শুক্রবার, ১২ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

৫০০ বছরের তেঁতুল গাছ

মো. রফিকুল আলম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

৫০০ বছরের তেঁতুল গাছ

ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলন ও সাঁওতাল বিদ্রোহ খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে একটি প্রাচীন তেঁতুল গাছ। কেউ বলেন, ৭০০ বছর আবার কেউ বলেন প্রায় ৮০০ বছর বয়স এ তেঁতুল গাছটির। তবে কৃষি বিভাগ বলছে ৫০০ বছর। আর তেঁতুল জাতের বিবেচনায় দাবি করা যেতে পারে এটিই দেশের প্রাচীন তেঁতুল গাছ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর থেকে ২১ কিলোমিটার দূরে নাচোল উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়নের বরেন্দ্র ভূমির মাঝে একসময়ের জমিদার এলাকা সুরলা গ্রামে মাথা সোজা করে দাঁড়িয়ে আছে তেঁতুল গাছটি। প্রায় ৩০ বছর আগে ঝড়ে বড় ডালটি ভেঙে পড়লেও মাথা নোয়ায়নি গাছটি। আগের জমিদার এলাকা সুরলার আদিবাসীদের নির্যাতন, অত্যাচার আর দরিদ্রতার আঘাতে মাথা নুইয়ে গেলেও আজও তারা তেঁতুল গাছটি নিয়ে গর্ব করে। শত শত মানুষের গর্ব এই তেঁতুল গাছটি এলাকার দেবস্থান হিসেবেও পরিচিত। গাছটিসহ আশপাশ এলাকা দখলে নিতে একটি চক্র ষড়যন্ত্র করে। তবে সর্বশেষ প্রশাসনিক উদ্যোগ চক্রান্তকারীদের কাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্য সফল হতে দেয়নি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেঁতুল গাছটি ঘিরে ইকো পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নির্মাণ পরিকল্পনায় রয়েছে— সুন্দর রাস্তা, আলোর ব্যবস্থাসহ বনায়নের মাধ্যমে সবুজায়ন করে গড়ে তোলা। ইতিমধ্যে গাছটির চারদিক পাকা করে বাঁধানো হয়েছে। সরেজমিন দেখা গেছে প্রাচীন তেঁতুল গাছটি নিয়ে নানা কথা। সুরলা গ্রামের অধীরচন্দ্র বর্মণ (৭০) জানান, তিনি তার নানীর কাছে শুনেছেন তার নানী ১৬ বছর বয়স থেকে এই তেঁতুল গাছটি দেখে আসছেন।

গ্রামের শতায়ু খীর বালা জানান, ‘আমরা ছোটবেলায় শুনেছি এই গাছের বয়স প্রায় ৫০০ বছর।’ গাছের পাশেই বাস করেন কল্পনা প্রামাণিক। দুই ছেলে ও স্বামী নিয়ে তার সংসার। নিজের ঘরবাড়ির মতোই তিনি গাছের নিচ পরম মমতায় প্রতিদিন পরিষ্কার করেন। আগে ওই গাছের গোড়ায় ছিল কালীপূজার থান। এখন গাছের পাশেই একটি ছোট মন্দির করে সেখানেই কালীপূজা করেন স্থানীয় আদিবাসীরা। বৈশাখ থেকে আশ্বিন পর্যন্ত ওই গাছে প্রচুর বক আসে দূরদূরান্ত থেকে। এ ছাড়া বছরের অন্য সময় টিয়া, ঘুঘু, পেঁচাসহ বিভিন্ন পাখি বাস করে। ৩০ বছর আগে ১১৫ বছর বয়সে মারা গেছেন ওই গ্রামের শশী মোড়লের মা বিরো দাসী। তিনি বলতেন, ‘আমার ঠাকুরদাও দেখেছেন গাছটির এমন বিরাট আকার।’ এলাকার প্রবীণ আদিবাসীরা জানান, জমিদার কুঞ্জু মোহন মৈত্রের কাচারি ও খামারবাড়ি ছিল এখানে। আর তেঁতুল গাছের নিচে ছিল বিরাট কালী মন্দির। কালী মন্দিরে বরেন্দ্র অঞ্চলসহ দেশের দূরদূরান্ত থেকে আদিবাসীরা আসতেন পূজা-অর্চনা করতে। জমিদারি উচ্ছেদের পর তেঁতুল গাছসহ কালী মন্দির হিন্দু জনসাধারণের দেবস্থান হিসেবে ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। সুরলা মৌজার সাবেক ৪৬৩ ও হাল ৫০২ দাগের ৮১ শতক জমি এই দেবস্থানের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু ১৯৮১ সালে তত্কালীন মহকুমা প্রশাসন থেকে এলাকার জেকের আলী ও মজিবুর নামে দুই ব্যক্তিকে লিজ প্রদান করা হয়। ’৯৪ সালে সুরলা গ্রামের বিমল কুমার কুণ্ডু এই লিজের বিরুদ্ধে মামলা করেন। সম্প্রতি প্রশাসন লিজটি বাতিল করে এটি সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গাছটির পাশে একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়; যাতে লেখা রয়েছে ‘তেঁতুল গাছটি অতি প্রাচীন’। গাছটি একনজর দেখার জন্য দূরদূরান্ত থেকে লোকজন প্রায়ই আসে সুরলা গ্রামে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর