বুধবার, ৩ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

থানায় হামলার ভয়ঙ্কর ছক

স্কেচম্যাপ ও সুইসাইডাল ভেস্ট জব্দ

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

পুলিশের মনোবল ভাঙতে থানার স্থাপনা ও পুলিশের ওপর আত্মঘাতী হামলার মহাপরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে নব্য জেএমবি। এ ধরনের বড় একটি হামলা পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিয়েছে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। তাদের অভিযানে ধরা পড়েছে নব্য জেএমবির আত্মঘাতী দলের সদস্য আশফাকুর রহমান ওরফে আবু মাহির আল বাঙ্গালী ওরফে রাসেল ওরফে সেলেবি তিতুশ (২২) ও রাকিবুল হাসান ওরফে জনি ওরফে সালাহ উদ্দিন আয়ুবী ওরফে আবু তাইছির আল বাঙ্গালী ওরফে হাসান (১৯)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১০টি তাজা গ্রেনেড, একটি ‘টার্গেট-১’ লেখা স্কেচম্যাপ, একটি ‘টি-১’ লেখা স্কেচম্যাপ, দুটি নেভি ব্লু কালারের সুইসাইডাল ভেস্ট ও দুটি মোবাইল উদ্ধার করা হয়। সোমবার রাতে নগরীর সদরঘাট থানার বালুর মাঠ সংলগ্ন পোর্ট সিটি হাউজিং সোসাইটির মিনু ভবনের ৫ম তলায় এ অভিযান চালানো হয়। চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) হাসান মো. শওকত আলী বলেন, ‘পুলিশের মনোবল ভেঙে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের। তাদের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত স্কেচম্যাপে লেখা ছিল ‘টার্গেট-১’ যেখানে সদরঘাট থানাকে আক্রমণের জন্য চিহ্নিত করা হয়। একটি ‘টি-১’ লেখা স্কেচম্যাপ পাওয়া যায়, যেখানে সদরঘাট থানাকে টার্গেট করে কালো ও লাল কালিতে চিহ্নিত করা হয়েছে।’

গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, নব্য জেএমবির কথিত আমির ‘ডন’র নির্দেশে নগরীর একটি থানার স্থাপনায় হামলার টার্গেট করে চট্টগ্রাম আসে জঙ্গিরা। মিসবাহ উদ্দিন নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে বাসা ভাড়া নেয়। আত্মঘাতী হামলার জন্য বিভিন্ন স্থাপনা নিরীক্ষার জন্য সদরঘাট থানাকে লক্ষ্যবস্তু করে গোপনে পরিদর্শন করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী হামলার জন্য স্কেচম্যাপ তৈরি করে কথিত আমির ‘ডন’র কাছে পাঠানো হয় চূড়ান্ত অনুমতির জন্য। কিন্তু পুলিশি তত্পরতায় নস্যাৎ হয় সেই পরিকল্পনা। মিনু ভবনের মালিক ইব্রাহিম মান্নান বলেন, ‘মিসবাহ উদ্দিন নিজেকে টায়ার ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে বাসা ভাড়া নেয়। মাঝে মাঝে সে ফোনে কথা বলত। বলেছিল মিসবাহ মালিক এবং আশফাক ম্যানেজার। তবে তাদের বাসা প্রায় খালি থাকত।’

কেন এই টার্গেট : বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠনগুলোর উত্থানের পর থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আদালতকে হামলার লক্ষ্যবস্তু করে আসছে। এর আগেও নব্য জেএমবি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামের পুলিশ প্রশাসনের ওপর হামলার পরিকল্পনা নিয়েছে। যাতায়াতের সুবিধাসহ নানা কারণে চট্টগ্রাম মহানগরীর সদরঘাট থানাকে চিহ্নিত করে তারা। পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুরু থেকে নারী নেতৃত্বের ঘোরবিরোধী নব্য জেএমবি। সদরঘাট থানার ওসি মর্জিনা আকতার নারী হওয়ায় প্রাথমিকভাবে পুলিশ ধারণা করছে, ‘এক ঢিলে দুই পাখি’ মারতেই সদরঘাট থানাকে টার্গেট করেছে জঙ্গিরা। এ ছাড়া এ থানাকে টার্গেট করার জন্য আরও কিছু কারণ চিহ্নিত করেছে পুলিশ। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মূল সড়কের পাশেই থানার অবস্থান হওয়ায় যাতায়াত সুবিধা ও সদরঘাট থানায় ভবন না থাকায় অন্য থানাগুলোর চেয়ে কম নিরাপদ। এ ছাড়া থানার ভিতরে স্থাপিত ট্রাফিক পুলিশের কার্যালয়ে অবাধ যাতায়াত সুবিধা রয়েছে। ট্রাফিক পুলিশের তত্ত্বাবধানে থানার পাশেই ক্যান্টিন, মোবাইল রিচার্জ-বিকাশ’র দোকান খোলা হয়েছে। সেখানেও যে কেউ যাওয়া-আসা করতে পারে সহজেই। তাই হামলার জন্য সদরঘাট থানাকে টার্গেট করেছে জঙ্গিরা। এ প্রসঙ্গে সদরঘাট ওসি মর্জিনা আকতার বলেন, ‘এ থানায় অন্যান্য থানার চেয়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা দুর্বল। যে কেউ নানা অজুহাতে থানায় সহজে প্রবেশ করতে পারে। এসব কারণে হয়তো জঙ্গিরা এ থানাকে টার্গেট করেছে।’

কিশোর খুঁজতে গিয়ে মেলে আস্তানা : তিন মাস আগে নিখোঁজ হয়েছিল নগরীর চকবাজার এলাকার আবদুল্লাহ নামে এক কিশোর। এই আবদুল্লাহকে খুঁজে বের করতে গিয়ে সন্ধান মেলে নগরীর পূর্ব মাদারবাড়ী এলাকায় নব্য জেএমবির আস্তানার। এ বিষয়ে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার এ এ এম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘কিশোর আবদুল্লাহ নিখোঁজের ঘটনায় চকবাজার থানায় একটি জিডি হয়।  সেটা তদন্ত করতে গিয়ে দেখা যায় সে সদরঘাট থানা এলাকায় অবস্থান করছে। গভীরভাবে অনুসন্ধান করতে গিয়ে জঙ্গি আস্তানাটির সন্ধান মেলে। আবদুল্লাহও বর্তমানে নব্য জেএমবির সঙ্গেই আছে। তাকে এখনো পাওয়া যায়নি।’

দুই জঙ্গি সাত দিনের রিমান্ডে : নগরীতে গ্রেফতার হওয়া জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির দুই সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। গতকাল চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আবু ছালেম মোহাম্মদ নোমান এ আদেশ দেন। কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার এ এ এম হুমায়ুন কবির বলেন, সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের হওয়া এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিটিটিসির পরিদর্শক আফতাব আহমেদ ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর