সোমবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগ নেতার বাগানে ত্রাণের টিন সোলার বিদ্যুৎ

নাটোর প্রতিনিধি

নাটোরের বাগাতীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেনের পেয়ারা বাগানে ব্যবহূত হচ্ছে সরকারি ত্রাণের টিন ও সোলার বিদ্যুৎ। এমন ছবি-সংবলিত একটি পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় জেলাজুড়ে  তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ খবরে নড়েচড়ে বসেছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। সরকারি দলের উপজেলা সভাপতির বিরুদ্ধে আনা এমন অভিযোগ এখন জেলার প্রধান খবর। সাধারণ মানুষ আর দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। তবে এসব অভিযোগ টিকবে না বলে উড়িয়ে দিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন আবুল হোসেন।

১৫ ডিসেম্বর ফেসবুকে নজরুল খান নামের একটি আইডি থেকে দেওয়া পোস্টে লেখা হয়, ‘গরিব সাধারণ মানুষের নামে বরাদ্দকৃত সরকারি ১০ বান্ডিল টিন মেরে খেয়েছেন বাগাতীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের দুর্নীতিবাজ সভাপতি আবুল হোসেন। জনগণ ও বাগাতীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিসের নামে বরাদ্দকৃত সরকারি সোলার প্যানেল নিজের পেয়ারা বাগানে লাগিয়ে আলোকিত করেছেন তিনি। এই অন্যায়ের বিচার চাই।’ পোস্টে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘মৃত ১০ জন ব্যক্তির নাম স্বাক্ষর করে সরকারি ত্রাণের টিন নিজের পেয়ারা বাগানে লাগিয়ে জনগণের হক মেরে খাওয়ার অপরাধের তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।’ এমন পোস্ট প্রকাশিত হওয়ার পর সমালোচনার ঝড় শুরু হয় জেলাজুড়ে। উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতাদের কেউ কেউ এতে বিব্রত হয়েছেন। কেউ কেউ আবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। একটি সূত্র জানায়, বিষয়টি ফেসবুকে প্রকাশ পাওয়ার পর তড়িঘড়ি করে আবুল হোসেন ত্রাণের টিন ও সোলার প্যানেল খুলে বাসায় নিয়ে গেছেন। জানা যায়, বাগাতীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিসের নামে বরাদ্দকৃত সরকারি সোলার প্যানেল নিজের পেয়ারা বাগানে লাগিয়ে জমজমাট আলোয় আলোকিত করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেন। এ ছাড়া দরিদ্র সাধারণ মানুষের নামে বরাদ্দ সরকারি ১০ বান্ডিল ত্রাণের টিন মেরে খেয়েছেন তিনি, যেখানে মৃত ১০ জন ব্যক্তির নামে স্বাক্ষর করে এ টিন আত্মসাৎ করা হয়েছে। সরকারি ত্রাণের টিন ও সোলার নিজের পেয়ারা বাগানে লাগিয়ে জনগণের হক মেরে খাওয়ার অপরাধের তদন্ত ও এর বিচার দাবি করা হয়েছে ফেসবুকে। সংশ্লিষ্ট অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও পরিবেশ বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রতিটি উপজেলায় টিন ও নগদ সহায়তা বাবদ অর্থ আসে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দকৃত এ সহায়তার পরিমাণ এক বান্ডিল টিন ও নগদ তিন হাজার টাকা। এসব সহায়তার একটা বড় অংশ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা সরকারদলীয় নেতাদের সুপারিশের মাধ্যমে প্রদান করা হয়। অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হোসেন ভুয়া নাম সুপারিশ করে টিন ও নগদ টাকা তুলে নিয়েছেন। এ কাজে সহায়তা করেছে স্থানীয় ঠেঙ্গামারা ও আভা এনজিও। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আভার নির্বাহী পরিচালক মোখলেছুর রহমান জানান, তারা শুধু উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তার দেওয়া অনুমোদিত তালিকা ও সরকারি বিধি এবং নির্ধারিত মূল্যে সোলার বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকেন। অনিয়ম বা দুর্নীতির সঙ্গে তারা কোনোভাবেই জড়িত নন। বাগাতীপাড়া উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক জানান, ঘটনাটি তিনিও শুনেছেন। তবে ত্রাণের টিন বা সোলার বিদ্যুৎ যাদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল, তারাই সেগুলো অফিস থেকে নিয়ে গেছেন। কিন্তু সেগুলো কীভাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হোসেনের পেয়ারা বাগানে গেল বা সেখানে আদৌ আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে। বাগাতীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক সুকুমার ওরফে তিন কড়ি মুখার্জি বলেন, এ ঘটনায় এলাকায় দলের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। দলের একজন শীর্ষ পদের নেতা এমন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হওয়ায় এবং ফেসবুকে তা ছড়িয়ে পড়ায় আমরা পথে-ঘাটে চলাচল করতে পারছি না। সাধারণ মানুষ বিষয়টি নিয়ে হাসাহাসি করছে। ঘটনাটি নিয়ে দলের নেতা-কর্মীরা বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন। দলের উচ্চপর্যায়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে আবুল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এমন অভিযোগকে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, এটি তার বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র। তিনি আগামী সংসদ নির্বাচনে নাটোর-১ (বাগাতীপাড়া-লালপুর) আসনে আওয়ামী লীগের হয়ে প্রার্থিতার ঘোষণা দেওয়ায় বর্তমান এমপি আবুল কালাম আজাদ ও তার সমর্থকরা এসব অপপ্রচার চালাচ্ছেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। এমন অভিযোগ প্রমাণিত হলে দলীয় ফোরামে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর