শনিবার, ৬ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

তুষারপাতে অচল আমেরিকা

বাংলাদেশিসহ গৃহবন্দী কোটি মানুষ

প্রতিদিন ডেস্ক

তুষারপাতে অচল আমেরিকা

ভয়াবহ তুষারপাত ও ঝড়ের কবলে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকা। ইংরেজি নতুন বছরের প্রথম প্রহরে শুরু হওয়া হাড় কাঁপানো শৈত্যপ্রবাহের চরম অবনতি ঘটে ৪ জানুয়ারি ভোর থেকে। এরপর হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রার সঙ্গে যোগ হয়েছে ৫০ থেকে ৮০ মাইল বেড়ে প্রবাহিত তুষারঝড়। ৩০ বছরের মধ্যে এটিই সবচেয়ে বেশি তুষারপাত। এর শিকার হয়ে এরই মধ্যে ১৬ জন নিহত হয়েছে। গৃহবন্দী অবস্থায় রয়েছেন তিন লাখ বাংলাদেশিসহ প্রায় দেড় কোটি মানুষ। খবর : এনআরবি নিউজের। এই ঝড়ের কবলে পড়েছেন ফ্লোরিডা, জর্জিয়া ও দক্ষিণ ক্যারোলিনার বাসিন্দারা। জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে জর্জিয়ার দক্ষিণের ২৮টি এলাকায়। বাতিল করা হয়েছে পাঁচ হাজার ফ্লাইট। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, ঝড়টি পূর্ব উপকূলের দিকে যাওয়ার সময় ‘বোমা’সদৃশ সাইক্লোনে পরিণত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর ফলে ৩০  সেন্টিমিটার পর্যন্ত তুষারপাত হতে পারে। এদিকে তীব্র শীতের কারণে কিছু রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় নিউ ইংল্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, উপকূলবর্তী অঞ্চলে ৫০ থেকে ৮০ মাইল প্রতি ঘণ্টাবেগে বইছে ঝড়ো বাতাস। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হচ্ছে তুষারপাত। নিউইয়র্ক এবং নিউজার্সিতে অবস্থিত এয়ারপোর্টসমূহে দুই হাজার ফ্লাইটসহ বোস্টন, ফিলাডেলফিয়া, ভার্জিনিয়া প্রভৃতি এলাকার ৪ হাজার ফ্লাইট বাতিল করতে হয় বলে জানিয়েছেন পোর্ট অথরিটির নির্বাহী পরিচালক রিক কটন। যাত্রী সাধারণকে পরবর্তী ফ্লাইটের কনফার্মেশনের অপেক্ষায় থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দিনগত রাত পর্যন্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আমেরিকার দক্ষিণ ক্যারোলিনা, নর্থ ক্যারোলিনা, উইসকনসিন, মিজৌরি, মিশিগান, নর্থ ডেকটা, ভার্জিনিয়া, ম্যারিল্যান্ড, ডিসি, পেনসিলভেনিয়া, দেলওয়ার, নিউজার্সি, কানেকটিকাট, ম্যাসাচুসেটস, রোড আইল্যান্ড, নিউ হ্যামশায়ার, ভারমন্ট, নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের প্রায় দেড় কোটি আমেরিকান গৃহবন্দী অবস্থায় থাকেন। এর মধ্যে তিন লক্ষাধিক বাংলাদেশিও রয়েছেন। প্রাকৃতিক এ দুর্যোগে নিহত হয়েছেন ১৬ আমেরিকান। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিহতদের মধ্যে উইসকনসিন ৬, টেক্সাসে ৪, নর্থ ক্যারোলিনায় ৩, মিজৌরি, মিশিগান এবং নর্থ ডেকটায় একজন করে রয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতে ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বলা হয়, এসব এলাকায় ১২ ইঞ্চি থেকে ২৪ ইঞ্চি পর্যন্ত তুষারপাত ছাড়াও বোস্টন ও লং আইল্যান্ডে উপকূলীয় এলাকায় ১২ থেকে ১৫ ফুট পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। বোস্টনের রাস্তা ডুবে গেছে গলে যাওয়া বরফের পানিতে। ভয়ঙ্কর এই দুর্যোগের কারণে নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, পেনসিলভেনিয়া, ম্যাসাচুসেটস, কানেকটিকাট, প্রভৃতি অঙ্গরাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকায় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। লোকজনকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এদিকে নিউইয়র্ক সিটির জ্যামাইকা, জ্যাকসন হাইটস, চার্চ-ম্যাকডোনাল্ড, ওজনপার্ক, পার্কচেস্টার, হাডসন, নিউজার্সির প্যাটারসন, আটলান্টিক সিটি, পেনাসিলভেনিয়ার ফিলাডেলফিয়া, আপারডারবি, মিল বোর্ন সিটির বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকার সব দোকানপাট ছিল জনমানব শূন্য। নিউইয়র্ক সিটিতে ২৫ হাজারের অধিক বাংলাদেশি ট্যাক্সি ড্রাইভারের ৯০% কাজ করেননি দুর্যোগের কারণে। পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যের মিলবোর্ন সিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নূরুল হাসান, নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের হাডসন সিটির কাউন্সিলম্যান শেরশাহ মিজান এবং লং আইল্যান্ডের লিন্সব্রুক সিটির ব্যবসায়ী আকতার হোসেন বাদল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পৃথক পৃথকভাবে জানান, ৫০ থেকে ৮০ মাইল বেগের তুষার ঝড়ে সবকিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। তাপমাত্রা নেমে হিমাঙ্কের নিচে আসায় লোকজন ঘরের বাইরে আসেনি। সড়ক-মহাসড়কে পুলিশ আর অ্যাম্বুলেন্স ব্যতীত যান চলাচল ছিল একেবারেই কম। নিউইয়র্ক সিটির বাস ও সাবওয়ে চলাচল করলেও যাত্রীর সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিসের বুলেটিনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, আসছে রবিবার পর্যন্ত উপরোক্ত এলাকার তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচেই থাকবে, অর্থাৎ শীতের তীব্রতায় জীবন-যাপন করতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর