রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

অনিবন্ধিত স্কুলে কী পড়ায়

শিক্ষার হালচাল - ১৫

জয়শ্রী ভাদুড়ী

কিন্ডারগার্টেন পরিচালনার জন্য নিবন্ধনের বিধান থাকলেও নিয়মের তোয়াক্কা না করে চলছে অনিবন্ধিত স্কুলগুলো। এ রকম অনিবন্ধিত স্কুলের সংখ্যা কত এবং এরা কী পড়ায় তা জানে না কেউ। শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকির বাইরে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠছে এসব স্কুল। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত মাত্র ৬১৪টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি নিবন্ধনের জন্য প্রাথমিক অনুমোদন পেয়েছে। ২০১৫ সালে সর্বশেষ অধিদফতর দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর যে শুমারি করেছিল, সে অনুযায়ী সারা দেশে কিন্ডারগার্টেনের সংখ্যা ১৮ হাজার ৩১৮। অন্যদিকে মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন ঐক্য পরিষদ (বিকপ) বলছে, এমন স্কুল আছে প্রায় ৬৫ হাজার। ১৯৬২ সালের রেজিস্ট্রেশন অব প্রাইভেট স্কুল অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, ২০১১ সালে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিবন্ধন বিধিমালা প্রণীত হয়। আইন প্রণয়নের সাত বছর পার হলেও নিবন্ধনের আওতায় আসেনি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো। এ

পর্যন্ত মূল্যায়ন কমিটির চারটি সভায় ৬১৪টি কিন্ডারগার্টেনকে প্রাথমিক অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের পলিসি অ্যান্ড অপারেশন বিভাগের তথ্যানুযায়ী, এ স্কুলগুলোর ২৮৩টিই ঢাকা বিভাগের। কমিটি চট্টগ্রাম বিভাগে মাত্র তিনটি ও সিলেট বিভাগে পাঁচটি কিন্ডারগার্টেনকে সুপারিশ করেছে। রংপুরে সুপারিশ পেয়েছে ১৫৪, খুলনায় ১১২, রাজশাহীতে ৪৮ ও বরিশালে ৯টি কিন্ডারগার্টেন।

২০১১ সালের বিধিমালায় নিজস্ব মালিকানা বা ভাড়ায় স্কুলের জন্য নেওয়া জমির পরিমাণ এলাকাভেদে ৮, ১২ ও ৩০ শতাংশ নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল। সংশোধিত বিধিতে বলা হয়, এর চেয়ে কম জমিতে হলেও বিদ্যালয়গুলো নিবন্ধন পাবে। কিন্তু রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আবাসিক-বাণিজ্যিক ভবন ভাড়া নিয়ে গড়ে উঠছে কিন্ডারগার্টেন। এসব বিদ্যালয়ে না আছে নিজস্ব ভবন, না আছে খেলার মাঠ। ছোট্ট শ্রেণিকক্ষে গাদাগাদি করে পড়ালেখা করছে শিশুরা। বেঞ্চ বসানো হয় বারান্দায়। বনশ্রী এলাকার বেশকিছু কিন্ডারগার্টেন ঘুরে দেখা গেছে এ চিত্র। সহশিক্ষা কার্যক্রম না থাকলেও এসব বিদ্যালয়ে বইয়ের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের কাঁধে। ২০১২ সালের সংশোধিত বিধিমালা অনুযায়ী, কিন্ডারগার্টেনগুলোকে অবশ্যই জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত পাঠ্যবই পড়াতে হবে। এর বাইরে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের তালিকাভুক্ত যুগোপযোগী অন্যান্য বইও পাঠ্যক্রমে রাখা যাবে। কিন্তু প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেণিতে মাত্র তিনটি পাঠ্যবই রাখার বিধান থাকলেও কমবেশি নয়টি বই ধরিয়ে দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের সিলেবাসে। কোন লেখকের কী বই পড়ানো হচ্ছে তা জানে না খোদ কর্তৃপক্ষ। তারা কি সঠিক শিক্ষা দিচ্ছে, নাকি জঙ্গিবাদে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য নেই শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। এই অবহেলার সুযোগে শিক্ষার্থীদের ‘ব্রেন ওয়াশ’ করার পাশাপাশি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে অনেক অনিবন্ধিত বিদ্যালয়। ২০১৫ সালে গণসাক্ষরতা অভিযানের একটি সমীক্ষায় সারা দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর একটি তুলনামূলক চিত্র দেওয়া হয়েছে। ‘এডুকেশন ওয়াচ ২০১৫, মুভিং ফ্রম এমডিজি টু এসডিজি’ নামের এই সমীক্ষায় দেখানো হয়েছে, ২০১৪ সালে মাত্র ৪৯ শতাংশ কিন্ডারগার্টেনের নিজস্ব ভবন ছিল। অর্থাৎ দেশের অর্ধেকের মতো কিন্ডারগার্টেনই চলছিল ভাড়াবাড়িতে। কিন্ডারগার্টেনগুলোয় প্রশিক্ষিত শিক্ষকের হার খুবই কম। গণসাক্ষরতা অভিযানের সমীক্ষাটি বলছে, ২০১৪ সালে কিন্ডারগার্টেনগুলোর শিক্ষকদের মাত্র ১৫ শতাংশ ছিলেন প্রশিক্ষিত। একই সময়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় প্রশিক্ষিত শিক্ষকের হার ছিল ৯৪ শতাংশ। এ ব্যাপারে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, যেখানে-সেখানে ব্যাঙের ছাতার মতো ইংরেজি ও বাংলা উভয় মাধ্যমের স্কুল গড়ে উঠছে। এসব অনিবন্ধিত স্কুলের পাঠ্যক্রম সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না থাকায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে জঙ্গিবাদ। এসব স্কুলের পাঠ্যক্রম তদারকির জন্য আলাদা মনিটরিং বোর্ড গঠন করা দরকার বলে মন্তব্য করেন এই শিক্ষাবিদ।

সর্বশেষ খবর