শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৯ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

চিকিৎসক নন তবু করেন জটিল রোগের চিকিৎসা!

মাহবুবুল হক পোলেন, মেহেরপুর

মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান গ্রাম। এ গ্রামে বিশাল ফার্মেসি আজিজ মেডিকেল হল। এখানে প্রতিদিন শত শত জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসা দিচ্ছেন ডা. কাজী খয়রদ্দিন (রবি)। ডা. খয়রদ্দিনের নেই কোনো প্রাতিষ্ঠানিক সনদ। তাতে কী? দীর্ঘ ১১ বছর ধরে এভাবে জটিল রোগের চিকিৎসা করে যাচ্ছেন তিনি বিনা বাধায়। অথচ বিডিএমসি আইন অনুযায়ী এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রিধারী ছাড়া কেউ ডাক্তার পদবি ব্যবহার করলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এই অপরাধের অপরাধী সর্বোচ্চ ৩ বছর কারাদণ্ড অথবা ১ লাখ  টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন বিষয়টি জেনেও কখনো কোনো বাধা হয়নি। সরেজমিন মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান গ্রামে গিয়ে দেখা যায় নিজ দ্বিতল বাড়ির নিচতলায় একটি রুমে স্ট্রোক, হার্টের সমস্যাসহ জটিল রোগীর চিকিৎসা দিচ্ছেন ডা. কাজী খয়রদ্দিন (রবি)। তার বাবা কাজী আলাউদ্দীন রবি ছিলেন এলাকার পল্লী চিকিৎসক। চিকিৎসা ক্ষেত্রে বাবার নাম ডাক ছিল। তিনি ১১ বছর আগে মারা যান। এরপর তার হাল ধরে ডাক্তার হয়ে বসেছেন খয়রদ্দিন রবি। চিকিৎসায় বাবার নাম ডাকের কারণে বাবার ডাক নামটিও তিনি ব্যবহার করছেন। নিজেকে এসএসসি পাস দাবি করলেও কবে, কোথা থেকে পাস করেছেন তা তিনি জানাতে পারেননি।  দেখা যায়, চিকিৎসকের আজিজ মেডিকেল হল নামের চেম্বারের সামনে অনেক রোগীর ভিড়। তাদেরই একজন সদর উপজেলার রাজাপুর গ্রামের লুত্ফর রহমানকে (৮০) দেখা গেল চিকিৎসাসেবা নিতে এসে ৩৭ নম্বর সিরিয়ালে ভ্যানে শুয়ে আছেন। তিনি স্ট্রোকের রোগী। তার ডাক আসে দুপুর ১টায়। সাক্ষাৎ পাওয়ার পর তাকে দুই সপ্তাহের চিকিৎসা দেওয়া হয়। লুত্ফর রহমান জানান, কোনো সুফল মিলছে না। অন্যের কথায় চিকিৎসা নিতে এখানে এসে শুধুই টাকা খরচ হচ্ছে। গাংনীর হাড়িয়াদহের ব্রেনস্ট্রোকে আক্রান্ত মর্জিনা খাতুন (৬০) দুই মাস ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনি জানালেন অনেকের মুখে ডাক্তার খুব ভালো শুনেছেন বলে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। তাকে দেওয়া হয়েছে সেরিটন, ইকোস্প্রিন, ক্লোন, ইসোকেফ, পার্কিনিল, ভিডোগা। এসব ওষুধে তার শুধুই ব্যথা কমেছে কিন্তু অন্য উপসর্গ থেকেই গেছে। চেম্বারের সামনে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের অবস্থান দেখা যায়। বায়োফার্মার প্রতিনিধি সাদিক হোসেন জানান, তিনি এখানে প্রতিমাসে দেড়-দুই লাখ টাকার ওষুধ বিক্রি করেন। ড্রাগ কোম্পানির প্রতিনিধি রাজন আলী, এসকেএফের ওবায়দুল হাসানও অভিন্ন সুরে কথা বলেন।

কী রোগের চিকিৎসা করেন জানতে চাইলে খয়রদ্দিন জানান—ব্যথা, অবশ, হার্ট, স্ট্রোক, বেলসপালসি (মুখবাঁকা)-সহ বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগের নাম। তিনি ভিজিট ছাড়া রোগী দেখলেও প্রতি রোগীকেই এক সপ্তাহের ওষুধের দাম দিতে হয় ১১০০ টাকা। তার ডিসপেনসারিতে দেখা যায় ১০ থেকে ১২ রকমের ওষুধে আলমারি ঠাসা।   কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডা. মো. আশাদুর রহমান শামীম (নিউরোমেডিসিন) জানান, ডা. কাজী খয়রদ্দিন (রবি) ব্যবস্থাপত্রে যেসব ওষুধের নাম লিখছেন সেগুলো বিশেষজ্ঞ ছাড়া কেউ ব্যবহার করতে পারেন না। তিনি বলেন, একজন কোয়াক ডাক্তারের এমন সাহস দেখানো ঠিক নয়।

 মেহেরপুরের সিভিল সার্জন জিকেএম সামসুজ্জামান জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। এই অপচিকিৎসা বন্ধ হওয়া দরকার। অবশ্যই আমি আইনগত ব্যবস্থা নেব।

জেলা প্রশাসক পরিমল সিংহ বলেন, আমি এখনই মুজিবনগর ইউএনওকে দিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিচ্ছি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আনোয়ারুল ইসলাম জানান, খয়রদ্দিনের বাবা ডাক্তারি করতেন জানতাম। উনি সাধারণ রোগের চিকিৎসা করেন এটা জানেন। জটিল রোগের চিকিৎসার বিষয়টি তার জানা নেই।

 

সর্বশেষ খবর