শনিবার, ৬ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

৫০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু জন্ম নেবে এ বছর

গণহত্যা জাতিগত নিধনের শামিল : ওআইসি প্রতিনিধি দল

প্রতিদিন ডেস্ক

শিশুদের নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন বলছে, চলতি বছর বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা নারীরা অন্তত ৫০ হাজার সন্তান জন্ম দেবেন। সংস্থাটির তথ্যমতে, ২০১৮ সালে প্রায় ৫০ হাজার শিশু জন্ম  নেবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে, দিনের হিসাবে ধরা হলে প্রতিদিন অন্তত ১৩০ জন শিশু পৃথিবীর আলো দেখবে। এরই মধ্যে সেখানে জন্ম নেওয়া বহু শিশু নানা রোগে ভুগছে। তারপরও সেখানে নতুন প্রাণ জন্মানোর ধারা থেমে নেই।

তাদেরই একজন দুই মাস বয়সী আসিসের জন্ম কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশেই নোম্যান্স ল্যান্ডে। বাঁশ আর ত্রিপল দিয়ে বানানো তাঁবুতে কোনো চিকিৎসা কর্মী ছাড়াই আসিসের জন্ম দেন ২০ বছর বয়সী আনোয়ারা বেগম।

আনোয়ারা বেগম যখন মিয়ানমার থেকে পালিয়ে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে ১৫ দিন ধরে হাঁটতে হাঁটতে বাংলাদেশে আসেন তখন তিনি আট মাসের গর্ভবতী। মেয়েকে নিয়ে তার স্বপ্নের কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘তাকে ভালো শিক্ষা দেওয়া এবং একটি শান্তিপূর্ণ দেশে থাকতে পারা।’

এইড গ্রুপের মাতৃত্বকালীন নার্সরা নিয়মিত তাঁবুগুলোতে গিয়ে প্রসূতিদের শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করছেন এবং স্তনপান ও পুষ্টি বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন। তারপরও নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে শিশুরা।

গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইনে জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। গণহত্যা, ঘরবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া এবং পুড়িয়ে ফেলা, নারীদের ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় শিশুকে পুড়ে ফেলার মতো সহিংসতার শিকার হয় রোহিঙ্গারা।

গণহত্যা জাতিগত নিধনের শামিল :  কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা ও ধর্ষণসহ বর্বর নির্যাতনের ঘটনা জাতিগত নিধনের শামিল বলে উল্লেখ করেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনরত ওআইসির ইন্ডিপেন্ডেন্ট পার্মানেন্ট হিউম্যান রাইটস কমিটি (আইপিএইচআরসি)।

গতকাল দুপুরে উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করার সময় আইপিএইচআরসির চেয়ারপারসন ড. রশিদ আল বালুসি বলেন, ‘আমরা দুই দিন ধরে উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকা পরিদর্শন করেছি এবং নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে যে সব তথ্য পেয়েছি তা ওআইসির কাছে প্রতিবেদন পেশ করব।’ ভাইস-চেয়ারপারসন ড. রাইহানাহ বিনতে আবদুল্লাহ বলেন, ‘রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর এ নির্যাতন জাতিগত নিধনের শামিল।’

এসময় তিনি রোহিঙ্গাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। ১৩ সদস্যের এই প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প পরিদর্শন ছাড়াও গতকাল সকাল থেকে উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। প্রতিনিধি দলে অন্যদের মধ্যে ছিলেন ওআইসির ভাইস-চেয়ারম্যান মেড এসকে ক্যাগওয়া, কমিটির সদস্য মোহাম্মদ জমির, আবদুল ওহাব, মাহমুদ মোস্তাফা আফিফি, এডামা নানা, নির্বাহী পরিচালক মার্গোব সেলিম বাট, হাফিদ এল হাসমি, আকমেদ আল গামদি, হাসান আবেদিন, মাহা আকিল, আবদুল্লাহ কাবি ও মোহাম্মদ গালাবাসহ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। উল্লেখ্য, প্রতিনিধি দলটি গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে কক্সবাজার পৌঁছে। ওইদিন তারা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

সর্বশেষ খবর