ইতিহাস বলছে, অর্জনের গল্পটা পুরনো। ১৯০৬ সালে কলকাতায় কৃষি প্রদর্শনীতে ৯০ টাকা মূল্যের একটি শীতলপাটি প্রদর্শন করে স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন যদুরাম দাস নামের এক বুননকর্মী। ১৯৯০ সালে ইতালির রোমে অনুষ্ঠিত হস্তশিল্প প্রদর্শনীতে সিলেট বিভাগের প্রতিনিধি হিসেবে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার শীতলপাটি শিল্পী মনিন্দ্র নাথকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। শীতলপাটি নিয়ে এই অর্জনের গল্প আরও আছে। তবে সব অর্জনকে পেছনে ফেলে দিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর স্বীকৃতি। সারা বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ নির্বস্তুক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় সিলেটের শীতলপাটিকে অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা গত ৬ ডিসেম্বর দেয় ইউনেস্কো। শীতলপাটিতে মুগ্ধ হয়ে বিশ্ব যেন বিজয়ের মাসে বাংলাদেশের কপালে আরেক বিজয়তিলক পরিয়ে দিল। গ্রীষ্মকালে তপ্ত খররোদে শীতলপাটি শরীরে অদ্ভুত এক শীতল পরশ বুলিয়ে দেয়। এই শীতল পরশের নাম শীতলপাটি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ঐতিহ্যবাহী শীতলপাটি শিল্পের আদিস্থান সিলেটের বালাগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায়। এ ছাড়াও সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলা, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট, মৌলভীবাজারের বড়লেখা ও রাজনগর এবং সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলায় শীতলপাটি শিল্পের বিস্মৃতি রয়েছে। সিলেটের কয়েকজন শীতলপাটি শিল্পীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মুরতা গাছের বেত দিয়ে বোনা হয় শীতলপাটি। ছয় থেকে দশ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয় এ গাছ। এর ছাল (বেত) তুলে সেটি দিয়েই তৈরি হয় শীতলপাটি। ছাল রোদে কিছুটা শুকিয়ে বোনা হয় পাটি। আবার মুরতা গাছের ছালকে বিভিন্ন রঙে রাঙিয়ে নান্দনিক শীতলপাটিও বোনা হয়। বর্তমানে নকশা আঁকা শীতলপাটিই বেশি চলছে।
নানা রঙের বেত দিয়ে পাটিতে ফুটিয়ে তোলা হয় নানা ধরনের লোককাহিনী; আঁকা হয় তাজমহল, হাতি, ফুল, পাখি। বালাগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম গৌরীপুর ইউনিয়নের খাইস্তঘাট গ্রামের শীতলপাটি বুননশিল্পী মনাফ আলী বলেন, ‘চার ভাই পাঁচ হাত মাপের একটি শীতলপাটি বুনতে লাগে প্রায় ১৫০ মুরতা গাছ। প্রথমে মুরতা গাছ কেটে এনে সেগুলোর ছাল উঠাতে হয়। এরপর একটু রোদে শুকিয়ে রং করা, পরে আবার রোদে শুকানো, এরপর পাটি তৈরির কাজ শুরু করতে হয়।’ একই উপজেলার তেঘরিয়া গ্রামের খবির উদ্দিন বলেন, ‘শীতলপাটিতে লাভ কম। মাঝারি আকারের একেকটি পাটি তৈরিতে ছয় থেকে সাতশ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। এর সঙ্গে সময় ও শ্রম আছে। এ আকারের পাটি আট-নয়শ টাকায় বিক্রি হয়।’