বৃহস্পতিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

লোকারণ্য বইমেলা

মোস্তফা মতিহার

লোকারণ্য বইমেলা

বইমেলা গতকাল ছিল লোকে লোকারণ্য —বাংলাদেশ প্রতিদিন

লোকারণ্য ছিল গতকালের অমর একুশে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণ। ভাষাশহীদদের স্মরণ করে ভোর থেকে প্রাঙ্গণজুড়ে বেজেছে একুশের গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’। এই সঙ্গে হাজার হাজার নারী-পুরুষ-শিশু-কিশোরের শরীরে শোভা পাচ্ছিল বর্ণমালার উলকি, হাতে একুশের পতাকা, মুখাবয়বে ‘মোদের গরব, মোদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষা!’র অঙ্কিত স্লোগান, ঠোঁটের কোণে ছিল মাতৃভাষা বাংলা ঘিরে আনন্দের ঝিলিক,  সবার চোখেমুখে ছিল সংগ্রামে উদ্দীপ্ত হওয়ার শপথ। বসনেও ছিল শোকের কালো রঙে একুশের আবহে ভাষার প্রতি বাঙালির একাত্মতা।

একুশের চেতনায় একাকার ছিল স্বাধীনতার স্মৃতিবিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। হাতে হাতে বই, ব্যাগে ব্যাগে বই, বইয়ের সঙ্গে সেলফি— এসব দৃশ্যগুলো যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা। ধর্মবর্ণনির্বিশেষে আবালবৃদ্ধবনিতার উজ্জীবিত উপস্থিতিতে প্রাণের মেলা ছিল একুশময়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস ২১ ফেব্রুয়ারির চিত্রটি ছিল এমনই।

শহীদ মিনার থেকে দোয়েল চত্বর, টিএসসি থেকে শাহবাগ, বাংলা একাডেমি থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছিল জনসমুদ্রের বাঁধভাঙা জোয়ার। দীর্ঘ সময় সুশৃঙ্খল ও সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে মেলায় প্রবেশ করে প্রিয় লেখকের পছন্দের বইটি কিনেই মেলাপ্রাঙ্গণ ত্যাগ করেছেন বইপ্রেমীরা। এদিন প্রতিটি স্টল ও প্যাভিলিয়নের বিক্রয়কর্মীরা ব্যস্ততার কারণে দম ফেলারও ফুরসত পাননি। বিকিকিনি আশাব্যঞ্জক হওয়ায় প্রকাশক ও লেখকদের চোখেমুখে ছিল আনন্দের ঝিলিক।

তবে একুশের গ্রন্থমেলায় সস্তা গল্প-কবিতা ও উপন্যাসের অভাব না থাকলেও একুশ নিয়ে প্রকাশনা ছিল নগণ্য; যার কারণে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন ঋদ্ধ পাঠকরা। ঐতিহ্য প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন কাজল বলেন, ‘চমৎকার মেলা হচ্ছে। যা আশা করেছিলাম তার চেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে। আশা করছি এবারের মেলাটি অন্যবারের সফলতার রেকর্ডগুলো ভঙ্গ করবে।’ অবসরের ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা বলেন, ‘সব ধরনের বই-ই বিক্রি হচ্ছে, বিভিন্ন বয়সী পাঠক বিভিন্ন ধরনের বই কিনছেন। তরুণরা কিনছে গল্প, উপন্যাস ও সায়েন্সফিকশন, আর একটু বয়সীরা কিনছেন প্রবন্ধ, গবেষণা ও অনুবাদ বই।’

মেলার সফলতা নিয়ে ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘প্রযুক্তির উৎকর্ষতার এই যুগে মানুষ বইমেলায় আসছে এবং বই কিনছে বিষয়টি খুবই ইতিবাচক। আশা করছি এবারের মেলা অন্যবারের সব সফলতার রেকর্ড ভাঙবে।’

এত ছিল বিকালের গল্প। সকালের চিত্রটাও ছিল একই রকম। গতকাল মেলার দ্বার খোলা হয় সকাল ৮টায় এবং বন্ধ হয় রাত ৯টায়। দ্বার খোলার পর থেকেই মেলার দুই প্রাঙ্গণে ভিড় করেন অগণিত বইপ্রেমী। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত শিশুদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখ করার মতো। এরপর সময় যত বেড়েছে বইপ্রেমীর আগমনও তত বাড়তে থাকে।

শেখ মেহেদী হাসানের প্রবন্ধগ্রন্থ ‘কীর্তিমানের কথা’ : আলোঘর প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে গবেষক ও সাংবাদিক শেখ মেহেদী হাসানের প্রবন্ধগ্রন্থ ‘কীর্তিমানের কথা’। বইটিতে স্থান পেয়েছে বিশ্বসাহিত্য, নাটক, চলচ্চিত্র, নৃত্য ও মুক্তিসংগ্রামীদের নিয়ে ৩০টি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ। বইমেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আলোঘর প্রকাশনীর ৪২০ ও ৪২১ নম্বর স্টলে বইটি পাওয়া যাচ্ছে।

মুহাম্মদ সেলিমের ‘জঙ্গিবাদ ও সমকালীন বাংলাদেশ’ : বাংলাদেশ প্রতিদিনের চট্টগ্রাম প্রতিনিধি মুহাম্মদ সেলিমের ‘জঙ্গিবাদ ও সমকালীন বাংলাদেশ’ বইটি প্রকাশ করেছে প্রকাশনা সংস্থা বইপত্র। বাংলদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে নির্বাচিত কিছু রিপোর্ট এ বইটিতে সন্নিবেশিত করা হয়েছে। বইটির দাম ৪০০ টাকা।

মোস্তফা কামালের ‘অ এর কিচ্ছা’ : সমকালীন নানা বিষয়ের ৫৫টি ঘটনা নিয়ে মোস্তফা কামালের নিবন্ধগ্রন্থ ‘অ এর কিচ্ছা’। পাওয়া যাচ্ছে বাংলা একাডেমি চত্বরে রিপোর্টার্স ইউনিটির ৬৭ নম্বর স্টলে এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাবুই ৫৩৮ নম্বর স্টলে।

কুয়াকাটা থেকে মারাকেশ : নিজামুল হক বিপুলের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা বর্ণনার ‘কুয়াকাটা থেকে মারাকেশ’ বইটি প্রকাশ করেছে বেহুলা বাংলা। বইমেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৭৩-৭৪ নম্বর স্টলে বইটি পাওয়া যাচ্ছে।

নতুন বই : বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, গতকাল মেলার ২১তম দিনে নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে ৩৯০টি। এর মধ্যে অন্যপ্রকাশ এনেছে সৈয়দ শামসুল হকের নতুন উপন্যাস ‘নদী কারো নয়’, ঐতিহ্য এনেছে সাইফুর রহমানের গল্পগ্রন্থ ‘পক্ষিরাজের ডানা’, মেলা এনেছে আমজাদ হোসেইনের ‘হীরামন বসতি’, জ্ঞানকোষ এনেছে মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘বিগ ব্যাং থেকে হোসো স্যাপিয়েনস’।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর