বুধবার, ৩ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিএনপিকে কেউ নির্বাচন থেকে বিরত রাখতে পারবে না : খালেদা জিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনের দল। বিএনপি নির্বাচনে যাবেই। চাইলেও আর বিএনপিকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখা যাবে না। তবে সে নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। আর সে ব্যবস্থা করবে এ দেশের জনগণ। বেগম জিয়া বলেন, অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে দেশের মানুষের সর্বশেষ বিচার পাওয়ার আশ্রয়স্থল হলো বিচার বিভাগ। সেই বিচার বিভাগের স্বাধীনতাও আজ এ সরকার হরণ করেছে। দেশের প্রধান বিচারপতিকে অস্ত্রের মুখে পদত্যাগে বাধ্য করেছে তারা। প্রথমে অস্ত্রের মুখে তাকে তার অফিস থেকে বাসায় নিয়ে বন্দী করে রাখা হয়। পরে তাকে জোর করে বিদেশে যেতে বাধ্য করা হয়। এমনকি বিদেশে পর্যন্ত লোক পাঠিয়ে অস্ত্রের মুখে তাকে পদত্যাগপত্র দিতে বাধ্য করা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘এই সরকার গোটা দেশটাকে আজ কারাগার বানিয়ে ফেলেছে। সে কারাগারে আমরা সবাই বন্দী। আর মুক্ত শুধু শেখ হাসিনা আর তার আওয়ামী লীগ। কিন্তু এ অন্যায়-অত্যাচারের বিচার আল্লাহতায়ালা একদিন নিশ্চয়ই করবেন।’ গতকাল সন্ধ্যার পর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে বিকাল ৪টা ২৫ মিনিটে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চত্বরে পৌঁছান বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সমাবেশে ছাত্রদল সভাপতি রাজীব আহসানের সভাপতিত্বে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, দলের যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, ফজলুল হক মিলন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, শিরিন সুলতানা, সাবেক ছাত্রদল নেতা কামরুজ্জামান রতন প্রমুখ বক্তব্য দেন। এর আগে অনুষ্ঠানের বরাদ্দপত্রসহ পুলিশের অনুমতি পাওয়ার পরও মিলনায়তন ভবনের ফটকে তালা দিয়ে রাখায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চত্বরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেয় ছাত্রদল। বিকালে সেখানে স্থাপন করা অস্থায়ী মঞ্চে বক্তব্যও দেন বিএনপির বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। পরে বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থান গ্রহণ ও ছাত্রদলের তীব্র বিক্ষোভের মুখে অবশেষে সংগঠনটির ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভার জন্য ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের হলরুম খুলে দেয় কর্তৃপক্ষ। বিকাল ৫টা ২০ মিনিটে ছাত্রদলের সমাবেশের জন্য ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন খুলে দেওয়া হয়। এ সময় প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সম্মানে তা খুলে দেওয়া হয়েছে। এর আগে প্রথমে জানানো হয়েছিল, ওপরের নির্দেশে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। পরে আবার জানানো হয়, রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ আসবেন সুপ্রিম কোর্টে। সেজন্য গোলযোগের আশঙ্কায় তালা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া অনুষ্ঠানস্থলে এসে তালাবদ্ধ ভবনের সামনে গাড়িতে বসে অবস্থান নেন। এ সময় দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঘোষণা দেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া এখানে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি যতক্ষণ অবস্থান করবেন, আমরা কেউ এখান থেকে যাব না এবং প্রয়োজনে জীবন বিলিয়ে দেব।’ মহাসচিবের এ ঘোষণার দুই থেকে তিন মিনিটের মধ্যেই দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী মাইকে ঘোষণা দেন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন কর্তৃপক্ষ মিলনায়তনের তালা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অতঃপর পুলিশ তালা খুলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিএনপি, ছাত্রদল ও অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা সেখানে প্রবেশ করে আলোচনা সভায় অংশ নেন।

