শনিবার, ৬ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভাইদের সংঘাতে সিলেটে দুই দলেই অস্বস্তি

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

নতুন বছরের শুরুতেই অস্বস্তির মুখে পড়েছে সিলেট আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দল দুটির নেতাদের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে। চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে সিলেট সিটি নির্বাচন এবং বছরের শেষ দিকে হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ দুই বড় নির্বাচনের আগে বছরের শুরুতেই ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের কর্মকাণ্ড আওয়ামী লীগ-বিএনপি নেতাদের অস্বস্তি বাড়িয়ে দিচ্ছে। সূত্র বলছে, সিলেট আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ নেতারা ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ। কিন্তু গ্রুপিং রাজনীতির কারণে ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের অপকর্মের দায়ভার নিজেরা এড়াতে পারবেন না— এ জন্য অনেকটা চুপ করে আছেন তারা। বিব্রতকর এ অবস্থায় গতকাল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নিজেদের মিছিল-সমাবেশে ডাকেনি ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের। গত ১ জানুয়ারি ছিল ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ওই দিন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র্যালিতেই সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রদলের দুটি গ্রুপ। সেই সংঘর্ষে সিলেট মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাসনাত শিমুর বুকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে ওসমানী হাসপাতালে মৃত্যু হয় তার। নতুন বছরের শুরুর দিন এবং দলীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতেই এ খুনের ঘটনায় সিলেটে চরম সমালোচনার মুখে পড়ে ছাত্রদল। এ খুনের ঘটনায় ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের আসামি করেই মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে মহানগর ছাত্রদল নেতা নাবিল রাজা চৌধুরীকে; দুই নম্বর আসামি হচ্ছেন মদন মোহন কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কাজী মেরাজ। ছাত্রদল নেতা খুনের ঘটনায় পুলিশ এখন ছাত্রদল নেতা-কর্মীদেরই খুঁজছে। ছাত্রদলের এই কর্মকাণ্ডে অস্বস্তিতে পড়েছেন সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতারা। সিলেট জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আহাদ খান জামাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ছাত্রদলের এমন কাজ অগ্রহণযোগ্য। সিলেট ছাত্রদলে বর্তমানে ছাত্রনির্ভর রাজনীতির চর্চার অভাব রয়েছে। ছাত্ররাজনীতি চলে গেছে একশ্রেণির সুবিধাবাদীদের হাতে। নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য অছাত্র আর বখাটেদের ছাত্রদলে জায়গা দেওয়া হচ্ছে। যে অপ্রত্যাশিত ঘটনাগুলো ঘটছে, সেগুলো ঘটত না, যদি জেলা ও মহানগর বিএনপির কতিপয় নেতা অছাত্রদের দলে স্থান না দিতেন।’ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম বলেন, ২০১৮ সাল নির্বাচনের বছর। এ বছর সিটি করপোরেশন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু বছরের শুরুতেই ছাত্রদল নেতা শিমু হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আমাদের অস্বস্তির মধ্যে ফেলেছে। দলের মধ্যে যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী রয়েছে তাদের ব্যাপারে আমরা কঠোর পদক্ষেপ নেব। যাতে ভবিষ্যতে এ রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। এদিকে, ছাত্রদলকে অনুসরণ করেই যেন দলীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সিলেটে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় ছাত্রলীগ। গত বৃহস্পতিবার সিলেট নগরীর টিলাগড়ে ছাত্রলীগের দুটি গ্রুপ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জড়িয়ে পড়ে সংঘর্ষে। সংঘর্ষ চলাকালে গোলাগুলি হয়, আহত হন তিন ছাত্রলীগ কর্মী। সংঘর্ষ চলাকালে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয় ছাত্রলীগ নামধারীরা। ছাত্রলীগের এমন অপকর্মে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা বলছেন, সরকারের অজর্ন ও সুনামকে নষ্ট করছে ছাত্রলীগ।

এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, ছাত্রলীগের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তার বদনামের ভাগ আওয়ামী লীগকেও নিতে হয়। এনিয়ে আমাদের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। নির্বাচনের বছরে এ রকম কর্মকাণ্ড দলের ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

সর্বশেষ খবর