বৃহস্পতিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভয়ঙ্কর জারের পানি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভয়ঙ্কর জারের পানি

রাজধানীর বাসাবাড়ি, অফিস-আদালতে সরবরাহ করা ৯৭ ভাগ জারের পানিতে ক্ষতিকর মাত্রায় মানুষ ও প্রাণীর মলের জীবাণু ‘কলিফর্ম’ পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) একদল গবেষক। শাক-সবজিতে কীটনাশক দূষণ, বোতলজাত ও জার পানিতে বিদ্যমান খনিজ উপাদানের মাত্রা ও গুণাগুণ নির্ণয়ে গবেষণা করতে গিয়ে এমন ‘ভীতিকর’ তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন কাউন্সিলের পুষ্টি বিভাগের পরিচালক ড. মনিরুল ইসলাম। জানা গেছে, জার পানির গবেষণায় ২৫০টি নমুনা সংগ্রহ করেন গবেষকরা। বিশেষ করে ঢাকার ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেট, চকবাজার, সদরঘাট, কেরানীগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী, মতিঝিল, বাসাবো, মালিবাগ, রামপুরা, মহাখালী, গুলশান, বনানী, উত্তরা, এয়ারপোর্ট, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, গাবতলী, আমিনবাজার, আশুলিয়া ও সাভার এলাকা থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, সংগ্রহ করা নমুনাগুলোতে টোটাল কলিফর্মের ক্ষেত্রে প্রতি ১০০ মিলিলিটার পানিতে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মাত্রা পাওয়া গেছে যথাক্রমে ১৭ ও ১৬০০ এমপিএন (মোস্ট প্রবাবল নম্বর) এবং ফেকাল কলিফর্মের ক্ষেত্রে প্রতি ১০০ মিলিলিটার পানিতে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মাত্রা ছিল যথাক্রমে ১১ ও ২৪০ এমপিএন। এলিফ্যান্ট রোড, চকবাজার, বাসাবো, গুলশান, বনানী থেকে পানির নমুনায় উল্লেখযোগ্য মাত্রায় টোটাল কলিফর্ম ও ফেকাল কলিফর্মের উপস্থিতি পাওয়া যায়। সদরঘাট এলাকার নমুনা সবচেয়ে দূষণযুক্ত নির্দেশ করে; যেখানে সর্বোচ্চ টোটাল কলিফর্ম ও ফেকাল কলিফর্মের উপস্থিতির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১৬০০ ও ২৪০ এমপিএন।

টোটাল কলিফর্ম ও ফেকাল কলিফর্ম পরিমাণ পানির সম্ভাব্য দূষণের পরিমাণ নির্দেশ করে। টোটাল কলিফর্ম পরিমাপে পানিতে প্রাকৃতিকভাবে বিদ্যমান এবং মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীর অন্ত্রে উপস্থিত অণুজীব ও মলমূত্র দ্বারা দূষণের সম্মিলিত মান পাওয়া যায়। আর ফেকাল কলিফর্ম পরিমাপের মাধ্যমে শুধু মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীর অন্ত্র ও মলমূত্রের দ্বারা দূষণের মাত্রা নির্দেশিত হয়। গবেষক দলের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, পানিতে টোটাল কলিফর্ম ও ফেকাল কলিফর্মের পরিমাণ শূন্য থাকার কথা থাকলেও ৯৭ ভাগ জার পানিতে দুটোর উপস্থিতি রয়েছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। কেবল জারের পানিতে প্রাণঘাতী জীবাণুর উপস্থিতিই নয়, বাজারে থাকা বিভিন্ন কোম্পানির বোতলজাত পানিতেও বিএসটিআই নির্ধারিত মান না পাওয়ার তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রায় শতভাগ বোতলের গায়ে নির্দেশিত উপাদানসমূহের মাত্রায় অসামঞ্জস্যতা রয়েছে। মনিরুল বলেন, স্যুয়ারেজ লাইনে ছিদ্রসহ বিভিন্নভাবে ওয়াসার পানিতে মলমূত্রের জীবাণু মিশে যায়। আর সেগুলো কিছুটা শোধন করে বা শোধন ছাড়াই জারের পানিতে বিক্রি করা হচ্ছে। সে কারণে জীবাণু থেকেই যাচ্ছে। ওয়াসার পানিতে কলিফর্ম থাকে জানিয়ে তিনি বলেন, কেবল ফুটিয়ে খেলে সেই জীবাণু মুক্ত হতে পারে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর