বৃহস্পতিবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

আজ একুশে বইমেলা

মোস্তফা মতিহার

আজ একুশে বইমেলা

আজ পয়লা ফেব্রুয়ারি। ভাষার মাসের প্রথম দিন। আজ থেকে স্বাধীনতার স্মৃতিবিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ সরব হয়ে উঠবে বইপ্রেমীদের উপস্থিতিতে। নতুন বইয়ের গন্ধ ও বিকিকিনিতে আজ থেকে এক মাস মুখরিত থাকবে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণ। অমর একুশে গ্রন্থমেলার রীতি অনুযায়ী আজ বিকাল ৩টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে মাসব্যাপী এ মেলা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী মঞ্চে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন। এ ছাড়া উদ্বোধন শেষে মেলাপ্রাঙ্গণ পরিদর্শন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এতে বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়কমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিদেশি অতিথি হিসেবে থাকবেন যুক্তরাজ্যের লেখক এগনিস মিডোস, ক্যামেরুনের ড. জয়েস অ্যাসউনটেনটেঙ, মিসরের ইবরাহিম এলমাসরি ও সুইডেনের অরনে জনসন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তৃতা প্রদান করবেন সংস্কৃতি সচিব ইব্রাহীম হোসেন খান। স্বাগত বক্তব্য দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। সভাপতিত্ব করবেন একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামান। এতে প্রধানমন্ত্রীর হাতে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘আলোকচিত্রে বাংলা একাডেমির ইতিহাস এবং বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ : বহুমাত্রিক বিশ্লেষণ’ শীর্ষক গ্রন্থ তুলে দেওয়া হবে। বাংলা একাডেমি অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৮-এর সঙ্গে ২২-২৩ ফেব্রুয়ারি আয়োজন করেছে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবারই প্রথম সর্ববৃহৎ পরিসরে সর্বাধিকসংখ্যক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে মেলায়। এ ছাড়া মেলায় নিরাপত্তার বিষয়টিকেও বেশ প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। ২ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে সেমিনার। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি-রাজনীতি-সমকালীন প্রসঙ্গ এবং বিশিষ্ট বাঙালি মনীষার জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া মাসব্যাপী প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অমর একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষে বাংলা একাডেমি শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা এবং সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। গ্রন্থমেলায় টিএসসি, দোয়েল চত্বর দিয়ে দুটি মূল প্রবেশপথ, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে তিনটি পথ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ ও বাহিরের ছয়টি পথ থাকবে। বিশেষ দিনগুলোয় লেখক, সাংবাদিক, প্রকাশক, বাংলা একাডেমির ফেলো ও রাষ্ট্রীয় সম্মাননাপ্রাপ্ত নাগরিকদের জন্য প্রবেশের বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে। ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে মেলাপ্রাঙ্গণ। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা এবং ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে। ৫ লাখ বর্গফুট জায়গার বিশাল পরিসরের এবারের মেলাকে ১২টি চত্বরে বিন্যস্ত করা হয়েছে। একাডেমি প্রাঙ্গণে ৯২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৩৬টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৬৩টি প্রতিষ্ঠানকে ৫৮৩টি ইউনিট; মোট ৪৫৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৭১৯টি ইউনিট এবং বাংলা একাডেমিসহ ২৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ২৪টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ১৩৬টি লিটল ম্যাগাজিনকে লিটল ম্যাগাজিন কর্নারে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র প্রকাশনা সংস্থা এবং ব্যক্তি উদ্যোগে যারা বই প্রকাশ করেছেন তাদের বই বিক্রি বা প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের স্টলে। গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫% কমিশনে বই বিক্রি করবে। একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলা একাডেমির একটি প্যাভিলিয়ন, ৪ ইউনিটের দুটি, একাডেমির শিশু-কিশোর উপযোগী বইয়ের