সোমবার, ২২ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

বাড্ডায় ব্যবসায়ী মনজিলের খুনি শনাক্ত বান্ধবী সাক্ষী

মাহবুব মমতাজী

রাজধানীর বাড্ডায় ব্যবসায়ী মনজিল হকের খুনিকে পুলিশ শনাক্ত করতে পেরেছে, কিন্তু গ্রেফতার করতে পারেনি। এ খুনে মনজিলের সৎ ভাই ইয়াসিনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। নেপথ্যে কাজ করেছে পৈতৃক সম্পদ নিয়ে বিরোধ। ঘটনার রাজসাক্ষী করা হচ্ছে মনজিলের বান্ধবী শারমিন আক্তার নিশিকে। মামলার বাদী মনজিলের চাচা ফারুক মিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ইয়াসিনের সম্পৃক্ততার কথা তিনি পুলিশের কাছে শুনেছেন। তবে তাদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার হোমনায় থাকা সম্পদ নিয়ে বিরোধের জেরে এ খুনের ঘটনা ঘটতে পারে বলে তারও সন্দেহ। মনজিলের বাবার বিপুল পরিমাণ সম্পদ দেখভাল করেন তার চাচাতো ভাইয়েরা। সেসবের খোঁজখবর রাখতেন মনজিল। গত ১১ ডিসেম্বর বাড্ডার আফতাবনগরে নিজ ফ্ল্যাটে খুন হন তরুণ ব্যবসায়ী মনজিল হক। এ ঘটনায় প্রথমে বাড়ির নিরাপত্তা কর্মী সিয়ামকে আটক করে পুলিশ। জড়িত সন্দেহে মনজিলের বান্ধবী শারমিন আক্তার নিশিকে বনশ্রী এলাকা থেকে আটকের পর সিয়ামকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তার আগে ঘটনাস্থল থেকে দুটি রক্তমাখা ছুরি ও চার সেট কালো পোশাক উদ্ধার করা হয়। ওই দিনই মনজিলের চাচা ফারুক মিয়া অজ্ঞাত চারজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। মামলাটি বাড্ডা থানা পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্ত শুরু করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এদিকে নিশিকে কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয় পুলিশ। এ বিষয়ে বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াজেদ আলী জানান, দেড় সপ্তাহের মধ্যেই ঘটনার মূল রহস্য উন্মোচন করা হবে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, স্ত্রীর সঙ্গে মনজিলের তালাক হওয়ার পর তার বাসায় আসা-যাওয়া ছিল নিশির। ঘটনার দিনও তিনি তার বাসায় যান। খুনের পর খুনিদের বেরিয়ে যেতেও দেখেন তিনি। তাকে ঘটনার কোনো কিছু কাউকে না জানাতে হুমকিও দেয় খুনিরা। তবে তাদের একজনকে তিনি চিনে ফেলেন। কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও ভয়ে তিনি কোনো কিছু বলতে রাজি হননি। একপর্যায়ে তারই দেওয়া তথ্যে খুনে জড়িত ইয়াসিনকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করে ডিবি পুলিশ। হত্যাকাণ্ডে যে চার যুবক অংশ নিয়েছিল তাদের একজন ইয়াসিন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাকিরা পেশাদার খুনি। ওই সময় ইয়াসিনও মারাত্মক আহত হতে পারে। কারণ আত্মরক্ষার্থে মনজিল নিজেও ইয়াসিনকে ছুরিকাঘাত করতে পারেন। এদিকে মনজিল খুনের পর থেকে ইয়াসিনের কোনো খোঁজ জানেন না তার পরিবার। বাড়ির নিরাপত্তা কর্মী হারুন মিয়া জানান, সকাল ৯টার দিকে তিনি ডিউটি শেষ করে বাসায় চলে যান। তখন ডিউটিতে ছিলেন সিয়াম। দুপুর ১২টার দিকে সিয়াম তাকে ফোন করে বাসায় খুনের বিষয়টি জানান। মনজিলের বাসায় প্রবেশের ৩০ মিনিটের মধ্যে চারজন লোক সিয়ামের সামনে দিয়ে বেরিয়ে যায়। পুলিশ জানায়, লাশ উদ্ধারের সময় মনজিলের গলায় গভীর ক্ষতের চিহ্ন ছাড়াও তার দুই হাতের রগ কাটা দেখা যায়। হয়তো দুই পা দড়ি দিয়ে বেঁধে ফ্ল্যাটের ডাইনিং রুমের মেঝেতে নিয়ে তাকে হত্যা করে ঘাতকরা। ড্রয়িং রুমের ফ্লোরের কার্পেট দিয়ে জড়ানো অবস্থায় মনজিলের লাশ পড়ে ছিল। তখনো রক্তে ফ্লোর ভেজা ছিল। ঘাতকদের পরণে ছিল কালো জিন্স প্যান্ট ও কালো টি-শার্ট। আধা ঘণ্টার মধ্যে কিলিং মিশন শেষ করার পর চার ঘাতক কালো পোশাক পাল্টে সেখান থেকে বেরিয়ে যায়। তিনটি বেডরুম, ড্রয়িং-ডাইনিংসহ ফ্ল্যাটটিতে মনজিল একাই থাকতেন। ওই বাসায় মনজিলের একাধিক বান্ধবীর আনাগোনা ছিল। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মনজিল প্রায় পাঁচ বছর আগে একটা বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু বিয়ের কয়েক মাস পরই ওই স্ত্রীকে তালাক দেন। ছয় মাস আগে মনজিলের বাবা মাইনুল হক মারা যান। তার বাবার দুই বিয়ে। মনজিল ছিলেন প্রথম স্ত্রীর একমাত্র সন্তান। দ্বিতীয় স্ত্রীর এক ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে। মনজিলের বাবা মারা যাওয়ার আগে দুটি ফ্ল্যাট কিনে একটিতে মনজিলকে থাকতে দেন।

সর্বশেষ খবর