মঙ্গলবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

সংসদীয় আসনের সীমানা খসড়া ফেব্রুয়ারিতে

গোলাম রাব্বানী

একাদশ সংসদ নির্বাচনের সংসদীয় আসনের সীমানার খসড়া ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রকাশ করতে চায় নির্বাচন কমিশন। এ লক্ষ্যে ‘সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত কমিটি’র আহ্বায়ক নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম ইতিমধ্যে পরামর্শক ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। এক্ষেত্রে আসনের জনসংখ্যার ভারসাম্য, প্রশাসনিক সুবিধা এবং ভৌগোলিক অখণ্ডতার বিষয় বিবেচনা করেই এসব আসনে সীমানায় পরিবর্তন আনা হবে বলে জানান ইসির কর্মকর্তারা। ইসি সচিবালয় কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার অন্তত ছয় মাস আগেই সীমানা নির্ধারণের গেজেট প্রকাশ করতে হয়। আর ফেব্রুয়ারির মধ্যে খসড়া প্রকাশের প্রস্তুতি চলছে। এজন্য বিদ্যমান আইন সংসদীয় আসনের সীমানা সংক্রান্ত কাজ শেষ করছে কমিশন। 

এর আগে ১৯৭৬ সালের সীমানা পুনর্নির্ধারণ অধ্যাদেশের আলোকেই সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাস করা হয়। তবে কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশনের কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়, ‘দ্য ডিলিমিটেশন অব কনস্টিটিউয়েন্সিস অর্ডিনেন্স ১৯৭৬’ রহিত করে ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন, ২০১৭’ এর খসড়া চূড়ান্ত করা হবে। তবে আইন তৈরি কাজে তেমন কোনো অগ্রগতি না থাকায় বিদ্যমান অধ্যাদেশ দিয়ে সীমানা নির্ধারণের কাজ করছে কমিশন।

এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা রবিবার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিদ্যমান অধ্যাদেশের আলোকেই সীমানা পুনর্বিন্যাস করা হবে। ফেব্রুয়ারির মধ্যে খসড়া প্রকাশ হতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। সিইসি বলেন, ছিটমহল ও নতুন প্রশাসনিক এলাকার কারণে ৫০-৬০টা আসনে সীমানা পরিবর্তন আসতে পারে। এ ছাড়া সীমানা সংক্রান্ত বৈঠকের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেছেন, মূল কাজ শুরু হয়েছে। আমরা বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করছি।

জানা গেছে, বিগত ২০১৩ সালের সীমানা নির্ধারণের সময় যেসব আসনের প্রশাসনিক অখণ্ডতা বজায় রাখা হয়নি বা ভৌগোলিক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে এমন আসনগুলোতে এবার পরিবর্তন আনতে চাইছে ইসি। অভিযোগ রয়েছে, এর আগে ২০১৩ সালে সীমানা নির্ধারণের সময় অনেক আসনে জনসংখ্যার বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়নি। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, অনেক আসনের সীমানা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য রয়ে গেছে কুমিল্লা-১০ আসনের সীমানা। এ আসনের সীমানা শুরু হয়েছে ফেনী জেলার দাগনভূইয়া থেকে আর শেষ হয়েছে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার কোটবাড়ীতে এসে।

৫০-৬০ আসনে পরিবর্তনের সম্ভাবনা : সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পাঁচ বছরে নতুন উপজেলা, পৌরসভাসহ সিটি করপোরেশন ও ইউনিয়ন পরিষদে কিছু প্রশাসনিক এলাকা যুক্ত হয়েছে। কোথাও কোথাও ভাঙনও হয়েছে। আবার ছিটমহল বিলুপ্ত হয়েছে। সেক্ষেত্রে সংসদীয় আসনে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। ইসির সীমানা পুনর্নিধারণ সংক্রান্ত কমিটির একজন সদস্য বলেন, এখন পর্যন্ত বড় পরিসরে সংসদীয় আসনের ব্যাপক পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখছি না। কিছু এলাকায় ছোটোখাটো পরিবর্তন আসবে। নতুন আদমশুমারি প্রতিবেদনও নেই। তাই আইনি বাধ্যবাধকতা মেনে নতুন এলাকাগুলোকে যুক্ত করে হয়ত ৫০-৬০টি  সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাস করতে হবে। এর আগে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ৫০টি সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তন করেছে। ওই সময় ১৭ শতাংশ আসনের সীমানা পরিবর্তন করা হয়। নির্বাচন কমিশন ৮৭টি আসনে পরিবর্তনের প্রস্তাব করেছিল। পরে ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৫০টির আসন সীমানা নবম সংসদের মতোই রাখা হয়েছে। ইসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, ২০০৮ সালের সীমানা নির্ধারণে যেসব আসনে প্রশাসনিক অখণ্ডতা রক্ষিত হয়নি বা ভৌগোলিক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল সে রকম ৫০টি আসনে ২০১৩ সালে পরিবর্তন আনা হয়েছে। পাশাপাশি ঢাকার সংসদীয় আসনের বেশির ভাগেই ২০০৮ সালের সীমানা বহাল রাখা হয়েছিল। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলায় নানা জটিলতা আছে এমন কিছু আসনে সীমানায় আংশিক পরিবর্তন করা হয়েছে। ২০০৮ সালে ব্যাপক সীমানা বিন্যাস হওয়ায় ২০১৩ সালে বড় কোনো বিভাজন করা হয়নি। সীমানা নির্ধারণ অধ্যাদেশ-১৯৭৬ অনুযায়ী প্রশাসনিক সুবিধা, ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে ৫০ আসনে পরিবর্তন করা হয়।

সর্বশেষ খবর