মঙ্গলবার, ৯ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী

জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে

পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে কেক কাটেন —বাংলাদেশ প্রতিদিন

পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পুলিশকে আমি সব সময় আইনের রক্ষকের ভূমিকায় দেখতে চাই। দেশের প্রচলিত আইন, সততা ও নৈতিক মূল্যবোধই হবে পেশাগত দায়িত্ব পালনের পথনির্দেশক। আপনাদের মনে রাখতে হবে সফলতার জন্য আপনারা যেমন পুরস্কৃত হবেন, তেমনি প্রতিটি কাজের জন্য জবাবদিহিও নিশ্চিত করতে হবে। ইতিমধ্যে পুলিশ সদর দফতরে ‘আইজিপি          কমপ্লেইন সেল’ স্থাপন করা হয়েছে, যা পুলিশ সদস্যদের পেশাগত জবাবদিহি নিশ্চিত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। গতকাল সকালে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা খাতের খরচ ব্যয় নয়, উন্নয়ন। আমরা ক্ষমতায় আসার পর পুলিশের বেতন যে পরিমাণ বাড়িয়েছি পৃথিবীর কোনো দেশের সরকার এটা পারেনি। আমরা পেরেছি কারণ আমাদের অর্থনীতি যথেষ্ট গতিশীল ও শক্তিশালী। দেশের আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নে আমরা কাজ করছি। এ বছর পুলিশ সপ্তাহের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘জঙ্গি, মাদকের প্রতিকার, বাংলাদেশ পুলিশের অঙ্গীকার’। এর আগে সারা দেশ থেকে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত ১১টি কন্টিনজেন্ট ও পতাকাবাহী দলের নয়নাভিরাম প্যারেড পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশ মহসিন হোসেন প্যারেড পরিচালনা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের পুলিশ বাহিনী সাহসিকতার সঙ্গে বিভিন্ন অবস্থার মোকাবিলা করেছে। বিশেষ করে ২০১৩-১৪ সালে বিএনপির জ্বালাও পোড়াওয়ের সময় ২৭ জন পুলিশ সদস্য জীবন দেন। মহিলা পুলিশ কন্টিনজেন্ট সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দেশের জন্য বড় হুমকি। ধর্মের নামে যারা সহিংসতা চালায় তাদের নিন্দা জানাই। অনেকে বলেন, ইসলাম প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন করলে বেহেশতে যাওয়া যাবে। আমি বলতে চাই, তারা কখনো বেহেশতে যেতে পারবেন না। তারা ধর্মকে কলুষিত করছে। তিনি আরও বলেন, বাংলার মাটি থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূল করে দেশের শান্তি নিশ্চিত করতে চাই। তাই সব গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে নির্মূল করতে হবে। আমরা চাই প্রতিটি পরিবার তাদের সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখুক। তারা কোথায় যাচ্ছে, কী করছে তার খোঁজ রাখতে হবে। কারণ জনসম্পৃক্ততা থাকলে জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করা সহজ হবে। প্রধানমন্ত্রী পুলিশ সদস্যদের নিজেদের জনবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালনের জন্য আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমি আশা করি, প্রতিটি পুলিশ সদস্য অসহায় ও বিপন্ন মানুষের প্রতি দায়িত্ব পালন করবেন এবং সাহায্যের হাত বাড়াবেন। জাতির পিতা আপনাদের বলেছেন, আপনারা স্বাধীন দেশের পুলিশ। জনগণের প্রতি আপনাদের কর্তব্য অপরিসীম। তাই আপনাদের নিজেদের জনবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, পুলিশের আবাসন, রেশন, চিকিৎসা সুবিধা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ প্রদান এবং প্রয়োজনীয় যানবাহন ও অন্যান্য সরঞ্জাম অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরবরাহের বিষয়টিও সরকারের বিবেচনায় রয়েছে। পুলিশের জন্য স্টাফ কলেজও আওয়ামী লীগ সরকারই করেছে। প্রধানমন্ত্রী রাজারবাগ প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশের আইজি এ কে এম শহীদুল হক ও স্বরাষ্ট্র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন তাঁকে স্বাগত জানান। মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, জাতীয় সংসদের সদস্য, সরকারের পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তা, বিদেশি কূটনীতিক ও আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।  প্রধানমন্ত্রী পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ১৮২ জনকে চারটি ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ পুলিশ পদক সাহসিকতা, রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক সাহসিকতা, বাংলাদেশ পুলিশ পদক সেবা ও রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক সেবা প্রদান করেন। এর মধ্যে মরণোত্তর বাংলাদেশ পুলিশ পদক সাহসিকতার জন্য সিলেটের আতিয়া মহলে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ, পরিদর্শক মো. মনিরুল ইসলাম ও পরিদর্শক কায়সরের পক্ষে তাঁদের স্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এই পদক গ্রহণ করেন।

বাংলাদেশ পুলিশ পদক ও রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদকে ভূষিতদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ পদক আপনাদের কাজের স্বীকৃতির পাশাপাশি আপনাদের ভবিষ্যতে আরও পেশাদারিত্ব এবং আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করবে এটাই আমার প্রত্যাশা।  

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিকভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমরা ক্ষুধামুক্ত ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়তে  চাই। হাত পেতে নয়, মাথা নিচু করে নয়, স্বাধীন দেশ হিসেবে এগিয়ে যেতে চাই। মাথা উঁচু করে দেশকে এগিয়ে নিতে চাই। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।

সর্বশেষ খবর