শুক্রবার, ১২ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

বছরে ভারতে পাচার ৫০ হাজার তরুণী, এক দশকে পাঁচ লাখ

বিএসএফের জরিপে তথ্য সীমান্তের দুই পাশেই দালাল

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

ভারতে বা ভারত দিয়েই প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজার বাংলাদেশি তরুণী পাচার হয়ে যাচ্ছে এবং গত এক দশকে অবৈধভাবে ভারতে পাঠানো হয়েছে প্রায় ৫ লাখ নারী ও শিশু, যাদের বয়স ১২ থেকে ৩০ বছর। এনজিও ও বিভিন্ন সূত্রের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বিএসএফের একটি জরিপে এ চিত্র উঠে এসেছে। জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে ভারতে মানব পাচারের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সীমান্তের উভয় প্রান্তে দালালদের জোগানের ওপর ভিত্তি করেই চলছে এই ব্যবসা। বিএসএফের অভিমত, ভারতের বিভিন্ন শহর ও রাজ্যে মানব পাচারকারী সিন্ডিকেটগুলো বাংলাদেশে পাচারকারী সিন্ডিকেটের কাছে তাদের চাহিদার কথা জানায়। এরপর চাহিদা অনুযায়ী নারী-তরুণী-শিশু সরবরাহ করা হয়। ভারতীয় সিন্ডিকেটের চাহিদা থাকে মূলত অল্পবয়সী তরুণী ও নারী; যাদের পতিতালয়, ড্যান্সবার, ম্যাসাজ পারলার, পরিচারিকা কিংবা অদক্ষ বা আধাদক্ষ শ্রমিকের কাজে লাগানো হয়। বিএসএফ জানিয়েছে, চাহিদা পূরণ করতে ঢাকা থেকে শুরু করে পুরো বাংলাদেশেই দালালদের একটা শক্ত নেটওয়ার্ক রয়েছে। নিজেদের কাজের সুবিধার্থে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর মানুষের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে দালালদের। এজেন্ট ও সাব-এজেন্ট— এখানে দালালরা মূলত এ দুই ভাগে কাজ করে। দালালদের ৮৪ শতাংশই হলো পুরুষ, বাকিরা নারী।

বিএসএফের তরফে বলা হয়েছে, বাংলাদেশি পাচারকারী সিন্ডিকেটের পক্ষ থেকে সীমান্তে বসবাসকারী মানুষকে ভালো চাকরি, ঘরের কাজ, বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, চলচ্চিত্রে কাজের সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে ভারতে তাদের জীবনকে আরও উন্নত করার প্রলোভন দেওয়া হয়। সিন্ডিকেটের প্রথম লক্ষ্যই থাকে প্রধানত বাংলাদেশের গরিব ও অসহায় পরিবারের তরুণীরা। বিএসএফের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে নারী, তরুণীর বেশির ভাগ যশোর ও সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে উত্তর চব্বিশ পরগনার ঘোজাডাঙ্গা দিয়ে ভারতে প্রবেশ করছে। কারণ, এ অঞ্চল দিয়ে সীমান্ত পুরোপুরি অরক্ষিত এবং মানুষও জিরো লাইনে বসবাস করে। ফলে সহজেই দালালরা ভারতে মানব পাচার করতে পারে। এর পাশাপাশি দক্ষিণ-পশ্চিম ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে পরিচিত বেনাপোল সীমান্তও ব্যবহার করছে দালালরা। এর পাশাপাশি কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহীসহ বাংলাদেশের অন্য জেলাগুলোর সীমান্ত এলাকাও মানব পাচারের জন্য ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশের পাচারকারী চক্রের সঙ্গে জড়িত দালালরা এ অঞ্চলে শক্ত ঘাঁটি তৈরি করেছে এবং এ পথগুলো পাচারের জন্য ‘ট্রানজিট পয়েন্ট’ হয়ে উঠেছে। তবে ভারতে পাচারের পরই পাচারকৃত ওই নারী, তরুণী বা শিশুদের ভারতীয় পাচারকারী চক্রের হাতে তুলে দেওয়া হয় না। তাদের সীমান্তবর্তী গ্রামে কিছু দিন রেখে দেওয়া হয়। এরপর সময়-সুযোগ বুঝে ভারতের শহরগুলোয় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে চাহিদা রয়েছে ভারতের মুম্বাই, হায়দরাবাদ ও বেঙ্গালুরু শহরে।

 পাশাপাশি রায়পুর ও সুরাটেও এই নারীদের বেশ চাহিদা। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর একটি রিপোর্টে দেখা গেছে, গত বছর প্রায় ২০ হাজার নারী ও শিশু ভারতে পাচার হয়ে এসেছে; যা ২০১৫ সালে পাচারকৃত নারী ও শিশুর চেয়ে শতকরা ২২ ভাগ বেশি। বাংলাদেশ ও নেপালের সঙ্গে অরক্ষিত সীমান্ত হওয়ার কারণে পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে বেশি নারী ও শিশু পাচার হয়। পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলা মুরশিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, নদীয়া, মালদা ও কোচবিহার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

বাংলাদেশি তরুণীদের জন্য এটাই ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। পশ্চিমবঙ্গের পরই সবচেয়ে বেশি শিশু পাচার হয় রাজস্থানে আর নারী পাচার হয় মহারাষ্ট্রে।

সর্বশেষ খবর