শনিবার, ২০ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

সবার জন্য নিশ্চিত হবে খাদ্য

আসছে আইন অমান্যে জরিমানা

আরাফাত মুন্না

সরকার সবার জন্য খাদ্য নিশ্চিত করতে আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে ‘খাদ্য নিরাপত্তা আইন-২০১৮’ নামে একটি খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। আইন কমিশন থেকে তৈরি করা খসড়াটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ের হাতে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ ডিসেম্বর আইন কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ও কমিশনের আরেক সদস্য বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর নতুন এই আইনের খসড়া চূড়ান্ত করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় আইনের খসড়াটি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। নতুন এই আইনে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য অন্তঃসত্ত্বা বা দুগ্ধপোষ্য শিশুর মা ও শিশুদের পুষ্টি সহায়তা দিতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। জনগণের খাদ্যের অধিকার নিশ্চিতে সরকারের দায়-দায়িত্বও নির্ধারণ করা হয়েছে। এ খসড়ায় উৎপাদন, মজুদ, আমদানি-রফতানি, পুষ্টিমান নির্ধারণসহ খাদ্যপণ্য সরবরাহ ও মূল্যের স্থিতিশীলতা নিশ্চিতের বিধান রাখা হয়েছে। খাদ্য অধিকার নিশ্চিতে অনিয়ম-দুর্নীতি ও ভোক্তার অধিকার ক্ষুণ্ন হওয়ার মতো অভিযোগ নিষ্পত্তিতে ‘খাদ্য কমিশন’ গঠনের প্রস্তাবও করা হয়েছে।  আইনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে,

সরকারের ওপর অর্পিত সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে সরকার সব সময় আন্তরিক। বাংলাদেশের জনগণের খাদ্য অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার ধারাবাহিকভাবে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে গেলেও এর কোনো আইনি কাঠামো নেই। আইনি কাঠামোর অনুপস্থিতিতে খাদ্য অধিকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একদিকে যেমন কার্যক্রম পরিচালনায় স্থায়িত্বের নিশ্চয়তা নিয়ে ঝুঁকি থেকে যায়, তেমনি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাও ব্যাহত হয়। তাই একটি আইনি কাঠামো সৃষ্টি করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক বলেন, কোনো নাগরিককে যেন না খেয়ে থাকতে না হয়, আর খাদ্যের অভাবে অপুষ্টিতে ভুগতে না হয়— সেই নিশ্চয়তার জন্যই আইনটি করা প্রয়োজন। খসড়া আইনে একটি সমন্বিত খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়েছে। আশা করি, সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। খসড়া পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, নতুন এই আইনটিকে ১২টি অধ্যায়ে বিভক্ত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এতে ৫৩টি ধারা রয়েছে। আইনের দ্বিতীয় অধ্যায়ে একটি জাতীয় খাদ্য পরিকল্পনা গ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। যার আওতায় সরকার বিভিন্ন মেয়াদে খাদ্য উৎপাদন, মজুদ, আমদানি-রফতানি, পুষ্টিমান নির্ধারণ, সরবরাহ, পণ্যের মূল্য স্থিতিশীলতা ও বিতরণের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে। জাতীয় পরিকল্পনার মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করা হলে একটি সুষ্ঠু খাদ্য ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব বলেও মন্তব্য করা হয়েছে সুপারিশমালায়।

জাতীয়ভাবে খাদ্য মজুদের বিধান যুক্ত করা হয়েছে আইনের তৃতীয় অধ্যায়ে। চতুর্থ অধ্যায়ে খাদ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলো যুক্ত করা হয়েছে। এই অধ্যায়ের ৯ ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের আওতায় অন্তঃসত্ত্বা বা দুগ্ধপোষ্য শিশুর মাতা গর্ভকালীন এবং সন্তান জন্মের এক বছর পর্যন্ত বিনামূল্যে পুষ্টিমান বজায় রাখতে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের মাধ্যমে খাদ্যপ্রাপ্ত হবেন। অবশ্য তাদের মধ্যে যদি কেউ সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত কোনো প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী চাকরিতে কর্মরত থাকেন, তাহলে তিনি সুবিধাপ্রাপ্ত হবেন না। আর ১০ ধারায় শিশুদের পুষ্টি সহায়তার বিষয়ে বলা হয়েছে, যথাযথ পুষ্টিমান বজায় রাখার জন্য ১৪ বছর পর্যন্ত প্রতিটি শিশু ছয় মাস থেকে সুষম খাদ্যপ্রাপ্ত হবে। এ ক্ষেত্রে অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের পুষ্টিমান অর্জনের জন্য প্রতিটি বিদ্যালয় এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে গরম ও সতেজ খাবার তৈরির ব্যবস্থাসহ বিশুদ্ধ পানি ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক শৌচাগারের ব্যবস্থা সরকার নিশ্চিত করবে। পাশাপাশি ক্ষেত্রবিশেষে সরকার বিধিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা ভাতা প্রদান করবে।

প্রস্তাবিত আইনের পঞ্চম ধারায়, ক্ষেত্রবিশেষ খাদ্য নিরাপত্তা ভাতার বিধান রাখা হয়েছে। যার ফলে ভাতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি নিজ পছন্দ অনুযায়ী খাদ্য সংগ্রহের স্বাধীনতা থাকবে। আইনের ষষ্ঠ অধ্যায়ে দেশব্যাপী একটি অর্থনৈতিক জরিপ পরিচালনা করে খাদ্য সহায়তা যোগ্য পরিবার ও ব্যক্তি চিহ্নিত করার বিধান রাখা হয়েছে। এই জরিপের মাধ্যমে প্রাপ্ত তালিকা অনুসারে কর্মসূচি গ্রহণ এবং নিয়মিত সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন করা সহজতর হবে।

সরকারি সরবরাহ সংক্রান্ত বিধানগুলো যুক্ত করা হয়েছে আইনের সপ্তম অধ্যায়ে। এই অধ্যায়ে নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে রেশন কার্ড বা খাদ্য কুপন পরিবারের নারী সদস্যদের নামে প্রদানের বিধান রাখা হয়েছে। আইনে অষ্টম অধ্যায়ে খাদ্য নিরাপত্তায় সরকারে দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ করা হয়েছে। এই অধ্যায়ে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে মিল রেখে ‘খাদ্য প্রাপ্যতা’, ‘খাদ্য ও খাদ্যশস্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ’ এবং ‘ভোক্তা পর্যায়ে খাদ্যের মান নিশ্চিতকরণ’ এর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এই আইনের প্রয়োগের কারণে কোনো ব্যক্তি সংক্ষুব্ধ হলে তার জন্য প্রতিকারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে নবম অধ্যায়ে। দশম অধ্যায়ে এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য একটি জাতীয় খাদ্য কমিশন প্রতিষ্ঠার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। কমিশন সম্পর্কে এই অধ্যায়ে বলা হয়েছে, একজন চেয়ারম্যান ও দুজন সদস্য এবং ন্যূনতম যুগ্ম-সচিব পদমর্যাদার একজন ব্যক্তিকে নিয়ে এ কমিশন গঠন করা হবে। তবে তাদের মধ্যে অবশ্যই একজন নারী রাখতে হবে। কমিশনের প্রধান কার্যালয় হবে ঢাকায়। এ ছাড়া দেশের প্রতিটি বিভাগ, জেলা ও উপজেলায়ও কমিশনের স্থানীয় কার্যালয় স্থাপন করতে আইনে বিধান রাখা হয়েছে। আইনের ৪০ ধারায় কমিশনের কার্যক্রম সম্পর্কে বলা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর