মঙ্গলবার, ৯ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

রোহিঙ্গা ফেরতে এবার কাঠামো চুক্তি

খসড়া পাঠিয়েছে বাংলাদেশ, অনুসরণ হচ্ছে ৯২’র চুক্তি

জুলকার নাইন

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে গিয়ে বসবাসের প্রক্রিয়া নির্ধারণ নিয়ে এবার একটি কাঠামো চুক্তি করতে যাচ্ছে দুই দেশ। ১৫ জানুয়ারি বা তার পরদিন মিয়ানমারের নেপিদোয় এটি স্বাক্ষর হতে পারে। বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকরা কোন সীমান্ত দিয়ে ফেরত যাবে, সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার আগে বাংলাদেশের কোনো ট্রানজিট ক্যাম্পে থাকবে কিনা, দুর্গম রাস্তা কীভাবে পাড়ি দিয়ে রাখাইন ক্যাম্পে পৌঁছাবে, তাদের জন্য কতগুলো যানবাহন লাগবে— এর সবই বিস্তারিতভাবে থাকছে এই ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্টে’। দুই দেশের সম্মতিতে ১৯৯২ সালের চুক্তি অনুসরণ করে বাংলাদেশের প্রস্তুত করা খসড়া ইতিমধ্যেই পাঠানো হয়েছে মিয়ানমারে। নেপিদোয় ১৫ জানুয়ারি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকেই উভয়ের সম্মতিতে কাটাছেঁড়ার পর চূড়ান্ত করা হবে কাঠামো চুক্তি। কূটনৈতিক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, দুই দেশের স্বাক্ষর করা চুক্তির শর্তানুযায়ী ২২ জানুয়ারি প্রত্যাবাসন শুরুর টার্গেট ধরেই সব প্রস্তুতি চলছে। ১৯৯২ সালে সম্পাদিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তির আলোকে এবারের দ্বিপক্ষীয় অ্যারেঞ্জমেন্ট, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের টার্মস অব রেফারেন্স ও সর্বশেষ কাঠামো চুক্তি বা ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্টের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এতে বাস্তুচ্যুতদের বাংলাদেশ ক্যাম্প থেকে রাখাইন ক্যাম্পে ফেরানোর বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে প্রত্যাবাসন সময়কাল, যানবাহন ও যাতায়াতব্যবস্থা, আমন্ত্রণ প্রক্রিয়া, যোগাযোগসহ প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর বিস্তারিত। প্রাপ্ত তথ্যমতে, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পাঠানো ১ লাখ রোহিঙ্গার তালিকার ব্যাপারে আলোচনা করে প্রত্যাবাসনের সিদ্ধান্ত হবে। মিয়ানমারের ইচ্ছানুসারে এ তালিকার শুরুতে ৪৫০ জন হিন্দুর নামও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে রোহিঙ্গাদের নামের তালিকা চূড়ান্তভাবে অনুমোদনের ওপর। মিয়ানমারের পক্ষ থেকে চূড়ান্তভাবে অনুমোদনের পরই নিশ্চিত করা যাবে কখন প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে কবে নাগাদ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শেষ হবে তার কোনো সুস্পষ্ট সময়সীমা উল্লেখ নেই এ কাঠামো চুক্তিতে। এমনকি ফেরত যাওয়া রোহিঙ্গাদের রাখাইনে আইনগত মর্যাদা কী হবে, তা নিয়েও তেমন কিছু নেই। ফিরে যাওয়ার পর তারা আবারও সহিংসতার শিকার হয়ে বাংলাদেশে ফেরত এলে কী হবে, বাংলাদেশ কি এ নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে পারবে— সে বিষয়েও কোনো নিশ্চয়তা নেই প্রত্যাবাসনবিষয়ক অ্যারেঞ্জমেন্টে। সূত্র জানায়, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে এখনো বেশকিছু চ্যালেঞ্জ আছে। এসব নিয়েই আলোচনা হবে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপে। কারণ, রাখাইন এখনো প্রস্তুত নয়। সেখানে এখনো লোকজন পালিয়ে বেড়াচ্ছে। রাখাইনে শান্তি প্রতিষ্ঠা না হলে স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন নিয়ে নতুন করে জটিলতা তৈরি হওয়ার বিষয়টি বাংলাদশের বিবেচনায় আছে। তাই ফিরিয়ে নেওয়ার পর ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের অবস্থান দীর্ঘস্থায়ী না হওয়া এবং পুড়িয়ে দেওয়া রোহিঙ্গা গ্রাম ও তাদের বাড়িঘর দ্রুত পুনর্নির্মাণ এবং নিজ নিজ বসতভিটাতেই বাস্তুচ্যুতদের ফেরানোর তাগিদ দেবে বাংলাদেশ। ৩০ সদস্যের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের (জেডব্লিউজি) বৈঠকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের ১৫ জন করে সদস্য থাকবেন। বাংলাদেশের দিক থেকে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপে নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক। মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব মায়েন্ট থু জেডব্লিউজিতে তার দেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন। পররাষ্ট্র দফতরের এক কর্মকর্তার মতে, মিয়ানমারের ইচ্ছানুসারেই প্রক্রিয়াগুলো চালানো হচ্ছে। এসব প্রস্তাব তারা মেনেও নিয়েছে। এখন প্রত্যাবাসন শুরু করার ক্ষেত্রে খুব একটা জটিলতা থাকার কথা নয়। কিন্তু এজন্য তাদের সত্যিকার আন্তরিকতা প্রয়োজন আছে এবং তা বুঝতে পারাটা মুশকিল। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও বলেছেন, ‘টেকনিক্যাল কারণে প্রত্যাবাসন শুরু করতে দু-চার দিন দেরি হলেও এটি শুরু হওয়ার বিষয়ে আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী।’ তবে ভিন্ন সুর আছে মিয়ানমারে। চাইনিজ সমর্থিত রেডিও ফ্রি এশিয়ার খবরে মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিলম্বের জন্য বাংলাদেশকে দায়ী করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। খবরে বলা হয়, মন্ত্রী উইন মিয়াত আয়া জানিয়েছেন, ২২ জানুয়ারি বাস্তুচ্যুত রাখাইনের বাসিন্দাদের গ্রহণে মিয়ানমার প্রস্তুত। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে তারা বাংলাদেশের কাছে অনেক আগেই যাচাই-বাছাইয়ের ফরম পাঠিয়েছেন। কাগজপত্রহীন লোকজন ওই ফরম পূরণ করবে, যা মিয়ানমার সরকার তার নিজস্ব ভেরিফিকেশন সিস্টেমে যাচাই-বাছাই করবে। কিন্তু এখনো পূরণ হওয়া কোনো ফরম মিয়ানমার ফেরত পায়নি। কিন্তু কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের জন্য মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা প্রস্তুত রয়েছেন। মিয়ানমার মন্ত্রীর দাবি, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বা এর পরিকল্পনায় কোনো সমস্যা নেই।

সর্বশেষ খবর