সেখানে টানা ৩৭ মিনিট বক্তৃতা করেন বেগম খালেদা জিয়া।

প্রায় এক মাস আগে অনুমতি নেওয়া হলেও গতকাল সকালে হঠাৎ নিরাপত্তার কথা উল্লেখ করে অনুষ্ঠান করা যাবে না বলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন কর্তৃপক্ষ ছাত্রদল নেতাদের জানায়। বেলা ১১টার পর থেকেই ছাত্রদলের বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মীরা মিছিলসহ অনুষ্ঠানস্থলে আসতে থাকেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। দুপুরের পরপরই পুরো এলাকা লোকারণ্য হয়ে যায়।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র নেই, বৈধ সরকার নেই, আইনের শাসন, কথা বলার অধিকার নেই। এর প্রমাণ একটু আগে দেখলাম। অনেক দিন ধরে ছাত্ররা আলোচনা সভার প্রস্তুতি নিয়েছে। কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিয়েছে, ভাড়াও নিয়েছে। অথচ হঠাৎ করে হলরুমে তালা লাগিয়ে দিল। এটা কেমন আচরণ! আজকে দেশ এক ব্যক্তির দখলে। এ কারণে দেশ পিছিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ এর জন্য দায়ী। গুম-খুন বেড়েছে, দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। মানুষের অভাবের শেষ নেই।’ বেগম জিয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে দেশের মানুষ বিশ্বাস করে না। আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে, অন্যের কাঁধে ভর করে এসেছে। তারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে মানুষকে নির্যাতন করছে। বিএনপি মানুষের ভোটে ক্ষমতায় আসে। অন্যের কাঁধে ভর করে নয়।’ তিনি বলেন, ‘মানুষের আজ দুঃখের সীমা নেই। এর জন্য আওয়ামী লীগ দায়ী। সেজন্য তাদের চলে যেতে হবে। নতুন যে কোনো সরকার আসতে হবে। পরিবর্তন আসতে হবে। সেজন্য একটি নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন লাগবে। শেখ হাসিনার অধীনে দেশে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। হবেও না। এ সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলেই তাদের অধীনে ভোট হতে পারবে না। নির্বাচনের আগে পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে হবে। এই পার্লামেন্ট রেখে কোনো নির্বাচন হবে না।’

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘পদ্মা সেতুর স্বপ্ন দেখাচ্ছে সরকার। কিন্তু পদ্মা সেতু আওয়ামী লীগের আমলে হবে না। এ সেতু জোড়াতালি দিয়ে বানানো হচ্ছে। এ সেতুতে কেউ উঠবে না।’

তিনি বলেন, ‘দেশে এখন উন্নয়নের জোয়ার নয়, দুর্নীতি আর লুটপাটের জোয়ার বইছে। পাকিস্তানিরাও মানুষের ওপর এ রকম নির্যাতন চালায়নি। সরকারের গুম, খুন, অত্যাচার, নির্যাতন, মামলা-হামলায় মানুষ এখন চরমভাবে অতিষ্ঠ। ঘর থেকে পর্যন্ত এখন মানুষকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে।’ এ সময় তিনি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করার জন্য ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘ভারত আমাদের স্বাধীনতার সময় সাহায্য করেছে। ভারতকে আমরা বন্ধুর মতো দেখতে চাই। বন্ধু হয়ে থাকতে চাই সব সময়।’

পুলিশ বাহিনীর উদ্দেশে বিএনপি-প্রধান বলেন, ‘দেশের পুলিশ খারাপ নয়, আওয়ামী লীগ পুলিশকে খারাপ বানাচ্ছে। পুলিশ নিজেদের কাজ করুক। তবে আমার অনুরোধ, আমার ছেলেদের ধরবেন না। তাদের ওপর গুলি চালাবেন না। নিজের দেশের ভাইদের ওপর গুলি চালানো বন্ধ করুন। যারা জেলে আছে তাদের ছেড়ে দিন।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘পুরো দেশ আজ কারাগার হয়ে গেছে। সে কারাগারে আমরা সবাই বন্দী। শুধু আওয়ামী লীগ আর শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে মুক্ত।’

বেগম খালেদা জিয়া ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘ঐক্য, ইমান, শৃঙ্খলা— এই তিনটি ঠিক রাখলে সবকিছু জয় করা সম্ভব। শুধু স্লোগান দিলে হবে না। স্লোগানের ধারা পরিবর্তন করতে হবে। আগের স্লোগান দিলে হবে না। সময়ের প্রেক্ষাপট অনুযায়ী তা পরিবর্তন করতে হবে।’

খালেদা জিয়া ছাত্রদলকে এগিয়ে চলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘২০১৮ সাল হবে গণতন্ত্রের বছর। জনগণের কল্যাণ, উন্নয়ন ও শান্তির বছর। তোমরা এগিয়ে চলো।’

আজ আদালতে যাবেন খালেদা জিয়া : জিয়া অরফানেজ ও চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির দুই মামলায় হাজিরা দিতে আজ আদালতে যাবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। পুরান ঢাকার বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার পাঁচ নম্বর অস্থায়ী বিশেষ জজ ড. মো. আখতারুজ্জামানের আদালতে এ দুটি মামলার বিচারকাজ চলছে।

সর্বশেষ খবর