বুধবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

১৬ ভুলে খালাস আসামি!

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

আসামি শনাক্তকরণে ব্যর্থ হওয়া ও পুলিশের তদন্তের ভুলসহ ১৬ কারণে মামলা থেকে খালাস পায় বেশিরভাগ ডাকাতি মামলার আসামিরা। ২০১৬ সালে চট্টগ্রামের বিভিন্ন আদালত থেকে রায় হওয়া ১৭টি মামলার ওপর গবেষণা চালায় পুলিশের বিশেষায়িত তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ওই মামলাগুলোর মধ্যে ১৬টির আসামিরা খালাস পায়। বাকি একটি মামলার দুই আসামির সাজা হয়। ওই গবেষণায় ডাকাতি মামলার বিভিন্ন ভুলের ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে।

পিবিআইর ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘ডাকাতি মামলার আসামিরা কেন খালাস পান তা নিয়ে গবেষণা করছি। সারা দেশেই এ গবেষণা চালানো হচ্ছে। গবেষণা শেষ হলে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারব।’ জানা যায়, ডাকাতি মামলার আসামিরা কেন খালাস পান তা অনুসন্ধান করতে উদ্যোগ নেয় পিবিআই। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে সারা দেশে রায় হওয়া মামলার উপর গবেষণা শুরু করেছে পুলিশের বিশেষায়িত এ ইউনিটটি। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে ২০১৬ সালে রায় হওয়া ১৭টি মামলার পর্যালোচনা করা হয়। ওই পর্যালোচনায় রায় হওয়া ১৭টি মামলার মধ্যে ১৬টির আসামিরা প্রায় অভিন্ন কারণে খালাস পান। ডাকাতি মামলাগুলো পর্যালোচনা করে পিবিআই আসামি খালাসের ১৬টি কারণ চিহ্নিত করেছে। এ কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে-মামলায় প্রত্যক্ষ সাক্ষী না থাকা, আদালতে সাক্ষী অনুপস্থিত, লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধার না হওয়া, টিআই প্যারেডে আসামি শনাক্ত না হওয়া, আসামিরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি না দেওয়া, জবানবন্দি রেকর্ডকারী ম্যাজিস্ট্রেট সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আদালতে হাজির না হওয়া, প্রসিকিউশন আদালতে সাক্ষী হাজির করতে ব্যর্থ হওয়া, বিচারকালীন কেইস ডায়েরি খুঁজে না পাওয়া, পূর্বশত্রুতামূলক ও সন্দেহবশতভাবে মামলায় আসামি করা, কোনো সাক্ষী আসামিদের নাম উল্লেখ না করা, বিলম্বে এজাহার দায়ের, প্রয়োজনীয় তথ্য প্রমাণ দিয়ে অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হওয়া, মামলার সাক্ষীরা ডাকাত শনাক্তকরণে ব্যর্থ হওয়া, জবানবন্দি রেকর্ডকারী ম্যাজিস্টেট রেকর্ড করার সময় সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ না করা এবং জব্দ তালিকা ও জব্দকৃত মালামাল আদালতে উপস্থাপন না করা। ওই গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মামলায় আসামি খালাস পেয়েছেন, সেগুলোর বিচার কার্য শেষ করতে গড়ে ১২ বছরের বেশি সময় লেগেছে। গবেষণা প্রতিবেদনে কিছু সুপারিশও করা হয়। তার মধ্যে রয়েছে তদন্তকারী কর্তৃপক্ষকে ত্রুটিমুক্ত এজাহার প্রণয়ন, তদন্তের সময় ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ, সাক্ষীদের শনাক্ত ও অভিযোগপত্রের কলামে সাক্ষী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত, আসামিদের জবানবন্দি আদালতে রেকর্ড করার ব্যবস্থা, অপরাধ প্রমাণে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার, সংশ্লিষ্ট দালিলিক সাক্ষ্য ব্যবহার ও দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করা অন্যতম।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর