শিরোনাম
শনিবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

ছুটির দিনে মানুষের ঢল বাণিজ্য মেলায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছুটির দিনে মানুষের ঢল বাণিজ্য মেলায়

মৃদু বাতাস আর মিষ্টি রোদ গায়ে মেখে সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটছেন নগরবাসী। পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের হাতেই রয়েছে কেনাকাটার আলাদা তালিকা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে মানুষের ভিড়। বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতেই ভিড় পরিণত হয় জনসমুদ্রে। গতকাল আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার শেষ ছুটির দিনের দৃশ্য ছিল এমনই।

দুপুর ১২টার দিকে মেলার প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে ১৫-২০ মিনিটে সরাসরি ছবি আঁকা হয় এমন একটি লেখা। এগিয়ে যেতেই দেখা যায়, বিভিন্ন বয়সের মানুষ স্থির হয়ে বসে অপলক তাকিয়ে আছে সামনের দিকে আর চিত্রকর অতিদ্রুত নিখুঁত তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলছেন অবিকল মুখশ্রী। মেলায় এসে ছবি আঁকার অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাইলে চিত্রকর আরিফ জানান, ‘বিগত পাঁচ বছর ধরে আমি মেলায় ছবি আঁকছি। সারা বছর ধরে যে পরিমাণ ছবি আঁকার ডাক পাই তার চাইতে এক শুক্রবারেই বেশি ছবি আঁকা হয়। আর লাভটাও থাকে অনেক বেশি। প্রতিটি ছবি ৩০০ টাকা করে নেই আমরা। সরেজমিন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন রকমের স্টলে সুসজ্জিত মেলা কেন্দ্র। রাজধানীতে শীতের আঁচ থাকায় মেলায় কাশ্মীরি শাল আর ছেলেদের মোদি কোর্ট ও ব্লেজারের দোকানে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। মেয়েদের সিঙ্গেল হালকা ডিজাইনের শালগুলো মেলায় ২০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে আর বেশি নকশা এবং ডাবল শালগুলো ৬০০ টাকা থেকে শুরু করে কাপড়ের মান এবং নকশার ভিন্নতায় রয়েছে বিভিন্ন দাম। মেলায় কেনাকাটা করতে আসা গুলিস্তানের বাসিন্দা মেহেরুন্নেসা বলেন, ‘শালের শো-রুমে যে দামে কিনে থাকি মেলায় তার চেয়ে দাম কিছুটা কম। আর অনেক স্টল থাকায় দোকান ঘুরে ঘুরে কিনতে পারছি পছন্দ মতো জিনিস। ক্রেতার পাশাপাশি কথা হয় কাশ্মির শাল ঘরের বিক্রেতা হৃদয়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, মেলায় বিক্রির পরিমাণ বেশি থাকায় দাম একটু কম রাখলেও আমাদের পুষিয়ে যায়। আর অন্য দোকানগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকতে আমরা চেষ্টা করছি খুব কম দামে নিজেদের পণ্য ক্রেতার হাতে পৌঁছে দিতে। কিন্তু মেলার প্রথম দিকে একদমই বেচাবিক্রি হয়নি। মেলা আরও কয়েকদিন বাড়ালে ভালো হয়। মেলায় ছেলেদের পোশাকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে মোদি কোর্ট এবং ব্লেজার। টাচ পয়েন্টের বিক্রেতা মুন্না বলেন, আমরা ১২০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত কোর্টগুলো বিক্রি করছি আর কাপড়ের মানের ওপর নির্ভর করে ১৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ব্লেজার রয়েছে বিভিন্ন দামের। আর মেলার কারণে ক্রেতাদের জন্য পণ্যের পাশাপাশি বিভিন্ন উপহারের ব্যবস্থা করেছে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো। মেলায় কেনাকাটা করতে আসা ইশতিয়াক হাসান বলেন, মেলার প্রথম দিকে এসে দুটি ব্লেজার পছন্দ হয়েছিল। কিন্তু দাম বেশি চাওয়ায় কিনতে পারিনি। মেলা শেষ দিকে চলে আসায় ১৫০০ টাকার ব্লেজার এখন ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এজন্য দুটোই কিনে নিয়ে গেলাম। মেলায় শিশুদের স্টলগুলোতে হৈ-হুল্লোড় ছিল সবচেয়ে বেশি। বিভিন্ন রকমের খেলনায় আগ্রহ দেখা যায় শিশুদের। কেউ কিনছে রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি কেউবা প্লেন। আর পুতুল-পাণ্ডা এগুলোতো রয়েছেই। এছাড়াও প্রযুক্তির সমন্বয়ে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান শিশুদের জন্য নিয়ে এসেছে বিভিন্ন ফিচার সমৃদ্ধ খেলনা। এবারের মেলায় রিমোট কন্ট্রোল ছোট রোবটগুলোর ওপর শিশুদের ঝোঁক বেশি বলে জানান বিক্রেতারা। শুধু খেলনায় নয় শিশুদের জন্য আলাদা খেলার ব্যবস্থাও করেছে মেলার আয়োজকবৃন্দ। সেখানে ট্রয় ট্রেন থেকে শুরু করে রয়েছে নাগরদোলা, নৌকা আরও বিভিন্ন রকমের খেলার সরঞ্জাম। মেলায় বিদেশি পণ্যের পাশাপাশি দেশি পণ্যও জাঁকিয়ে বসেছে নিজেদের প্রসার। মেলায় পাট পণ্যের স্টলে গিয়ে দেখা যায় ক্রেতাদের বেশ ভিড়। অধিকাংশ ক্রেতার ঝোঁক পাটের তৈরি রকমারি আকারের ব্যাগের প্রতি। মেলায় কেনাকাটা করতে আসা পল্লবীর বাসিন্দা নিলুফার বেগম বলেন, আমাদের দেশি প্রতিষ্ঠানের পণ্য এখন অনেক বেশি মানসম্মত। বিভিন্ন রকমের পণ্য একসঙ্গে পাওয়া যাওয়ায় সবার প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো মেলা থেকেই কিনে নিচ্ছি। আর আবহাওয়া ভালো থাকায় কেনাকাটা করে স্বস্তি পাচ্ছি।

সর্বশেষ খবর