শনিবার, ৬ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
দিনভর ছিল উত্তেজনা

রাজধানীসহ সারা দেশে নির্বাচনী মহড়া দিল আওয়ামী লীগ

৫ জানুয়ারির কর্মসূচি

নিজস্ব প্রতিবেদক

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চার বছর পূর্তির দিনে রাজধানীসহ সারা দেশে সাংগঠনিক শক্তির মহড়া দেখাল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত বিজয় র‍্যালি ও সমাবেশে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, ৫ জানুয়ারি নির্বাচন হয়েছিল বলেই আজ গণতন্ত্র সুসংহত রয়েছে। দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে বিএনপি আবারও ষড়যন্ত্র করছে। ষড়যন্ত্র করে লাভ হবে না। নির্বাচনে অংশগ্রহণ ছাড়া বিএনপির সামনে অন্য কোনো পথ খোলা নেই। নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলে বিরল প্রজাতির প্রাণীর মতো দলটি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। মুসলিম লীগের চেয়েও খারাপ পরিণতি হবে। আর আগামী নির্বাচন বিএনপি বা অন্য কারও জন্য বসে থাকবে না। সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন হবে। আপনাদের (বিএনপি) ঠেকানোর সাধ্য থাকলে দেখান। আর অগ্নিসন্ত্রাস কিংবা নাশকতার চেষ্টা করলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে। ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চতুর্থ বর্ষপূর্তি ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ উদ্‌যাপন উপলক্ষে ঢাকা মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণ আয়োজিত এ দুটি সমাবেশে আওয়ামী লীগ নেতারা এসব কথা বলেন। সমাবেশ শেষে এ দুটি স্থান থেকেই বিশাল বিজয় র‍্যালি বের করা হয়। বিজয় র‍্যালি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। শুধু ঢাকায় নয়, সারা দেশেই আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সমাবেশ ও বিজয় র‍্যালি করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে দুপুরের পর থেকেই গোটা মহানগরীকে মিছিলের নগরীতে পরিণত করে বড় ধরনের সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শন করে আওয়ামী লীগ। বিকাল ৩টায় অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তার আগেই নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে নেতা-কর্মীরা উপস্থিত হন। ৩টার আগেই কানায় কানায় ভরে যায় দুটি সমাবেশস্থল।

রাজধানীর গুলিস্তানে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে দক্ষিণের সভাপতি আবুল হাসনাতের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বক্তৃতা করেন প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও এনামুল হক শামীম, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, মহানগরী সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ, মহানগরীর ডা. দীলিপ রায়, কামাল চৌধুরী, হেদায়েতুল ইসলাম স্বপন, আকতার হোসেনসহ আরও অনেকে। বনানীর পূজামণ্ডপ মাঠে ঢাকা মহানগরী উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম রহমত উল্লাহ এমপির সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন এমপি, লে. কর্নেল মুহাম্মদ ফারুক খান (অব.) এমপি, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হাবিবুর রহমান সিরাজ, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান প্রমুখ। প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আজকে একদিকে জনগণের গণতন্ত্রের বিজয় দিবস, অন্যদিকে বিএনপিসহ সাম্প্রদায়িক শক্তির আত্মহত্যা দিবস। আগামী নির্বাচনে অংশ না নিলে বিএনপিকে আরেকবার আত্মহত্যা দিবস পালন করতে হবে। সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন হবে। আপনাদের (বিএনপি) ঠেকানোর সাধ্য থাকলে ঠেকান। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে আপনাদের প্রতিহত করবে।’ গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘৫ জানুয়ারির নির্বাচন না হলে জিয়াউর রহমান ও এইচ এম এরশাদ যেভাবে স্বৈরাচারী কায়দায় দেশ চালিয়েছিলেন বাংলাদেশ আবার সেই জায়গায় চলে যেত। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। বিএনপি নির্বাচনে না এলে মুসলিম লীগের চেয়েও খারাপ পরিণতি হবে। তাদের জন্য অন্য কোনো পথ খোলা নেই।’

সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম বলেন, ‘৫ জানুয়ারি ভোট হয়েছিল বলেই সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে। দেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। সেদিন ভোট বর্জনের ডাক দিয়ে খালেদা জিয়া পরাজিত হয়েছিলেন। বিএনপি বার বার আন্দোলনের ডাক দিয়ে পরাজিত হয়েছে। যারা আন্দোলনে পরাজিত হয়, তারা নির্বাচনেও পরাজিত হবে। ডিসেম্বরের নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনা হ্যাটট্রিক বিজয়ী হয়ে চারবারের প্রধানমন্ত্রী হবেন। এজন্য আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। স্লোগান দিতে হবে— শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা রাজপথে, বিজয় হবে নির্বাচনে।’ বনানীতে সমাবেশে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল ফারুক খান (অব.) বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে ভরাডুবি হবে বুঝতে পেরে বিএনপি ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।’ আগামীতে কেউ যাতে নির্বাচন বানচাল করতে না পারে সেদিকে নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি। বিএনপি গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালনের নামে সারা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। বিএনপির আগামীকালের বিক্ষোভ কর্মসূচি বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ঢাকাবাসী তথাকথিত বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করতে দেবে না। কর্মসূচি পালনের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করলে ঢাকাবাসী উচিত শিক্ষা দেবে।’

রাজধানীর মতো সারা দেশে বিভাগীয় শহর, জেলা-মহানগর ও উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে গণতন্ত্রের বিজয় দিবস উপলক্ষে র‍্যালি ও সমাবেশ করা হয়।

সর্বশেষ খবর