জন্য একটি এবং একাডেমির সাহিত্য মাসিক ‘উত্তরাধিকার’-এর একটি স্টল থাকবে। এবারও শিশুচত্বর মেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকবে। এই কর্নারকে শিশু-কিশোর বিনোদন ও শিক্ষামূলক অঙ্গসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৮-এর প্রচার কার্যক্রমের জন্য তথ্যকেন্দ্র থাকবে বর্ধমান ভবনের পশ্চিম বেদিতে ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। এ ছাড়া মেলায় আগত মানুষের বসার স্থানসহ নান্দনিক ফুলের বাগানও নির্মাণ করা হয়েছে। সাংবাদিকদের অবাধ তথ্য আদান-প্রদানের সুবিধার্থে গ্রন্থমেলায় মিডিয়া সেন্টার থাকবে তথ্যকেন্দ্রের উত্তর পাশে। বর্তমান সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ধারণার অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই কর্তৃপক্ষ গ্রন্থমেলায় তাদের নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন, তথ্যকেন্দ্রের সর্বশেষ খবরাখবর এবং মেলার মূল মঞ্চের সেমিনার প্রচারের ব্যবস্থা করবে। মেলায় থাকবে ওয়াইফাই সুবিধা। গ্রন্থমেলার প্রবেশ ও বাহির পথে পর্যাপ্তসংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নিরাপত্তাকর্মীরা। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য মেলায় এলাকাজুড়ে আড়াই শ ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গ্রন্থমেলা সম্পূর্ণ পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত থাকবে। মেলাপ্রাঙ্গণ ও পাশের এলাকায় (সমগ্র মেলাপ্রাঙ্গণ ও দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি হয়ে শাহবাগ, মত্স্য ভবন, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত এবং দোয়েল চত্বর থেকে শহীদ মিনার হয়ে টিএসসি, দোয়েল চত্বর থেকে চানখাঁরপুল, টিএসসি থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত) নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকবে। মেলার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং নিয়মিত ধূলিনাশক পানি ছিটানো, ভ্রাম্যমাণ টয়লেট স্থাপন ও প্রতিদিন মশক নিধনের সার্বিক ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অবস্থিত স্বাধীনতাস্তম্ভ ও এর পাশের স্থানকে নান্দনিকভাবে গ্রন্থমেলার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে যাতে স্বাধীনতাস্তম্ভের আলোক-বিচ্ছুরণে মেলাপ্রাঙ্গণ আলোকিত হয়ে ওঠে। শারীরিকভাবে অসুবিধাগ্রস্ত ও প্রবীণ মানুষের চলাচলের সুবিধার্থে হুইল চেয়ারের সংখ্যা গতবারের চেয়ে এবার বৃদ্ধি পাবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে তিনটি ও বাংলা একাডেমি অংশে দুটি ক্যান্টিন চালু থাকবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা মাথায় রেখে উদ্যান ও একাডেমি উভয় অংশের স্টলগুলোয় টিনের ছাউনি দেওয়া হয়েছে। গ্রন্থমেলার উভয় অংশে বাংলা একাডেমি ও অন্য প্রকাশকদের ২৪টি প্যাভিলিয়ন থাকছে। এবার ইউনিট বেড়েছে প্রায় ১০০। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বড় পরিসরের ‘নতুন বইয়ের প্রদর্শনশালা’ করা হয়েছে। এতে প্রতিদিন প্রকাশিত নতুন বই দিনভিত্তিক সাজানো থাকবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পর্যাপ্ত মাটি ফেলে জমি ভরাট করা হয়েছে। প্রায় ১ লাখ বর্গফুট এলাকায় ইট ও বালু দিয়ে অস্থায়ী রাস্তা/উন্মুক্ত প্রান্তর নির্মাণ করা হয়েছে। শিশুচত্বরে স্টলের সংখ্যা বেড়েছে। ইট বিছিয়ে শিশুচত্বরকে উন্নত করা হয়েছে। ১ হাজার বর্গফুট জায়গায় টাইলস দিয়ে নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা অজু ও টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

পুরস্কার : অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ২০১৭ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগত মান বিচারে সেরা গ্রন্থের জন্য প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ এবং ২০১৭ গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা গ্রন্থ প্রকাশের জন্য তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে। এ ছাড়া ২০১৭ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগত মান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ এবং এ বছরের মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ প্রদান করা হবে। এবারের গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশ করছে নতুন ও পুনর্মুদ্রিত ১৪১টি নতুন বই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর