বৃহস্পতিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঢাকার অলি-গলিতে ছিনতাইকারী গ্রেফতারে ব্যাপক অভিযান

আলী আজম

ঢাকার প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলি-গলি সবখানে বেপরোয়া ছিনতাই বেড়েছে। এদের হাতে যখন-তখন হতাহত হচ্ছেন নিরীহ মানুষ। অনেকে গুরুতর আহত হয়ে বয়ে বেড়াচ্ছেন করুণ পরিণতি। সম্প্রতি ঢাকা শহরে ছিনতাই বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে পুলিশও। এ অবস্থায় গত মঙ্গলবার দিনব্যাপী শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তারা ৫৬ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতারও করেছে। জানা গেছে, ছিনতাইকারীর হাতে প্রাণ হারানো বা নির্মম ঘটনার শিকার হওয়া মানুষের সংখ্যা মোটেও কম নয়। অহরহ ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এমন কি ছিনতাইয়ের কবল থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও রক্ষা পাচ্ছেন না। প্রতিদিন গড়ে ২৫টির বেশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। এরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ঢাকার সবখানে। পুলিশ বলছে, ছিনতাইয়ের ঘটনাকে আমরা ওভারলুক করতে পারি না। এটা এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে সতর্ক আছি।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, গত ১৮ ডিসেম্বর যাত্রাবাড়ীর দয়াগঞ্জে ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে প্রাণ হারায় ৬ মাস বয়সী শিশু আরাফাত। ২৯ নভেম্বর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে মারা যান জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক ফরহাদ আলম। ৮ অক্টোবর ওয়ারীর টিকাটুলীতে ছিনতাইকারীর হাতে প্রাণ হারান ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির ছাত্র খন্দকার আবু তালহা। ২০১৪ সালের ২৪ আগস্ট কমলাপুরে ছিনতাইয়ের শিকার হন ডাক্তার সানজানা জেরিন। তিনি এখনো অচেতন অবস্থায় আছেন।

অভিযোগ অনুযায়ী, ছিনতাইয়ের অনেক ঘটনাই থানা-পুলিশের কাছে যায় না। চুরি ও ছিনতাইয়ের শিকার বেশিরভাগ মানুষই হয়রানি ও ঝামেলার আশঙ্কায় মামলা করেন না। এতে করে চুরি ও ছিনতাইয়ের মামলা হয় কম। মামলা হলেও চুরি ও ছিনতাইকৃত টাকা উদ্ধার করতে পারে না পুলিশ। আবার কেউ কেউ মামলা করতে গেলেও থানা তা নেয় জিডি হিসেবে। এতে করে প্রকৃত ঘটনা আড়ালেই থেকে যাচ্ছে।

ডিএমপি সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে. ঢাকা শহরে জানুয়ারিতে ৯১টি, ফেব্রুয়ারিতে ৯৯টি, মার্চে ১১৪টি, এপ্রিলে ৯৪টি, মে তে ৮৮টি, জুনে ৯৬টি, জুলাইয়ে ১০৪টি, আগস্টে ৯৮টি, সেপ্টেম্বরে ৯৫টি ও অক্টোবরে ১২১টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ বলছে, মাদক ও ছিনতাইয়ের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ অবস্থান গ্রহণ করেছে ডিএমপি। যে কোনো মূল্যে ছিনতাই প্রতিরোধ করা হবে। ছিনতাইয়ের ঘটনা যেন না বাড়ে সেজন্য ডিএমপির ৪৯ থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার অলি-গলি, প্রধান সড়কসহ বিভিন্ন স্পটে দিনে বা সন্ধ্যায় মোটরসাইকেলে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। রাতে বা ভোরে ছিনতাইকারীরা বের হয় প্রাইভেটকার নিয়ে। মোটরসাইকেল বা প্রাইভেটকারে মহিলাদের ভ্যানিটি ব্যাগ, রিকশাযাত্রীদের মোবাইল ফোন সেট, মানিব্যাগ ছিনতাই করছে। এমনকি যাত্রী বা পথচারীদের পথরোধ করে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জিম্মি করছে। কেড়ে নিচ্ছে নগদ অর্থ, মোবাইল ফোনসহ গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম। ভয় দেখিয়ে এটিএম কার্ড দিয়ে টাকা তুলছে। গুলি করে বা কুপিয়ে আহত করে, এমনকি হত্যা করেও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। এ অবস্থায় ছিনতাইকারীদের কাছে ভুক্তভোগীরা অসহায় হয়ে পড়েছেন।

ডিএমপির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ছিনতাই ঠেকাতে পুলিশকে আরও তৎপর হতে হবে। যেসব এলাকা অপরাধপ্রবণ বলে মনে হয়, সেই এলাকাগুলোকে চিহ্নিত করে দিনে এবং রাতে টহলের ব্যবস্থা করতে হবে। ছিনতাইকারীরা কোথাও কোনো নতুন টিম তৈরি করছে কি না এবং যারা গ্রেফতার হচ্ছে তারা জামিনে বেরিয়ে আবার ছিনতাই কাজে জড়িয়ে পড়ছে কিনা- সেদিকে নজর রাখতে হবে।

গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম-কমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, ঢাকা শহরে ছিনতাই বেড়েছে। সম্প্রতি কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় আমরা কমিশনারের নির্দেশনায় ড্রাইভের সিদ্ধান্ত নেই। মঙ্গলবার রাতে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৫৬ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের অনেকের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, আবার নতুন করেও মামলা দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ৫৬ ছিনতাইকারীকে গ্রেফতারের ফলে নগরবাসীর মনে স্বস্তি ফিরবে। ডিবির পাশাপাশি ক্রাইম ডিভিশন ৩৫ জনের মতো ছিনতাইকারী গ্রেফতার করেছে। এতে করে ছিনতাইয়ের প্রকোপ কমবে। ছিনতাইকারীদের একটা বড় অংশ টানাপার্টি। যারা চলন্ত যানবাহন থেকে হেঁচড়া টানে ব্যাগ, মোবাইল নিয়ে যায়। এসব টানাপার্টির অধিকাংশ মাদকাসক্ত। মাদকাসক্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ছিনতাই বেড়েছে কিনা— এমন প্রশ্নে যুগ্ম-কমিশনার বলেন, ছিনতাই বেড়েছে এটা সত্য। কিন্তু মাদকাসক্ত বাড়ার কারণে ছিনতাই বেড়েছে কিনা— তা রিসার্চ ছাড়া বলা যাবে না। এসব ছিনতাইকারী অর্গানাইজড নয়। ২/৩ জন একসঙ্গে ছিনতাই করে। আবার কখনো কখনো একা একাই ছিনতাই করে। তবে কিছু আছে যারা দেশীয় অস্ত্রসহ অনেকটা জোর করে ছিনতাই করে, যা ডাকাতির মতো।

সর্বশেষ খবর