রবিবার, ৭ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

মানি লন্ডারিং ঝুঁকি বাড়ছে

একেবারেই বাস্তবায়ন হয়নি ৩১ অ্যাকশন আইটেম

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

মানি লন্ডারিং ঝুঁকি বাড়ছে

বাংলাদেশের মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে প্রণীত জাতীয় কৌশলপত্র (২০১৫-১৭) বাস্তবায়নের সময়সীমা শেষ হয়েছে ডিসেম্বরে। আলোচ্য সময়ের মধ্যে একেবারেই বাস্তবায়ন হয়নি অন্তত ৩১টি অ্যাকশন আইটেম বা কর্ম-উপাদান। এর ফলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ভাবমূর্তি সংকটে পড়তে পারে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) তথ্যানুযায়ী, জাতীয় কৌশলপত্রে ১৩৮টি কর্ম-উপাদান চিহ্নিত করা হয় ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য। এর মধ্যে গত তিন বছরে ৭১টি আইটেমের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হয়েছে, আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে ৩৬টি আইটেম এবং বাকিগুলো এখনো অধরাই রয়ে গেছে। বাস্তবায়ন না হওয়া গুরুত্বপূর্ণ কর্ম-উপাদানগুলো হলো : বিদেশে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধার, মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন অপরাধের তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা পরিহার, বিভিন্ন সংস্থার ডাটাবেজ থেকে বিএফআইইউর তথ্যপ্রাপ্তি, কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন, কোম্পানি আইন সংশোধন ইত্যাদি। আগামী জুলাইয়ে অনুষ্ঠেয় এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানি লন্ডারিংয়ের (এপিজি) বার্ষিক সভায় মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশের সক্ষমতা পর্যালোচনা করা হবে। তার আগে এ কর্ম-উপাদানগুলো বাস্তবায়ন করা যাবে কিনা তাই নিয়ে এখন উদ্বিগ্ন বিএফআইইউ। জানা গেছে, ২০১৮-২০ সাল মেয়াদে এপিজির কো-চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ। ২০২০ সালে এপিজির বার্ষিক সভার আয়োজক হওয়ার কথা বাংলাদেশের। এ অবস্থায় কৌশলপত্রে উল্লিখিত কর্ম-উপাদান বাস্তবায়ন না করা গেলে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশের সক্ষমতা প্রশ্নের মুখে পড়বে। এতে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় সমন্বয় কমিটির বৈঠকে এ ধরনের আশঙ্কা ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ২৬ ডিসেম্বর এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। গত সপ্তাহে বৈঠকের কার্যবিবরণী বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, অবাস্তবায়িত কর্ম-উপাদানগুলো আগামী মার্চের মধ্যে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। এ বিষয়ে তাগিদ দিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ আবারও চিঠি দেবে। অন্য সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে : সরকারের পক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য পৃথক অ্যাটর্নি সার্ভিস চালুর বিষয়ে সমীক্ষা করা হবে; মানি লন্ডারিং আইনে বর্ণিত অপরাধ বিচারের জন্য বিশেষ জজ নিয়োগ এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইনে অপরাধ বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের কার্যক্রম দ্রুততর করা হবে। জানা গেছে, বাংলাদেশের মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ ব্যবস্থার ওপর এপিজি শিগগিরই একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করবে। এ প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে চলতি বছরের জুলাইয়ে অনুষ্ঠেয় এপিজির বার্ষিক সভায় বাংলাদেশের অবস্থান নির্ধারণ হবে, যার সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তির সংশ্লেষ রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএফআইইউ-প্রধান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মো. রাজি হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মানি লন্ডারিং ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশের সক্ষমতার বিষয়টি আগামী পাঁচ বছরের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সান ডিয়াগো সম্মেলনেই নির্ধারিত হয়ে গেছে। ফলে এ মুহূর্তে তেমন কোনো ঝুঁকি নেই। তবে কৌশলপত্রে উল্লিখিত কর্ম-উপাদানগুলো বাস্তবায়ন করতে না পারলে বাংলাদেশের অবস্থান পর্যালোচনা হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এসবের অগ্রগতির বিষয়ে সরকারের চেষ্টা অব্যাহত আছে বলে তিনি জানান। প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে সান ডিয়াগোয় অনুষ্ঠিত এপিজির ১৯তম সম্মেলনে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশের অবস্থান আন্তর্জাতিক মানের বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। টেকনিক্যাল কমপ্লায়েন্সে বাংলাদেশের রেটিং ছিল উন্নত দেশের সমকক্ষ বা তার চেয়েও বেশি; ইফেকটিভনেসে বাংলাদেশ ছিল শ্রীলঙ্কা, ভুটান, ফিজি ও নরওয়ের থেকেও ভালো।

সর্বশেষ খবর