সোমবার, ২২ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

হালদায় কেন মরছে ডলফিন

প্রতিদিন ডেস্ক

হালদায় কেন মরছে ডলফিন

চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক মত্স্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে নিয়মিত বিরতিতে মারা যাচ্ছে বিপন্ন প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী ডলফিন। গত ২৫ দিনে চারটি মৃত ডলফিন ভেসে উঠেছে হালদা নদী ও সংলগ্ন খালে। তিন মাসে মারা গেছে মোট ১৬টি ডলফিন। খবর : বিডিনিউজের। মত্স্যজীবী ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়মিত ডলফিন মারা যাওয়ার এ চিত্র ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’। ধারণা করা হচ্ছে, নদীতে চলাচলকারী বালু উত্তোলনকারী ড্রেজারের আঘাতেই এসব ডলফিন মারা যাচ্ছে। ডলফিনের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে জেলা মত্স্য অফিসের কর্মকর্তারাও মাঠে নেমেছেন। গত শনিবার সকালে হালদা নদী সংলগ্ন গড়দুয়ারা ইউনিয়নের গচ্ছাখালী খালের কান্তর আলী চৌধুরীহাট বাজারের সেতুর নিচে একটি মৃত ডলফিন ভেসে ওঠে। এটি প্রায় ছয় ফুট দৈর্ঘ্যের, ওজন ৭০ কেজির মতো। স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে বিকালে মত্স্য কর্মকর্তারা সেখানে গেলেও জোয়ারের পানিতে মৃত ডলফিনটি সরে যাওয়ায় সেটি উদ্ধার করতে পারেননি।

হালদা পাড়ের মত্স্যজীবী কামাল সওদাগর বলেন, মারা যাওয়া ডলফিনে জখমের চিহ্ন ছিল। হাটহাজারী উপজেলা মত্স্য কর্মকর্তা আজহারুল আলম বলেন, শনিবার মাথায় আঘাত পেয়ে মারা যাওয়া সাত কেজি ওজনের একটি বোয়াল মাছ নদী থেকে উদ্ধার করেছেন তারা। কয়েকদিনে চারটি ডলফিন মারা যাওয়ার তথ্য আমাদের কাছে আছে। এগুলোকে মৃত এবং ফোলা অবস্থায় দেখেছি। নদীতে ড্রেজার চলাচল বন্ধের সুপারিশ আগেই আমরা করেছিলাম। জেলা মত্স্য কর্মকর্তা মো. মমিনুল হক বলেন, ‘ড্রেজারের কারণেই ডলফিন মারা যাচ্ছে কি না, সেটা এখনই বলতে পারছি না। হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলা মত্স্য কর্মকর্তাকে নিয়ে আগামী দুই দিন নদীতে ঘুরে আমরা এর কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা করব। তারপর বলতে পারব, কেন ডলফিন মারা পড়ছে।’

এর আগে ২৭ ডিসেম্বর গচ্ছাখালী খালের মাস্টার বাড়ি কালভার্টের নিচে, ২ জানুয়ারি গড়দুয়ারা স্লুইস গেট এলাকায় এবং ৫ জানুয়ারি গচ্ছাখালী খালে আরও তিনটি মৃত ডলফিন ভেসে ওঠে। হালদা বিশেষজ্ঞ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, তিন মাসে ১৬টি ডলফিনের মৃত্যুর তথ্য তিনি পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ডলফিনের মৃত্যুর প্রধান কারণ বালু উত্তোলনকারী ড্রেজারের প্রপেলারের আঘাত। গচ্ছাখালী খাল ধরে হালদায় ড্রেজার চলাচল করে। এখানেই প্রপেলারের আঘাতে ডলফিন আহত হয় এবং পরে মৃত অবস্থায় ভেসে ওঠে।’ এই প্রাণী গবেষক বলেন, ‘এদের চোখ নেই। মূলত ইকো সাউন্ড দিয়ে এরা চলাফেরা ও খাবার সন্ধান করে। এদের শরীরের গঠনও নরম প্রকৃতির। ড্রেজারের প্রপেলার বা অন্য কোনো অংশের আঘাত এরা সহ্য করতে পারে না।’ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটর মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, হালদায় ২০০টির মতো ডলফিন আছে। এর মধ্যে ১৬টি মারা গেল। আগে একসময় কর্ণফুলীতে নিয়মিত ডলফিন দেখা যেত। এখন দেখা যায় না বললেই চলে। এ অবস্থা চলতে থাকলে হালদাও ডলফিনশূন্য হয়ে যাবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর