শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

নগরী এখন আতঙ্কমুক্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রায় ঘিরে আতঙ্কিত রাজধানী স্বাভাবিকতায় ফিরতে শুরু করেছে। রায়ের আগের দিন বুধবার বিকাল থেকেই রাজধানীর চিত্র পাল্টে যায়। ফাঁকা হতে শুরু করে ঢাকা। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয় গোটা রাজধানী। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মানুষের চলাফেরাও কমতে শুরু করে। রাতভর রাজধানী ছিল এক অজানা আতঙ্কে। পরদিন ছিল জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়। ভোর থেকেই ঢাকা ছিল জনমানবশূন্য। সময় যতই গড়াতে থাকে, আতঙ্ক ততই বাড়তে থাকে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’ থেকে বিশেষ আদালতের উদ্দেশে রওনা দেন পৌনে ১২টার দিকে। গুলশান থেকে বকশীবাজারে যাওয়ার পথে চার দফা ছোটখাটো সংঘর্ষ  হয়। এরপর বিশেষ আদালতে তিনি ছিলেন প্রায় আধাঘণ্টা। এ সময় বকশীবাজার এলাকায় থেমে থেমে কিছু সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়। বেলা পৌনে ৩টার দিকে বেগম জিয়াকে যখন নাজিমউদ্দিন রোডের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়, তখনো বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে কিছুটা উত্তেজনা ছিল। দিন শেষে রাত গড়াতেই আবারও নীরব হতে শুরু করে রাজধানী। গতকাল বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচি থাকলেও রাজধানী ছিল শান্ত। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আজও বিক্ষোভ ডেকেছে দলটি। তবে দলের প্রধান খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগেই নেতা-কর্মীদের বার্তা দিয়ে যান, শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করতে হবে। কোনো হঠকারিতা করা যাবে না। এর পরই বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। এ কারণে গতকাল সকালেই কার্যত রাজধানী স্বাভাবিকতায় ফিরতে শুরু করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতাও কমে যায়। দুপুরের পর থেকে রাজধানী ছিল চিরচেনা রূপে। নগরবাসীর মধ্যেও স্বস্তির মনোভাব লক্ষ্য করা যায়। রায়ের দিন সহিংসতার আশঙ্কায় বন্ধ ছিল দোকান। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতেই দোকান খুলে ব্যবসা শুরু করে মানুষ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে গণপরিবহন আর ব্যক্তিগত গাড়ির আনাগোনা। রিকশা চলাচলও বাড়তে থাকে মহল্লাগুলোয়। খালেদা জিয়ার রায় ঘিরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজধানীতে আসা দূরপাল্লার যানবাহন ছিল ফাঁকা। রাজধানীর গাবতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, যাত্রী নিয়ে বাসগুলো ঢুকতে শুরু করেছে। নাটোর থেকে আসা যাত্রী মোরশেদ আলম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতের গাড়িতে টিকিট কেটেছিলাম। কিন্তু খালেদা জিয়ার রায়ের তারিখ থাকায় টিকিট ফিরিয়ে দিই। পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকায় শুক্রবার এলাম।’ ছুটির দিন হওয়ায় সকালের দিকে রাস্তায় যানবাহন কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে যানবাহনের সংখ্যা। বিকালে বিনোদন কেন্দ্রে শিশুদের নিয়ে ভিড় করেন বাবা-মা। রায় ঘিরে একরকম অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল ঢাকা। চাপা উৎকণ্ঠায় বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বের হয়নি মানুষ। রায়-পরবর্তী পরিস্থিতিতে কেটে গেছে সেই ধোঁয়াশা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ, গুলিস্তান, নয়াপল্টন মোড়সহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি লক্ষণীয় ছিল। অরাজক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে ছিল টহল পুলিশের দল। রাজধানীর বিমানবন্দর স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে এলোমেলো দাঁড়িয়ে অল্প কিছু মানুষ। ট্রেনগুলো আসছে বেশ ফাঁকাই। স্টেশনের নিরাপত্তাকর্মী বলেন, বৃহস্পতিবার কর্মজীবী মানুষ ছাড়া দূরপাল্লার যাত্রীদের আনাগোনা ছিল কম। রাতের ট্রেনগুলো অনেকটা ফাঁকা এসেছে বলে জানান তিনি। একই অবস্থা ছিল লঞ্চঘাটেও।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর