শনিবার, ৬ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিনোদন কেনাকাটায় জমেছে বাণিজ্য মেলা

বাবা রাফিতে উপচে পড়া ভিড়

রুহুল আমিন রাসেল


বিনোদন কেনাকাটায় জমেছে বাণিজ্য মেলা

ছোট্ট সোনামণি রিকা। গভীর মনোযোগে দেখছে বাঘ, বক, হরিণ, মোরগসহ আরও কিছু ভিন্ন প্রজাতির পশুপাখি। এত দিন এগুলো বইতে দেখিয়ে রিকাকে পড়া শিখিয়েছেন মা আনিতা রহমান। শ্যামলীর এই বাসিন্দা এবার মেয়েকে নিয়ে সোজা সুন্দরবনে হাজির। দুজনে সুন্দরবন দেখা শেষে সারলেন খানাপিনা। এরপর তারা পছন্দের পণ্য কিনেছেন বিভিন্ন স্টল ও প্যাভিলিয়নে। শীত ছাড়িয়ে ছোটদের বিনোদন আর বড়দের কেনাকাটায় এভাবেই জমেছে ২৩তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিআইটিএফ), ২০১৮। রাজধানীর শেরেবাংলানগরে মাসব্যাপী এ মেলার যৌথ আয়োজক বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। রপ্তানি বাড়ানো ও দেশি-বিদেশি পণ্যের সঙ্গে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিতে প্রতি বছর এ মেলা করে আসছে সরকার। গতকাল ছুটির দিনে দিনভর ক্রেতা-দর্শনার্থীর পদচারণে মেলাপ্রাঙ্গণ ছিল উৎসবমুখর। তারা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে মেলায় প্রবেশ করেন। মেলার আয়োজক ও অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও অপেক্ষায় থাকে এই দিনটির। কারণ, ছুটির দিনে বিকিকিনি অনেক বেশি হয়। আয়োজকদের প্রত্যাশা ছিল ২ লাখের বেশি ক্রেতা-দর্শনার্থী মেলায় আসবেন। তবে বাণিজ্য মেলার প্রবেশ গেটের ইজারাদার প্রতিষ্ঠান মীর ট্রেডার্সের কর্ণধার মীর শহিদুল আলম গতকাল বলেন, ৩৫ হাজারের অধিক ক্রেতা-দর্শনার্থী মেলায় এসেছেন। তবে প্রত্যাশা ছিল মেলার প্রথম শুক্রবার (গতকাল) ১ লাখ ৭৫ হাজার দর্শনার্থী আসবেন। তিনি বলেন, দিন শেষে এ সংখ্যা আরও বাড়বে। এখনো প্রচুর দর্শনার্থী আসছেন। সরেজমিন দেখা যায়, ছুটির দিনে অফিস ও কাজের চাপ না থাকায় অনেকেই পরিবার নিয়ে মেলায় এসেছেন। আবার স্কুল, কোচিংয়ের বিড়ম্বনা না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী দল বেঁধে এসেছেন। সব বয়সী মানুষের উপস্থিতিতে মুখর হয়ে ওঠে বাণিজ্য মেলা। সব মিলিয়ে গতকাল ছুটির দিনে সকাল ১০টায় গেট খোলার সঙ্গে সঙ্গেই মেলায় প্রবেশ করতে থাকেন দর্শনার্থীরা। ২ ঘণ্টার মধ্যেই ক্রেতা-দর্শনার্থীর সরব উপস্থিতিতে জমে ওঠে মেলা। প্রথম ঘণ্টায় ক্রেতা-দর্শনার্থী কম থাকলেও, পরে ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে আয়োজকদের। মেলায় গৃহস্থালি পণ্য কিনতে আসা যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘বাণিজ্য মেলার শুরুর দিন থেকে বাচ্চারা এবং ওদের মা ঘুরতে আসার আবদার করছেন। তাদের আবদার পূরণ করতে মেলায় এসেছি। তবে কেনাকাটার চেয়ে ঘুরে দেখাই মূল উদ্দেশ্য।’ মেলায় শিশুর খেলনা কিনেছেন উত্তরা থেকে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী আজহার আলী খান। তিনি বলেন, ‘ছুটির দিন থাকায় পরিবারসহ এসেছি। ভালো লাগছে। এই নগরীতে খুব একটা আনন্দের জায়গা নেই। তাই বাণিজ্য মেলায় এসে কিছুটা ভালো লাগছে।’ এদিকে, ক্রেতাদের জন্য নানারকম অফার ঘোষণা দিয়েছে মেলায় আসা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। একটি কিনলে আরেকটি নয়, আছে ১০টি পর্যন্ত ফ্রির অফার। এখানেই শেষ নয়। মেলায় কেনাকাটা করে বিদেশ ভ্রমণের অফার দিচ্ছে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান। আছে বিশ্বকাপ ফুটবল দেখার সুযোগ, আরও আছে রাশিয়া, মালয়েশিয়া, ব্যাংকক ও কলকাতা ভ্রমণের সুযোগ। রয়েছে নগদ ছাড় ও গিফট। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, গতকাল ক্রেতা ও দর্শনার্থীর সমাগম অনেক বেশি থাকায় বিক্রিও ভালো হয়েছে। ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। নতুন পণ্যে ক্রেতাদের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। মেলাপ্রাঙ্গণ ঘুরে গতকাল দেখা যায়, সুন্দরবনের আদলে গড়া ইকো পার্ক, ভিন্ন আঙ্গিকে সাজিয়ে ফিশ ও বার্ড অ্যাকোরিয়াম প্রদর্শন করা হচ্ছে। শিশুদের জন্য রয়েছে পার্ক, গেমিং জোন ও খেলার উপকরণ। মেলায় শিশু পার্কে ছোট্ট সোনামণিদের নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন অভিভাবকরা। বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়নে গিয়ে স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা জানার চেষ্টা করছে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস। তবে তরুণদের সঙ্গে মেলায় আগমন ঘটেছে মধ্যবয়সী ও প্রবীণদেরও। ইপিবি জানিয়েছে, এ মেলা চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত। প্রবেশ টিকিটের মূল্য প্রাপ্তবয়সীদের জন্য ৩০ ও অপ্রাপ্তবয়সীদের জন্য ২০ টাকা। এবারের মেলায় ১৪ ক্যাটাগরিতে দেশ-বিদেশের ৫২০টি স্টল ও প্যাভিলিয়ন রয়েছে। মেলায় অংশগ্রহণকারী দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন রকম পণ্যসামগ্রী প্রদর্শন করছে।

বাবা রাফিতে উপচে পড়া ভিড় : এবার বাণিজ্য মেলায় দুটি প্যাভিলিয়ন নিয়ে অংশ নেওয়া বিশ্বখ্যাত কাবাব চেইন প্রতিষ্ঠান বাবা রাফিতে ক্রেতার উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। মেলার পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের এ দুটি প্যাভিলিয়নে বিশেষ ছাড় দিয়েছে বাবা রাফি। বাবা রাফির প্রডাকশন ম্যানেজার আরিফ হাসান মাহমুদ গতকাল বলেন, ‘মেলায় আমাদের দুটি আউটলেটে ক্রেতার ব্যাপক ভিড় ছিল দিনভর। বিশেষ করে মেলা উপলক্ষে স্পেশাল মেন্যুগুলোই বেশি কিনেছেন ক্রেতারা।’ বাবা রাফি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এবার বাণিজ্য মেলায় বেশকিছু স্পেশাল মেন্যু তৈরি করেছে বাবা রাফি। এর মধ্যে আছে— চার ও ছয় জনের এফএনএফ প্যাকেজ। এর বাইরে ভিন্ন ভিন্ন দামে পাওয়া যাবে কাবাব, বার্গার, তন্দুরি বার্গার, কাবাব রাইস, তন্দুরি রাইস, ফিশ, কমবো, কাবাব বার্গার, কাবাব সাব, চিকেন পপকন, আইসক্রিমসহ সুস্বাদু মজাদার খাবার। এসব খাদ্যপণ্য মাত্র ৮০ থেকে ২৬০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। তবে চারজনের এফএনএফ প্যাকেজের দাম পড়বে ৯৬০ টাকা এবং ছয়জনের ১৪৭০ টাকা।

সর্বশেষ খবর