সোমবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

যত বেশি জাল টাকা তত বেশি দণ্ড

আইনের খসড়া করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

জাল টাকা প্রতিরোধে এমন একটি আইন করা হচ্ছে— যে আইনে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে যত বেশি নকল মুদ্রা তৈরি বা সরবরাহের অভিযোগ প্রমাণিত হবে তার দণ্ড হবে তত বেশি। এ ছাড়া একই ব্যক্তি একাধিকবার এই আইনে অপরাধী হলেও দণ্ড বেড়ে যাবে। প্রস্তাবিত জাল নোট প্রতিরোধ আইনের খসড়াটি সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে সর্বনিম্ন দুই বছর থেকে যাবজ্জীবন পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। 

আইন করার উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছে, জাল নোট প্রতিরোধে দেশে পৃথক কোনো আইন নেই। বর্তমানে দণ্ডবিধি-১৮৬০ এর ৪৮৯(ক)-(ঘ) ধারা এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪ এর ২৫(ক) ধারা অনুযায়ী এ সংক্রান্ত অপরাধের বিচার হয়ে থাকে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, বর্তমান অনুসৃত আইনে অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনার ক্ষেত্রে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে। যেমন : জাল নোট সংক্রান্ত মামলার শুনানির নির্ধারিত দিনে সাক্ষী প্রায় ক্ষেত্রেই উপস্থিত না থাকায় মামলার কার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়া, জাল নোটের বাহক অনেক ক্ষেত্রে নিরপরাধ হওয়া এবং জাল নোটের সংখ্যা মাত্র কয়েক পিস হওয়া সত্ত্বেও অনেক ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তি ভোগ করা এবং জাল নোট প্রতিরোধে সমন্বিত কার্যক্রম না থাকা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় এনেই এ সংক্রান্ত একটি পৃথক আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টম্যান্ট অব কারেন্সি ম্যানেজমেন্টের মহাব্যবস্থাপক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জাল নোট প্রচলন প্রতিরোধ সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়, সিআইডি, এনএসআই ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধির সমন্বয়ে ৬ সদস্যের একটি উপকমিটি করা হয় ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে। ওই কমিটি দীর্ঘ প্রায় এক বছর ধরে যাচাই-বাছাই শেষে আইনের খসড়া প্রণয়ন করেছে। পূর্ণাঙ্গ আইনে রূপান্তরের লক্ষ্যে আমরা সম্প্রতি খসড়াটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন এ বিষয়ে যা করার মন্ত্রণালয়ই করবে। এটি আইনে পরিণত হলে দেশে জাল টাকার প্রচলন কমবে বলে আশা প্রকাশ করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই কর্মকর্তা।

খসড়া আইনে অপরাধ : মুদ্রা জালকরণ, জাল মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয়, জাল মুদ্রাকে খাঁটি বলে প্রচার করা, প্রতারণার উদ্দেশে জাল মুদ্রা রাখা, জাল মুদ্রা বিদেশ থেকে দেশে আনা বা দেশ থেকে বিদেশে নেওয়া, অসৎ উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃত মুদ্রা বিকৃতকরণ, লেনদেন অযোগ্য মুদ্রা প্রতারণা করে লেনদেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বাতিলকৃত বা বিকৃত মুদ্রা বাজারজাতকরণ, জাল মুদ্রা তৈরির যন্ত্র, উপাদান বা দ্রব্যাদি প্রস্তুত সরবরাহ বা আমদানি-রফতানি বা মেরামত, বহন, হেফাজত বা ক্রয়-বিক্রয়, জাল মুদ্রা তৈরি সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদান, এ সংক্রান্ত ফাইল, ক্লিপিংয়ের হার্ডকপি বা সফট কপি দখলে রাখা, জাল অথবা আসল মুদ্রা সম্পর্কিত কোনো মিথ্যা গুজব ছড়ানো, এই আইনের আওতায় অপরাধ বলে গণ্য হবে।

প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী যে কোনো মূল্যের ১০০ পিসের কম জাল নোট পাওয়া গেলে দুই বছর কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা জরিমানা, ১০০ পিসের অধিক কিন্তু ৫০০ পিসের কম নকল মুদ্রার জন্য পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা, ৫০০ পিসের অধিক জাল নোট পাওয়া গেলে ৭ বছর কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকার জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

কোনো ব্যক্তি এই আইনের ধারায় দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে দণ্ড বেড়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে ১০০ পিসের কম জাল নোটের জন্য ৫ বছর কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা, ১০০ থেকে ৫০০ পিস জাল নোটের জন্য ৭ বছর কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা এবং জাল নোট ৫০০ পিসের বেশি হলে ১২ বছর কারাদণ্ড বা ২০ লাখ টাকার জরিমানা হবে।

একই আইনে তৃতীয়বার বা তার বেশিবার অপরাধ প্রমাণিত হলে ১০০ পিসের কম জাল নোটের জন্য ১০ বছর কারাদণ্ড বা ২০ লাখ টাকা জরিমানা, ১০০ থেকে ৫০০ পিস জাল নোটের জন্য ১২ বছর কারাদণ্ড বা ৫০ লাখ টাকা জরিমানা এবং ৫০০ পিসের অধিক জাল নোটের জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

জাল মুদ্রার বাহক যদি সরল বিশ্বাসে মুদ্রা বহন করে থাকেন এবং প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে তার কাছে রাখা মুদ্রা তিনি পাওনা হিসেবে পেয়েছেন তা হলে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রস্তাবিত আইনে কোনো অভিযোগ আনা যাবে না।

সর্বশেষ খবর