মঙ্গলবার, ৯ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
বিজিএমইএ নির্বাচন

সমঝোতা নয়, ভোট চান পোশাকশিল্প মালিকরা

রুহুল আমিন রাসেল

দেশে রপ্তানি আয়ের প্রধান খাতের সংগঠন বিজিএমইএ নির্বাচনে ক্ষমতা ভাগাভাগির নামে কথিত সমঝোতা নয়, বরং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরাসরি ভোট চান সাধারণ পোশাকশিল্প মালিকরা। তারা আপস-সমঝোতার নামে সংগঠনটির সাবেক সভাপতিদের দুই পক্ষের চাপিয়ে দেওয়া সভাপতি, সহসভাপতি ও পরিচালকদের মানতে নারাজ। ওই দুই পক্ষের বাইরে আরও একাধিক পক্ষ বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি— বিজিএমইএতে এবারের নির্বাচনে অংশ নিতে জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। তথ্যমতে, বিজিএমইএ বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর। কিন্তু উত্তরায় বিজিএমইএর নতুন ভবন নির্মাণকে কেন্দ্র করে ছয় মাস মেয়াদ বাড়ানো হয়। আগামী মার্চে বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হবে। এমন প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি ২০১৭-১৮ মেয়াদে বিজিএমইএর নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করা হয়। তফসিল অনুযায়ী আগামী ৭ মার্চ ভোট হওয়ার কথা থাকলেও তাতে বিজিএমইএর কয়েকজন সাবেক সভাপতির ‘কথিত’ সমঝোতায় শঙ্কা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন সাধারণ পোশাকশিল্প মালিকরা। জানা গেছে, সর্বশেষ পোশাকশিল্প মালিকদের ভোটে ২০১৩ সালে বিজিএমইএ নেতা নির্বাচিত হয়েছিলেন। তখন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন এখন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। এরপর ২০১৫ সালে পোশাকশিল্প মালিকদের দুই জোট সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরাম নেতারা সমঝোতা করে সম্মিলিত পরিষদের সিদ্দিকুর রহমানকে সভাপতি নির্বাচিত করে বিজিএমইএ বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ গঠন করেন। সেই সমঝোতার ধারাবাহিকতায় বিজিএমইএ সাবেক সভাপতিদের সংগঠন ‘এক্স বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট ফোরাম’ ২১ ডিসেম্বর তাদের সভায় আগামী ২০১৭-১৮ মেয়াদের জন্য ফোরাম নেতা  ও রূপা গার্মেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহীদুল ইসলামকে সংগঠনটির সভাপতি নির্বাচন করার পক্ষে সিদ্ধান্ত হয়। তবে সাধারণ পোশাকশিল্প মালিকরা সাবেক সভাপতিদের সমঝোতার বিপক্ষে তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন। যদিও শহীদুল ইসলাম ২০০৬ ও ২০০৮ সাল দুই মেয়াদে বিজিএমইএর সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এ প্রসঙ্গে পোশাকশিল্প মালিকরা নাম প্রকাশ না করে জানিয়েছেন, কোনো অজুহাতে এবার নেতাদের সমঝোতা সাধারণ পোশাকশিল্প মালিকরা মানবেন না। পোশাকশিল্প মালিকদের স্বার্থে ভোট হবেই। কারণ সামনের দিনগুলোতে এই শিল্পকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এ চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে— শ্রমিকদের নতুন মজুরি নির্ধারণ, বিজিএমইএ ভবন অপসারণ, পোশাক কারখানা সংস্কার, জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং নির্বাচন-পরবর্তী পরিস্থিতি। এর বাইরে আছে— দেশি-বিদেশি বহু চ্যালেঞ্জ। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিজিএমইএতে দক্ষ ও যোগ্য এবং সক্ষম নেতা প্রয়োজন। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় চাপিয়ে দেওয়া কমিটি কেউ মেনে নেবে না। তবে দুই পক্ষের সমঝোতার বিরুদ্ধে বিজিএমইএ নির্বাচনে লড়তে চায় স্বাধীনতা পরিষদ। এই পরিষদের আহ্বায়ক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, যে কোনো মূল্যে এবার নির্বাচন হবেই। আমার নেতৃত্বে স্বাধীনতা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেবে। আমরা চাই, যেই জিতুক, সাধারণ ব্যবসায়ীদের ভোটে জিতে আসুক। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী গতকাল বলেন, যেহেতু এখন পর্যন্ত আমরা আগের সমঝোতার মধ্যেই আছি। তাই সামনের দিনগুলোতেও সমঝোতার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের সবার চলা উচিত। কারণ সামনের দিনগুলোকে পোশাকশিল্পে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সহজ হবে। পোশাকশিল্প মালিকরা মনে করেন— বিগত ২০১৪ সালে রপ্তানির অবস্থা কিছুটা খারাপ থাকায় ২০১৫ সালে দুই জোট একমত হয়ে সমঝোতা করেছে। কিন্তু বর্তমানে রপ্তানির মন্দা অবস্থা কেটে গেছে। তাই এখন সমঝোতার মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচন না করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হওয়াই উচিত। বিজিএমইএ কয়েকজন পরিচালক নাম প্রকাশ না করে বলেন, আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সমঝোতার দুই মেয়াদ শেষ হওয়ার পর দুই সংগঠন আবার এক হয়ে যাবে। তখন ভোটের মাধ্যমে পরিচালক নির্বাচিত হবে। আর পরিচালকরাই সভাপতি নির্বাচন করবেন। তবে সমঝোতায় সভাপতি নির্বাচন করা ঠিক হবে না। আমরা চাই পোশাক খাতে যোগ্য নেতৃত্ব। তবে ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার তো সবার থাকবে। এটা সবারই বিবেচনা করা দরকার।

সর্বশেষ খবর