদ্দেশে বলেন, একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর সদস্য হিসেবে সর্বদা ঊর্ধ্বতনদের প্রতি আনুগত্য ও অধস্তনদের সহমর্মিতা প্রদর্শন করবে। চেইন অব কমান্ড মেনে চলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে বিশ্ব দরবারে আরও গৌরবোজ্জ্বল আসনে অধিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবে। তিনি পাসিং আউট ক্যাডেটদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার মহান দায়িত্বে আত্মনিয়োগের আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রী সালাম গ্রহণ করেন এবং কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। তিনি অনুষ্ঠানে তিন বছরে প্রশিক্ষণে সব বিষয়ে সর্বোচ্চ মান অর্জনকারী ক্যাডেটকে ‘সোর্ড অব অনার’ প্রদান করেন। ২০১৫ ব্যাচের সোহানুর রহমান সব বিষয়ে সর্বোচ্চ মান অর্জন করে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সোর্ড অব অনার লাভ করেন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে বিশেষ কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে মিডশিপম্যান সীমান্ত নন্দী আকাশ ‘নৌবাহিনীপ্রধান স্বর্ণপদক’ এবং ডাইরেক্ট অ্যান্ট্রি অফিসার অ্যাক্টিং সাব- লেফটেন্যান্ট এ জেড এম নাসিমুল ইসলাম ‘বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিন স্বর্ণপদক’ গ্রহণ করেন। পরে প্যারেড কমান্ডার নবীন অফিসারদের শপথগ্রহণ করান। এর আগে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম নৌঘাঁটিতে এসে পৌঁছালে নৌবাহিনীপ্রধান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল এম আবু আশরাফ তাকে স্বাগত জানান। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, জাতীয় সংসদের সদস্য, সেনা ও বিমান বাহিনীর প্রধান, সরকারের পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, কূটনীতিক এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি ও উন্নয়নে নেতৃত্ব প্রদানের জন্য বহির্বিশ্বে এখন পথিকৃৎ ধরা হয়। বর্তমান সরকার সমুদ্রসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তির পর ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি টেরিটোরিয়াল সি, ২০০ নটিক্যাল মাইল অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশের সম্পদের অধিকার লাভ করেছি।’ তাঁর সরকারের সময়ে নৌবাহিনীকে একটি অত্যাধুনিক ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে পরিণত করার ক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের জলসীমায় নজরদারি বাড়াতে আরও মেরিটাইম পেট্রল এয়ারক্রাফট ও হেলিকপ্টার ক্রয় প্রক্রিয়াধীন। অবকাঠামোগত উন্নয়নের লক্ষ্যে পটুয়াখালীতে অ্যাভিয়েশন সুবিধাসংবলিত নৌবাহিনীর সর্ববৃহৎ নৌঘাঁটি ও ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নৌঘাঁটি নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। এ ছাড়া সাবমেরিনের সুষ্ঠু পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও জেটি-সুবিধা প্রদানের জন্য কুতুবদিয়ায় একটি সাবমেরিন ঘাঁটি নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে, সন্দ্বীপ চ্যানেলে জাহাজ বার্থিং সুবিধাসংবলিত ফ্লিট সদর দফতরের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর ফলে সমুদ্র এলাকায় সার্বিক নিরাপত্তা আরও জোরদার হবে।

সর্বশেষ খবর