রবিবার, ৭ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

আগর চাষে খুলছে সম্ভাবনার দুয়ার

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

আগর চাষে খুলছে সম্ভাবনার দুয়ার

পার্বত্য জেলা বান্দরবানের পাহাড়িরা এখন আগর চাষের দিকে ঝুঁকছেন। বন বিভাগ বা সরকারি উদ্যোগে জেলায় বড় আকারে আগর বাগান তৈরি না হলেও এরই মধ্যে প্রায় ২০০ হেক্টর বনভূমিতে আগর চাষ করা হয়েছে। দেশে ও বিশ্ববাজারে অত্যন্ত মূল্যবান এ গাছের নির্যাস থেকে উৎপাদন হয় তেল ও শুকনা কাঠ। পারফিউম বা সুগন্ধি দ্রব্য উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল এই আগর তেল। এক কেজি আগর তেলের দাম বিদেশে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। আর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আগর গাছের টুকরোগুলোর চাহিদা রয়েছে সুগন্ধি জ্বালানি হিসেবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সুস্থ পরিচর্যার পর ১৩ বছর বয়সী একটি আগরগাছ থেকে ২৫ গ্রাম আগর তেল পাওয়া যায়, যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১৫ হাজার টাকা। এক হাজার আগরগাছ রোপণ করা হলে ১৩ বছর পর দেড় কোটি টাকা উপার্জন করা সম্ভব। এ পরিমাণ গাছের নার্সারির চারা উত্তোলন ও বনায়নকাজ সম্পন্ন করতে খরচ হয় মাত্র ২৫ হাজার টাকা। লামা বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশিদ খান জানিয়েছেন, এরই মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে ১৮৭ হেক্টর বনভূমিতে আগর চাষ শুরু হয়েছে। রোপণের ১৩ বছর পর এ আগর বাগান থেকে উৎপাদিত হবে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার আগর। লামা বন বিভাগের তৈন, লামা সদর ও ডলুছড়ি রেঞ্জে গত তিন অর্থবছর থেকে এ পর্যন্ত আগর বাগান প্রকল্পের আওতায় এক একর করে ৪৬৭ জন ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসিত করার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগর চাষে বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগের অভাবে তিন পার্বত্য জেলায় আশানুরূপভাবে আগর চাষ হচ্ছে না। অথচ  আগর চাষ করেই সহজে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। এক কথায় আগর চাষের মাধ্যমে পার্বত্যবাসী তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারে বলে মত দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল হক। বান্দরবান জেলা বন কর্মকর্তা বিপুল কৃষ্ণ জানান, বান্দরবানে সম্ভাবনা থাকলেও আগর চাষ হয়ে ওঠেনি। তবে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের আওতায় সামাজিক বনায়নের অংশ হিসেবে বিপুল পরিমাণ আগর চাষ হয়েছে। লামা উপজেলায় কিছু বাগান সৃষ্টি করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পার্বত্য জেলায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় আগর চাষ করা হলে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করতে পারবে। প্রচারণা চালিয়ে উৎসাহিত করা হলে ব্যক্তি মালিকানাধীন অনেক আগর বাগান সৃষ্টি করা সম্ভব। এ ব্যাপারে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে বিশেষ ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। জানা গেছে, লামা বন বিভাগের তৈন, লাম সদর ও ডলুছড়ি রেঞ্জে গত তিন অর্থবছর থেকে এ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ১৮৭ হেক্টর বনভূমিতে আগর বাগান প্রকল্পের আওতায় প্রতিজনকে এক একর করে বাগানের মালিকানার অংশীদারিত্ব দিয়ে ৪ হাজার ৬৭৬ জন ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসিত করার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রেঞ্জ কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম জানান, গত ২০০৯-১০ অর্থবছরে ২৮৭ তৈন মৌজায় ৪০ হেক্টর বনভূমিতে আগর বাগান সৃষ্টি করা হয়েছে। এখানে ভূমিহীন প্রতিটি পরিবারকে এক একর করে বাগানের মালিকানা দিয়ে ভূমিহীন পরিবাকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর