বুধবার, ৩ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
ক্যাবের প্রতিবেদন

জীবনযাত্রায় ৮.৪৪ শতাংশ ব্যয় বেড়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

২০১৭ সালে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ। চালের গড় মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ২০ দশমিক ৪০ শতাংশ আর আমদানি করা পিয়াজের দাম বেড়েছে ৫৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গতকাল এ তথ্য তুলে ধরেন ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘জীবনযাত্রার ব্যয় ও প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বিষয়ে প্রতিবেদন ২০১৭’ শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ক্যাব সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া, জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম ও ক্যাবের ভোক্তা অধিকার নিষ্পত্তি জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন উপস্থিত ছিলেন। গোলাম রহমান জানান, গত বছরে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি পণ্য ও সেবা সার্ভিসের মূল্য বেড়েছে ৭ দশমিক ১৭ শতাংশ। ২০১৬ সালে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছিল ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ। আর সেবা সার্ভিসের ব্যয় বেড়েছিল ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ। গত বছরে বিশেষ করে চালের মূল্য বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজধানীর ১৫টি খুচরা বাজার ও বিভিন্ন সেবা সার্ভিসের মধ্য থেকে ১১৪টি খাদ্যপণ্য, ২২টি নিত্যব্যবহার্য সামগ্রী এবং ১৪টি সেবা সার্ভিসের তথ্য এ পর্যালোচনায় বিবেচনা করা হয়েছে। ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে সব ধরনের চালের গড় মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ২০ দশমিক ৪০ শতাংশ। খুচরা বাজারে সব ধরনের চালের দাম বছর জুড়েই দফায় দফায় বৃদ্ধি পেয়েছে। তুলনামূলকভাবে মোটা চালের দাম সরু চালের চেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত এক বছরে সবচেয়ে দাম বেড়েছে পিয়াজের। দেশি পিয়াজে দাম বেড়েছে ৪০ দশমিক ৯৯ আর আমদানিকৃত পিয়াজে ৫৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ। শাক-সবজিতে গড়ে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ২৪ দশমিক ২৮ শতাংশ। তরল দুধে বেড়েছে ২০ দশমিক ৩৬ শতাংশ, গরুর মাংসে ১৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। চিনি ও গুড়ে গড়ে বেড়েছে ১২ দশমিক ৮, লবণে ১১ দশমিক ০৩, ভোজ্য তেলে ১০ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এ ছাড়া আবাসিক খাতে বিদ্যুতের মূল্য বেড়েছে ৬ দশমিক ৪৪, বাণিজ্যিক খাতে ৫ দশমিক ৮৮ এবং ওয়াসা সরবরাহকৃত পানির মূল্য প্রতি হাজার লিটারে বেড়েছে ৫ শতাংশ। বাসা ভাড়া বেড়েছে ৮ দশমিক ১৪ শতাংশ।

তিনি বলেন, দেশের সিংহভাগ জনসংখ্যা হতদরিদ্র, নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত আয়ের শ্রেণিভুক্ত। পণ্যমূল্য বৃদ্ধি তাদের জীবনমানে বিরূপ প্রভাব ফেলে। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য বাড়ে। হতাশা আর অসন্তোষ বৃদ্ধি পায়। উন্নয়নের সুফল সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় সহনীয় পর্যায়ে রাখার বিকল্প নেই। ২০১৭ সালে চালসহ বেশকিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বেশির ভাগ সাধারণ মানুষ দেশের সার্বিক উন্নয়নের সুফল থেকে বঞ্চিত হয়েছে। খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির ফলে অনেকে কষ্টে আছেন। ২০১৭ সালে গণপরিবহনে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি হয়নি। ‘উবার’ ও ‘পাঠাও’-এর কারণে সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকদের দৌরাত্ম্য কিছুটা হলেও কমেছে। তবে ব্যবহারকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এসব একটি আইনি কাঠামোয় আনা জরুরি। সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকরা ইচ্ছামাফিক ভাড়া আদায় করেছেন যাত্রীদের কাছে। এ সময় জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোসহ নানা বিষয়ে দশ দফা সুপারিশ করে ক্যাব। এর মধ্যে রয়েছে— ১২ থেকে ১৫টি খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য চিহ্নিত করে সেসবের সরবরাহ পরিস্থিতি সন্তোষজনক পর্যায়ে এবং মূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য ‘সরবরাহ ও মূল্য’ নামে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি পৃথক বিভাগ অথবা একটি স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় সৃষ্টি; বিশ্ববাজারে তেলের দামের সঙ্গে দেশে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়; বিইআরসি কর্তৃক বিদ্যুতের দাম পুনর্নির্ধারণ করে হ্রাস করা। বাড়ি ভাড়া আইন, ১৯৯১ অনতিবিলম্বে পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জন করে ভাড়াটেদের স্বার্থ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী বাড়ি ভাড়া কমিশন গঠন করারও সুপারিশ করে ক্যাব। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০১৭ সালেও বরাবরের মতো স্বাস্থ্য খাতে সেবার মান ছিল অতীতের মতোই প্রশ্নবিদ্ধ ও ব্যয়বহুল। সরকারি হাসপাতালে রোগীর বাড়তি চাপ ও অব্যবস্থাপনা অব্যাহত আছে। সরকারি হাসপাতালে, বিশেষ করে মফস্বল এলাকার হাসপাতালসমূহে চিকিত্সকদের অনুপস্থিতি, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও দক্ষ লোকবলের অভাব, প্রাইভেট হাসপাতালে দালালের প্রকোপ ইত্যাদি কারণে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা থেকে ভোক্তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। ২০১৭ সালে শিক্ষা খাতে প্রশ্নপত্র ফাঁস ছিল ব্যাপক আলোচিত ও নিন্দিত। কোচিং বাণিজ্য এবং নোট ও গাইড বইয়ের ব্যাপক ব্যবহার দেশবাসীকে পূর্ববর্তী বছরগুলোর মতোই গভীর উদ্বেগ-উত্কণ্ঠায় রেখেছে। শিক্ষার মানের উন্নয়ন জাতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।

সর্বশেষ খবর