সোমবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

দরজায় কড়া নাড়ছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা

মোস্তফা মতিহার

দরজায় কড়া নাড়ছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা

দরজায় কড়া নাড়ছে ফেব্রুয়ারি। চার দিন পরই প্রকৃতির নিস্তব্ধতা ভেঙে জেগে উঠবে স্বাধীনতার স্মৃতিবিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসবেন দোকানিরা আর লেখক ও পাঠকদের সমাগমে মিলনমেলায় পরিণত হবে এ উদ্যানটি। বর্তমানে উদ্যানজুড়েই সুনসান নীরবতা। তবে এ নীরবতার মাঝেও হাতুড়ি-বাটালের টুংটুং শব্দে মুখরিত উদ্যান জানান দিচ্ছে মেলা আসছে। স্টল ও প্যাভিলিয়ন নির্মাণে শ্রমিকদের ব্যস্ততা ও প্রকাশকদের তত্ত্বাবধান যেন অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে স্বাগত জানানোরই আয়োজন। মেলাপ্রাঙ্গণের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশে গিয়ে লক্ষ্য করা গেছে কেউ বাঁশ কাটছেন, কেউ বা বোর্ড বানাচ্ছেন আবার কেউ ডিজাইন বাস্তবায়নে ব্যস্ত। স্টল ও প্যাভিলিয়নে বৈচিত্র্য ও নান্দনিকতা আনতে রীতিমতো একটা প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা গেছে সমগ্র সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। গতকাল বিকালে সরেজমিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এমন চিত্রই লক্ষণীয় ছিল। অন্যান্য বছরের চেয়ে দেরিতে লটারি সম্পন্ন হওয়ায় স্টল ও প্যাভিলিয়নের নির্মাণে প্রকাশক ও প্রকাশনের দায়িত্বরতরা হিমশিম খাচ্ছেন। সময় প্রকাশনের প্যাভিলিয়নের নির্মাণ তত্ত্বাবধানরত আনিসুর রহমান বলেন, ‘২৩ জানুয়ারি লটারি হওয়ায় ২৪ জানুয়ারি আমরা প্যাভিলিয়ন নির্মাণের কাজ শুরু করেছি। খুব কম সময়ে এটি করতে খুব হিমশিম খাচ্ছি। ২০ জানুয়ারির মধ্যে গ্রন্থমেলার লটারির আয়োজন করতে পারলে ১০ দিন হাতে রেখে কাজ করা যেত।’ আনিসুর রহমান আরও জানান, বইমেলার প্রথম দিন থেকেই সময় প্রকাশনে পাওয়া যাবে জনপ্রিয় লেখক জাফর ইকবালের সায়েন্সফিকশনবিষয়ক নতুন বই। থাকবে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের লেখা ‘বেলা অবেলা সারাবেলা’ বইয়ের চতুর্থ খণ্ড। এই প্রকাশন থেকে এ বছর অর্থমন্ত্রীর নতুন বই ‘সংকট ও সুযোগ’ প্রকাশিত হবে বলেও জানালেন তিনি।

মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. জালাল আহমেদ জানান, প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান, স্টল, প্যাভিলিয়নের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ এবারের মেলার পরিসরও বাড়ানো হয়েছে। তিনি জানান, ৬৭৬টি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এবার ৬০০ ইউনিটের স্টল থাকবে। গতবারের ৫৪৯টি ইউনিটের স্টলের তুলনায় এবার ৫১টি বেশি ইউনিটের স্টল অংশ নিচ্ছে। এবার সব মিলিয়ে ৩৪০টি প্রকাশনা সংস্থা মেলায় অংশ নিচ্ছে; যার মধ্যে এবারই প্রথমবারের মতো মেলায় অংশ নিতে যাচ্ছে ২১টি প্রকাশনা সংস্থা। যার মধ্যে মেলায় চার ইউনিটের স্টল পেয়েছে ১৮টি প্রকাশনা সংস্থা, তিন ইউনিটের পেয়েছে ৩২টি প্রকাশনা সংস্থা, দুই ইউনিটের পেয়েছে ১১২টি প্রকাশনা সংস্থা এবং এক ইউনিটের স্টল পেয়েছে ১৫৫টি প্রকাশনা সংস্থা। এগুলোর পাশাপাশি শিশু কর্নারে থাকছে ৭১টি প্রকাশনা সংস্থার স্টল। এ ছাড়া গতবারের চেয়ে এবার ১২টি প্যাভিলিয়ন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলা একাডেমির দুটিসহ এবারের গ্রন্থমেলায় মোট ২৫টি প্যাভিলিয়ন থাকবে। অন্যদিকে গতবারের তুলনায় এবার প্যাভিলিয়ন ও স্টলের ভাড়াও বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে প্যাভিলিয়নের ভাড়া বেড়েছে ২০ শতাংশ, চার ইউনিটের স্টলের ভাড়া বেড়েছে ১০ শতাংশ ও তিন ইউনিটের স্টলের ভাড়া বেড়েছে ৫ শতাংশ। তবে এক ও দুই ইউনিটের স্টলের ভাড়া বাড়েনি। লেখক, প্রকাশক, সাংবাদিক ও বয়স্কদের মেলাপ্রাঙ্গণে প্রবেশের জন্য এবারই প্রথমবারের মতো পৃথক প্রবেশদ্বার থাকছে। ড. জালাল আহমেদ আরও জানান, সারা দেশ থেকে আগত পাঠকরা যাতে স্বচ্ছন্দে মেলা ঘুরতে এবং বই কিনতে পারেন তার সব ব্যবস্থাই রাখা হচ্ছে মেলাপ্রাঙ্গণে। এ ছাড়া পাঠকদের জন্য মনোরম সজ্জার পাশাপাশি তাদের বসার স্থান বাড়ানো এবং পর্যাপ্ত ও উন্নতমানের টয়লেটও স্থাপন করা হচ্ছে। এবার মোড়ক উন্মোচনের মঞ্চ আরও দৃষ্টিনন্দন ও বড় করে তৈরি করা হবে। সেই সঙ্গে নতুন বইয়ের স্টলও বড় করা হবে।

বরাবরের মতো এবারও মেলা চলবে বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। সেই সঙ্গে এবার অগ্নিবীমার পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় ও দাঙ্গা-হাঙ্গামাজনিত সৃষ্ট সমস্যাও বীমার আওতায় আনা হচ্ছে। এবারও মেলায় থাকছে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকছে। টিএসসি ও শামসুন্নাহার হল হয়ে শাহবাগ মোড় এবং অন্যদিকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায় থাকবে এবারের মেলাপ্রাঙ্গণ। এ ছাড়া বাংলা একাডেমির অভ্যন্তর ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আটটি আর্চওয়ে বসানো হবে।

১ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৩টায় বাংলা একাডেমিতে অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সর্বশেষ খবর