বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

সিটিং সার্ভিসে নৈরাজ্য কমেনি

আলোর মুখ দেখেনি তদন্ত প্রতিবেদন

জয়শ্রী ভাদুড়ী

রাস্তায় গণপরিবহন মানেই সিটিং সার্ভিস। গাদাগাদি করে যাত্রী তুললেও লেবাসে সবাই সিটিং সার্ভিস। ভাঙা জানালা, ছোট্ট সিট আর নোংরা পরিবেশে চলছে যাত্রী আনা-নেওয়া। যেখানে সেখানে থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা চললেও গায়ে সাঁটিয়ে রাখা হয়েছে ‘কম স্টপেজ সিটিং সার্ভিস’ লোগো। আবদুল্লাহপুর থেকে খিলক্ষেতে বাসস্ট্যান্ডের দূরত্ব সর্বোচ্চ ৬ কিলোমিটার। এ জন্য যাত্রীকে গুনতে হয় ১৫ টাকা ভাড়া।  সুপ্রভাত স্পেশাল সার্ভিসের ন্যূনতম ভাড়াই ১৫ টাকা। সিটিং সার্ভিসের নামে সরকারি হারের চেয়ে দেড়গুণ ভাড়া আদায় করছে কোম্পানিটি। মিরপুর-১২ নম্বর থেকে ইউসিবি চত্বরে নামলে তাকেও দিতে হয় ২৫ টাকা। সরকারি হিসাবে এখানে ভাড়া হওয়ার কথা ৫ টাকা। কিন্তু সিটিং সার্ভিস নাম দিয়ে যাত্রীদের গলা কেটে আদায় করা হচ্ছে পাঁচ গুণ বেশি ভাড়া। নামে সিটিং সার্ভিস কম স্টপেজ হলেও এমন কোনো স্টপেজ নেই যেখান থেকে যাত্রী নামানো-উঠানো হয় না। প্রত্যেক যাত্রীর জন্য সিট থাকার কথা থাকলেও প্রায়ই বাসের রড ধরে ঝুলে যাওয়া-আসা করতে দেখা যায় এসব রুটের যাত্রীদের।

গত বছর ৩ মে সিটিং সার্ভিসের এই নৈরাজ্য নিরসনে ‘সিটিং সার্ভিসসহ সুষ্ঠু যাত্রী সেবা’ নামে আট সদস্যের কমিটি গ্রহণ করা হয়েছে। বিআরটিএ’র পরিচালক শেখ মাহবুব ই রব্বানীকে প্রধান করে বিভিন্ন পেশাজীবীদের সমন্বয়ে আট সদস্যের এ কমিটি গঠিত হয়েছিল। সিটিং সার্ভিস থাকবে কি না এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানিয়ে গত জুলাই মাসে তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল। নির্ধারিত তারিখ পার করে কয়েক দফা মেয়াদ বাড়িয়ে গত মাসে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে এ কমিটি। কমিটি পরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে সুপারিশ করলেও তার বাস্তবায়নে নীতিমালা প্রণয়ন বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের দিকে নজর নেই কর্তৃপক্ষের। আর তাদের অবহেলার সুযোগ নিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করে ব্যবসা করে চলছে সিটিং সার্ভিস নামধারী পরিবহন ব্যবসায়ীরা। প্রতিবেদনের ব্যাপারে বিআরটিএ’র পরিচালক শেখ মাহবুব ই রব্বানী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা সিটিং সার্ভিস চালু রাখার সুপারিশ করেছি। সিটিং সার্ভিস থাকবে তবে সিটিং ও নন সিটিং গাড়ির রং আলাদা করতে হবে। মানুষ যেন দূর থেকে দেখলেই বুঝতে পারে গাড়ি সিটিং কি না। এর সঙ্গে সিটিং সার্ভিসের ভাড়া এবং রুট নির্ধারণ করতে হবে। গণপরিবহনের মালিকানা থাকবে চার-পাঁচটি কোম্পানির হাতে। ফলে বেপোরোয়াভাবে গাড়ি চালানো এবং গাদাগাদি করে যাত্রী তোলার দৌরাত্ম্য কমবে। সিটিং সার্ভিসের স্টপেজ আলাদা থাকবে। নির্দিষ্ট স্টপেজ ছাড়া যাত্রী ওঠা-নামা করানো যাবে না। এর সঙ্গে ট্রাভেল কার্ডের সুপারিশ করা হয়েছে। এতে করে যাত্রী কার্ড রিচার্জ করে বাসে যাতায়াত করতে পারবেন। গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা লাগাতে হবে। এতে করে কেউ নিয়ম ভঙ্গ করলে বা কোনো অপরাধ করলে তাদের শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনা যাবে। পথচারী পারাপারে রোডে জেব্রাক্রসিং থাকবে। এ ছাড়া নতুন কিছু বিআরটিএর ডবল ডেকার নামানোর সুপারিশ করা হয়েছে। এতে করে কম গাড়িতে বেশি যাত্রী পরিবহন করা যাবে। এর পাশাপাশি প্রাইভেট গাড়ির সংখ্যা কমাতে মানুষকে গণপরিবহনে যাতায়াত করতে উৎসাহিত করা হবে। তবে ভাড়া কোন রুটে কত হবে তা নির্ধারণ করবে বিআরটিএ। বিআরটিএর কাছে আমরা সুপারিশ করেছি কিন্তু সিদ্ধান্ত কবে নেওয়া হবে এবং কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তা বিআরটিএ ভালো বলতে পারবে। সিটিং সার্ভিস লোগো লাগিয়ে এখন সব গাড়িই রাতারাতি সিটিং হয়ে গেছে। কিন্তু যাত্রীদের সেবার মানে আসেনি কোনো পরিবর্তন। গতকাল রাজধানীর নর্দা থেকে অসুস্থ বাবাকে নিয়ে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের যাওয়ার জন্য জাবালে নূর পরিবহনে উঠেছেন আরিফ রহমান। ভাড়া কত দিতে হবে জানতে চাইলে বাসের হেলপার ৬০ টাকা দাবি করেন তার কাছে। ৫ মিনিটের গাড়িতে উঠে কেন ৬০ টাকা দিতে হবে জানতে চাইলে বাকবিতণ্ডা শুরু হয় হেলপারের কাছে। এ সময় হাসপাতাল চলে এলেও ৬০ টাকা না দিলে তাদেরকে বাস থেকে নামতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেয় হেলপার। পরবর্তীতে অন্য যাত্রীদের সহযোগিতায় দুজনের ৩০ টাকা ভাড়া দিয়ে বাস থেকে নামেন আরিফ। শুধু এই একটা রুট নয় অধিকাংশ রুটেই সিটিং সার্ভিসের ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে হাতাহাতি এখন প্রতিদিনের চিত্র। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজ্জামেল হক চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রাজধানীর গণপরিবহনে নৈরাজ্য নিরসনে আশ্বাস অনেক হয়েছে কিন্তু কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ এখনো চোখে পড়েনি। তাই কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান গণপরিবহনের ভাড়া, রুট এবং স্টপেজ নির্ধারণ করে যাত্রী দুর্ভোগ কমাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হোক।

সর্বশেষ খবর