বুধবার, ৩ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

কর্মবিমুখ জাতি চাই না

সমাজসেবা মেলায় প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

কর্মবিমুখ জাতি চাই না

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সমাজসেবা মেলা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন —বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা চাই না কর্মবিমুখ জাতি গড়ে উঠুক। যার যা কর্মদক্ষতা, কর্মশক্তি আছে তাকে যেন তারা কাজে লাগাতে পারে সেদিকেই দৃষ্টি দিচ্ছি। আমরা যে বিধবা-বয়স্ক ভাতা দিই তার একটি লক্ষ্য আছে। সেখানে আর একটি বিষয় আমরা লক্ষ্য রাখি, তা হলো কেউ যেন সম্পূর্ণভাবে ভাতার ওপর নির্ভরশীল না হয়। ভাতাভোগীরা যাতে মাসে ১০ কেজি চাল কিনতে পারেন সে বিষয়টি মাথায় রেখেই তাদের ভাতা দেওয়া হয়। আমরা এর বেশি ভাতা দিতে চাই না। কারণ বেশি ভাতা পেলে আর কেউ কাজ করতে চাইবে না।’ গতকাল সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় সমাজসেবা দিবস-২০১৮’ উদ্যাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘শাসক নয় সেবক হিসেবে কাজ করতে চাই। ক্ষমতায় এসেই ঘোষণা দিয়েছিলাম শাসক নয় সেবক হিসেবে কাজ করব। সেভাবেই কাজ করছি। স্বাধীন জাতিকে গড়ে তুলতে জাতির পিতা যে সংবিধান দিয়েছিলেন সেখানে সবার সেবা নিশ্চিত করে গিয়েছিলেন। তিনি যখন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখনই তাকে হত্যা করা হয়।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশ যেভাবে এগোনোর কথা ছিল জাতির পিতাকে হত্যার পর সেভাবে এগোতে পারেনি। স্বাধীনতার সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সব মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই জাতির পিতার লক্ষ্য ছিল।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে কর্মক্ষম সে কাজ করে খাবে। কিন্তু সে যেন কোনোভাবেই অভুক্ত না থাকে সেদিকে আমরা লক্ষ্য রেখে অন্তত মাসে যেন ১০ কেজি চাল কিনতে পারে তার সমপরিমাণ এবং সঙ্গে কিছু বেশি টাকা দিচ্ছি।’ তিনি বলেন, সরকার ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩৫ লাখ প্রবীণ ব্যক্তিকে জনপ্রতি মাসিক ৫০০ টাকা হারে বয়স্ক ভাতা দিচ্ছে। এ বছর ১২ লাখ ৬৫ হাজার নারীকে জনপ্রতি মাসিক ৫০০ টাকা হারে বিধবা ভাতা দেওয়া হচ্ছে। এ খাতে বছরে ৭৫৯ কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবন্ধী ভাতা জনপ্রতি ৭০০ টাকায় উন্নীত করে এ খাতে সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১ লাখ থেকে ৮ লাখ ২৫ হাজার জনে উন্নীত করা হয়েছে। ৮০ হাজার শিক্ষার্থীকে দেওয়া হচ্ছে প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি। বর্তমানে ৮৬ হাজার ৪০০ এতিম শিশুকে জনপ্রতি মাসিক ১ হাজার টাকা হারে ক্যাপিটেশন গ্রান্ট দেওয়া হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের মানুষের উন্নয়নে ভবঘুরেদের পুনর্বাসন আইন, প্রতিবন্ধী সুরক্ষা আইন, বাবা-মাকে ভরণ-পোষণ আইন, নিউরো ডেভেলপমেন্ট আইন, জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা করা হয়েছে। এ ছাড়া হিজড়া জনগোষ্ঠীকে সমাজে “তৃতীয় লিঙ্গ” হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছি। দারিদ্র্য ও কর্মজীবী মায়েদের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা, সামাজিক নিরাপত্তা অধিকার থেকে বঞ্চিতদের ভাতা দেওয়া হয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশের সুশীলসমাজ হাইপোথেটিক্যাল চিন্তা করে, প্রাকটিক্যাল চিন্তা করে না। তারা অভিযোগ করে বলে যে টাকা ভাতা দেওয়া হয় তাতে কি সংসার চলে? কিন্তু আমি বলতে চাই, সংসার চালানোর দায়িত্ব সরকারের নয়। আমাদের দায়িত্ব কেউ যেন অবহেলিত না থাকে, অভুক্ত না থাকে সে ব্যবস্থা করা। মানুষ যাতে কর্মবিমুখ হয়ে না যায় সেদিকে আমরা দৃষ্টি দিচ্ছি।’ সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা. মো. মোজাম্মেল হোসেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. জিল্লার রহমান বক্তব্য দেন। শেখ হাসিনা বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে সব ভাতাভোগী যাতে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে ঘরে বসে ভাতা পেতে পারেন সে লক্ষ্যে তার সরকার ক্যাশ ইনফরমেশন ট্রান্সফার মডার্নাইজেশন (সিআইটিএম) প্রকল্প গ্রহণ করতে যাচ্ছে। যার মাধ্যমে ঘরে বসেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এর উপকারভোগীরা ভাতা পাবেন। প্রধানমন্ত্রী পরে অনুষ্ঠানস্থল থেকে ভিডিও কনফারেন্সর মাধ্যমে আগারগাঁওয়ে চার দিনব্যাপী জাতীয় সমাজসেবা মেলার উদ্বোধন করেন এবং দেশবাসীকে এ সময় প্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। আলোচনা পর্ব শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর