বৃহস্পতিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

জাবি ছাত্র জুবায়ের হত্যায় পাঁচজনের ফাঁসি বহাল

চারজনকে খালাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ হত্যা মামলায় পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড ও দুজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখেছে হাই কোর্ট। এ ছাড়া চারজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শেষে গতকাল বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ এবং বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেয়। হাই কোর্টে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ছাত্র খন্দকার আশিকুল            ইসলাম আশিক, খান মোহাম্মদ রইছ ও জাহিদ হাসান, দর্শন বিভাগের ছাত্র মো. রাশেদুল ইসলাম রাজু এবং সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ছাত্র মাহবুব আকরামের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে রাশেদুল ইসলাম রাজু ছাড়া বাকি চারজন পলাতক। এ ছাড়া দর্শন বিভাগের ছাত্র ইশতিয়াক মেহবুব অরূপ এবং প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র নাজমুস সাকিব তপুকে নিম্ন আদালতের দেওয়া যাবজ্জীবন সাজা বহাল রেখেছে হাই কোর্ট। এদের মধ্যে অরূপ পলাতক।

হাই কোর্টে খালাস পেয়েছেন পরিসংখ্যান বিভাগের ছাত্র শফিউল আলম সেতু ও অভিনন্দন কুণ্ডু অভি এবং দর্শন বিভাগের ছাত্র কামরুজ্জামান সোহাগ ও ইতিহাস বিভাগের ছাত্র মাজহারুল ইসলাম। এ মামলার আসামিরা ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। রায়ে বলা হয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিণতি এই জুবায়ের হত্যাকাণ্ড।

এ ধরনের হত্যাকাণ্ড মানবতা ও নৈতিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। আর এতে ভিকটিম পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। পারিবারিক, সামাজিক ও আর্থিক নানা সমস্যাও পরিবারগুলোকে গ্রাস করে।

 বিশ্ববিদ্যালয়ে পেশিশক্তির জোরে কোনো ধরনের সহিংসতা, নৃশংসতা, নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা, উগ্রতা, বর্বরতা শিক্ষার অনুকূল পরিবেশের ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, এটি কারও কাম্য হতে পারে না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত কোনো হত্যাকাণ্ড বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিচার নিকট অতীতে না হওয়ায় একই ধরনের ঘটনা ঘটছে।  আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ সারওয়ার কাজল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নির্মল কুমার দাস। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী রানা কাউসার। ২ জানুয়ারি হাই কোর্টে এ মামলার শুনানি শুরু হয়। ২৩ জানুয়ারি রায়ের জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু ওইদিন রায় ঘোষণা করা হয়নি। ২০১২ সালের ৮ জানুয়ারি জুবায়ের আহমেদকে কুপিয়ে জখম করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। চিকিৎসাধীন অবস্থায় পর দিন ভোরে জুবায়ের মারা যান। জুবায়ের পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মদিনাবাগ নাবলাপাড়া গ্রামের তোফায়েল আহমেদের ছেলে। এ ঘটনায় ৯ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার হামিদুর রহমান বাদী হয়ে খন্দকার আশিকুল ইসলাম আশিক, রাশেদুল ইসলাম ও খান মো. রইসের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে আশুলিয়া থানায় মামলা করেন। ঢাকার ৪ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ বি এম নিজামুল হক ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মামলার রায় ঘোষণা করেন।

 তিনজেলায় ৯ জনের ফাঁসি : হত্যা মামলায় আদালত পৃথক পৃথক রায়ে গতকাল কুমিল্লা, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে মোট ৯ জনকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- কুমিল্লা : ১০০ টাকা চুরির সন্দেহে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে দুই সহোদর ভাইকে শ্বাসরোধে হত্যার দায়ে একজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। গতকাল কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৪র্থ আদালতের বিচারক নূর নাহার বেগম শিউলী এ আদেশ দেন।  মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হলেন কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার হেসিয়ারা গ্রামের আবুল হাসেমের ছেলে শেখ ফরিদ (২৮)। চৌদ্দগ্রামের বিজয়পুর গ্রামস্থ রাজার মার দীঘির পাহারাদার ছিলেন আসামি শেখ ফরিদ। নিহতদের বাবা ছেরু মিয়া শেখ ফরিদের সঙ্গে পাহারাদারের কাজ করতেন। রাষ্ট্রপক্ষে ১১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ঘাতক শেখ ফরিদকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রদান করে আদালত। রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৪র্থ আদালতের অতিরিক্ত পি.পি অ্যাডভোকেট রাজ্জাকুল ইসলাম খসরু এবং আসামি পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট শামীম আরা শিমু। হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে কৃষক হত্যা মামলায় ৭ জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছে আদালত। গতকাল বিকালে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মাফরোজা পারভীনের আদালত এ রায় দেয়। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা সবাই পলাতক ছিলেন। দণ্ডপ্রাপ্তরা হচ্ছেন নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের দাউদপুর গ্রামের মর্তুজ মিয়া, ফয়ছল মিয়া, ফজলু মিয়া, ময়নুল মিয়া, শিফা বেগম, সুন্দর মিয়া ও বশির মিয়া। মামলায় ২২ জন সাক্ষির মধ্যে ১৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে এ রায় দেওয়া হয়েছে। বাদি ছাদিক মিয়া জানান, রায়ে তিনি সন্তুষ্ট। তিনি সবার ফাঁসি দ্রুত কার্যকরের দাবি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল আহাদ ফারুক। তিনিও রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারে তীর ছুড়ে হত্যার অভিযোগে প্রধান আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত। অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে ছয়জনকে খালাস ও একজন মারা যাওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। গতকাল দুপুরে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম এই মামলার রায় প্রদান করেন। জানা গেছে, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ২০০৫ সালের ১৫ অক্টোবর কমলগঞ্জ উপজেলার কাটাবিল গ্রামের মৃত মিছির মিয়ার ছেলে মদরিছ মিয়াকে প্রতিপক্ষ আসিদ মিয়া ও তার সহযোগীরা তীর ছুড়ে হত্যা করেন। এ ঘটনায় মদরিছ মিয়ার ছেলে ইদ্রিস মিয়া বাদী হয়ে ৮ জনকে আসামি করে কমলগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ১৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে রায় প্রদান করে আদালত। ১৫ জনের কারাদণ্ড : চট্টগ্রাম থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান,  চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় চাঞ্চল্যকর ট্রিপল মার্ডার মামলায় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানসহ ১৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। গতকাল চট্টগ্রামের জননিরাপত্তা ট্রাইব্যুনালের বিচারক বিশেষ জজ সৈয়দা হোসনে আরা এই রায় দেন। দণ্ডিত ১৫ জনের মধ্যে চারজন নজির আহমদ, আবদুস শুক্কুর, আজম খান ও জামালকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছে আদালত। ফিরোজ নামে এক আসামিকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সাতকানিয়া উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান রমজান আলীসহ ১০ জনকে ৬ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বাকি ৯ জন হলেন, সাহাব মিয়া, সিরাজুল হক, নূরুল আলম, ইয়াকুব, মহসিন, মোজাহের, লোকমান, ইমাম হোসেন ও ইলিয়াছ। ট্রাইব্যুনালের পিপি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘মামলার বাদি সিদ্দিকের স্ত্রীসহ ১৩ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। এছাড়া তিনজন আসামি ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১০ জন আসামি পলাতক আছেন। নজির আহমদ মারা গেছেন। বাকি চারজন রায় ঘোষণার সময় হাজির ছিলেন।’

সর্বশেষ খবর