সোমবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
গোয়েন্দা কাহিনী - ১৪৯

খুনি ছিল আপনজন

মির্জা মেহেদী তমাল

খুনি ছিল আপনজন

প্রতিবন্ধী আরিফ হোসেনকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। দুই পরিবারের মধ্যে ঝগড়ার একপর্যায়ে আরিফকে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা। শ্রীমঙ্গল থানায় আরিফের বাবা আরবেশ আলী বাদী হয়ে ১৮ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। পরে শ্রীমঙ্গল থানা ১৮ জন আসামির মধ্যে ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র পাঠায়। তিনজনের নাম বাদ দেওয়ার কারণে আদালতে নারাজি দেন বাদী। আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কে তদন্তের নির্দেশ দেয়। পিবিআই তদন্ত শুরুর পরেই বেরিয়ে আসে আরিফ হত্যার প্রকৃত কারণ।

ঘটনাটি গত বছরের ২৪ জুন সকালের। শ্রীমঙ্গলের কালাপুর ইউনিয়নের হাজিপুর গ্রামে কাইয়ুমের স্ত্রী সুফিয়া থালাবাসন ধোয়ার জন্য তাদের যৌথ পুকুরে যান। এ নিয়ে সুফিয়ার সঙ্গে পাশের বাড়ির ইয়াকুব মিয়ার চাচা মশ্ববের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ঝগড়া হাতাহাতি ও পরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় রূপ নেয়। এতে উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হন। ইটের আঘাতে আহত হন প্রতিবন্ধী আরিফ। সবাইকে হাসপাতালে নেওয়া হলে ডাক্তার আরিফকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ব্যাপারে থানায় মামলা হয়।

পিবিআই শুরুতেই তিনটি বিষয়কে সামনে রেখে তাদের তদন্ত শুরু করে। কোনো মারামারির ঘটনা ঘটলে একাধিক ব্যক্তি আহত হলে গুরুতর ব্যক্তিকে হাসপাতালে আগে নেওয়া হয়। মৃত আরিফের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত রিপোর্টে তার মাথার পেছনে ও দুই পায়ের গোড়ালির ওপর ধারালো অস্ত্রের আঘাত এবং গলা টিপে শ্বাসরোধে হত্যার বিষয়টি আসে। সেদিনের মারামারিতে ওই পর্যায়ে যায়নি বলে পিবিআই তাদের তদন্তে জানতে   পারে। পিবিআই হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী মামলার ২ নম্বর সাক্ষী ইয়াকুব আলী ও তোফায়েল আহমেদকে গ্রেফতার করে। ইয়াকুব আলীর ভাতিজা হলো আরিফ। তারা আদালতে আরিফকে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়।

পিবিআই তাদের তদন্তে জানতে পারে, ঘটনার দিন দুপুরে ইয়াকুব মিয়া, তার অপর চাচাতো ভাইদের নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে প্রতিবন্ধী ভাতিজা আরিফকে হত্যা করে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর পরিকল্পনা করে। বিকালে আবারও মারামারি শুরু হলে উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হন। লোকজন আহতদের উদ্ধার করে মৌলভীবাজার হাসপাতালে পাঠানো শুরু করে। ঝগড়ার আধা ঘণ্টা পর ঘরের সামনে থাকা প্রতিবন্ধী আরিফ হোসেনকে ইয়াকুব মিয়া একটি বাঁশের টুকরা দিয়ে মাথায় আঘাত করেন। চাচার আঘাতে আরিফ রক্তাক্ত হয়। ইয়াকুবের ভাইয়েরা ধরাধরি করে প্রতিপক্ষ কালামের ঘরের বারান্দায় নিয়ে যায়। পরে ইয়াকুব মিয়া নির্দেশ দেন আরিফকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে হত্যা করার জন্য। পরিকল্পনা অনুযায়ী চাচাতো ভাই জুনায়েদ যায় অটোরিকশা আনতে আর তোফায়েল যায় শ্রীমঙ্গলে। জুনায়েদ আহত আরিফকে নিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশার (মৌলভীবাজার-থ-১২-৩১৪০) চালক শামসুল হককে নিয়ে হাসপাতালের দিকে রওনা হয়। রাত সোয়া ৮টার দিকে জুনায়েদ ফোন দিয়ে তোফায়েলকে দা আনতে বলেন। তোফায়েল দা কিনে শ্রীমঙ্গলের রাজাপুর মেইন রোডে দাঁড়ায়। পরে অটোরিকশা এলে সেটিতে উঠে পড়েন। অটোরিকশা নিয়ে তারা মাজদিহি চা বাগানের ৭ নম্বর সেকশনে যায়। সেখানে আরিফকে নামিয়ে তার পায়ের গোড়ালিতে কোপ দেয়। সে জায়গা নিরাপদ না হওয়ায় তারা আরিফকে নিয়ে গিয়াসনগরের দিকে যায়। একপর্যায়ে আরিফের ঘাড় ও মাথায় কুপিয়ে যখম করে। জোনায়েদ আরিফের মৃত্যু নিশ্চিত করতে গলা চিপে ধরে। এরপর তারা আরিফকে নিয়ে হাসপাতালে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পরের দিন ইয়াকুব মিয়া, জুনায়েদ, বেলাল ও তোফায়েল মিলে প্রতিজ্ঞা করেন, ‘জীবনে মৃত্যু আসতে পারে, ঝগড়াঝাটি হতে পারে আমরা এ খুনের কথা কাউকে বলব না।’ তারা চালক শামসুল হককে ৩ হাজার টাকা দিয়ে এ ঘটনা কাউকে না বলার জন্য বলে। বললে তাকে এ ঘটনায় ফাঁসানো হবে বলে হুঁশিয়ার করে দেয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর