শনিবার, ৬ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
গো য়ে ন্দা কা হি নী ১২৬

কথায় কথায় গুলি

কথায় কথায় গুলি

কথায় কথায় গুলি। কোনো বাধাই তাকে থামাতে পারে না। টার্গেট ব্যক্তির হাতে ধরিয়ে দিত চিরকুট। যেখানে লেখা থাকত ‘অমুক তারিখে অমুক জায়গায়, অত লাখ টাকা পৌঁছে দিবি।’ যাওয়ার আগে বলে যেত, ‘আজ জীবনটা ভিক্ষে দিলাম, টাকাটা না দিলে আর থানা-পুলিশ করলে, মরার জন্য প্রস্তুত থাকিস। নাম তার মাক্তার হোসেন আমীর। ল্যাংড়া আমীর নামে পরিচিত। কেরানীগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রসী। আলোচিত স্কুলছাত্র পরাগ অপহরণ মামলাসহ ২টি খুন, ২টি অপহরণ, ৩টি অস্ত্র আইন, ২টি পুলিশ অ্যাসল্ট, ১টি পুলিশ হেফাজত হতে পলায়ন এবং চাঁদা দাবি ও গুলি করে আহত করা সংক্রান্ত ৩টি মামলাসহ মোট ১৪টি মামলা রয়েছে। এ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে আরও অনেক মামলা রয়েছে। ল্যাংড়া আমীরের পৈতৃক বাড়ি মুন্সীগঞ্জের মীরকাদিম এলাকায়। কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা পশ্চিমপাড়া এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছিল সে। এক সময় ছোটখাটো অপরাধ করলেও ২০১২ সালের ১১ নভেম্বর কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা পশ্চিমপাড়ার ব্যবসায়ী বিমল মণ্ডলের বাসার সামনে থেকে লিপি মণ্ডল তার বোন পিনাকী মণ্ডল ও গাড়ি চালক নজরুলকে গুলি করে স্কুলছাত্র শিশু পরাগ মণ্ডলকে (৬) অপহরণের পরপরই আলোচনায় আসে ল্যাংড়া আমীর। তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ধরাও পড়ে সে। এরপর ২০১৬ সালের ১১ আগস্ট একটি হত্যা মামলার আসামি হিসেবে আদালতে আনা হলে ঢাকা জেলা জজ আদালতের হাজতখানা থেকে পালিয়ে যায় আমীর। এরপর থেকেই তাকে খুঁজে বেড়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠে সে। একের পর এক গুলি আর চাঁদা দাবির ঘটনায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠে ল্যাংড়া আমীর। সে নিয়মিত মোবাইলসহ ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এলাকার ব্যবসায়ী ও চিকিৎসক দম্পতিসহ অনেকের কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিল। সর্বশেষ গত বছর ৯ জুলাই হাসনাবাদ এলাকার ব্যবসায়ী হাজী মো. শাহ আলমের কাছে কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে না পেয়ে তাকে গুলি করলে ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান। এর আগে গত ২৫ মে চুনকুটিয়া এলাকার ব্যবসায়ী নুরুল ইসলামকে গুলি করে ১ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে ল্যাংড়া আমীর। এরও আগে গত ২২ মার্চ চিকিৎসক দম্পতি ডা. নোমান ও তার সহধর্মিণী শাহানা ক্লিনিকের মালিক ডা. শাহানার কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে ল্যাংড়া আমির। ২০১৬ সালের ১১ আগস্ট জেলা কোর্ট হাজতখানা থেকে কৌশলে পলায়নের পর কিছুদিন আত্মগোপনে থাকে ল্যাংড়া আমীর। এরপর কেরানীগঞ্জ এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছে পুনরায় মূর্তমান আতঙ্ক হিসেবে আবির্ভূত হয় সে। এরপর থেকেই তার বিরুদ্ধে রুজুকৃত মামলাগুলো তদন্তকালে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ আমীর ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার ও অস্ত্র উদ্ধারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে। সে অনুযায়ী গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বাগেরহাটের শরণখোলা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর তার দেওয়া তথ্য মতে ওই দিন রাতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে ১২ জনের একটি পুলিশ টিম মীরেরবাগ এলাকায় অস্ত্র উদ্ধারের জন্য গেলে সন্ত্রাসী আমীরের সহযোগীরা তাকে ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য পুলিশকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। পুলিশও তখন পাল্টা গুলি চালায়। এ সময় আমীর পুলিশ হেফাজত থেকে দৌড়ে সহযোগীদের সঙ্গে পালানোর চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে তার সহযোগীরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও ঘটনাস্থলে আমীরকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। তাকে উদ্ধার করে তাত্ক্ষণিক চিকিৎসার জন্য মিটফোর্ড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। অন্যদিকে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ২ রাউন্ড গুলিভর্তি একটি বিদেশি পিস্তল ও প্রায় ২৪ ইঞ্চি লম্বা ২টি ছোড়া উদ্ধার করে। পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে সন্ত্রাসী আমীর নিহত হওয়ার ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন কেরানীগঞ্জের ব্যবসায়ী মহলসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। হাসনাবাদ, শুভাঢ্যা পশ্চিমপাড়া, চুনকুটিয়া, ঝাউবাড়ি ও কালিগঞ্জ এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করার খবরও পাওয়া গেছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর