বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার

সেবার রোল মডেল

জিন্নাতুন নূর

সেবার রোল মডেল

শুধু পেশাগত অপরাধ কার্যক্রমের তদারকি নয়, সেন্টারে আসা ভিকটিমদের মানবিক সহায়তাও পৌঁছে দিচ্ছে ভিকটিম সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার। সাধারণত ব্যস্ততার জন্য রাজধানীর বিভিন্ন থানার পুলিশ সদস্যদের ভিকটিমদের কথা শোনার সময় কম থাকে। কিন্তু এই সেন্টারে আইনি সহায়তা নিতে আসা ভিকটিমরা শুধু সেন্টারে উপস্থিত হয়ে নয়, মধ্যরাতেও নারী পুলিশ সদস্যদের ফোন দিয়ে আইনি পরামর্শ নিচ্ছেন। আবার সেন্টারে আসা অনেক ভিকটিম আছেন যারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, যাদের কাউন্সিলিং প্রয়োজন তারাও এখানে এসে মনের কষ্ট পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে ভাগাভাগি করেন। রূপা (ছদ্মনাম) নামের এক তরুণী ভালোবেসে বিয়ে করেন তার চাচাতো ভাইকে। কিন্তু বিয়ের পরপরই রূপার দাম্পত্য জীবনে অশান্তি নেমে আসে। রূপা ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে হাজির হন বিচারের দাবি নিয়ে। রূপার কথা শুনে পুলিশ সদস্যরা তাকে মানসিকভাবে শক্তি জোগানোর চেষ্টা করেন। তাদের কাউন্সিলিংয়ে রূপা কিছুটা হলেও ফিরে পান মনের বল। হাসিমুখে বাড়ি ফিরে যান। এরই মধ্যে বিশেষ সেবা প্রদানের জন্য পুলিশ বিভাগের এই প্রতিষ্ঠানটি এক ধরনের ‘রোল মডেল’-এ পরিণত হয়েছে। এ কারণে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ইউএন এজেন্সির কর্মকর্তারা ও বিভিন্ন দেশি-বিদেশি এনজিও সংস্থা এই সেন্টারটি পরিদর্শন করতে আসছেন। বর্তমানে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের মোট জনবল ১০৬। এর মধ্যে পাঁচজন পুরুষ পুলিশ সদস্য ছাড়া অন্যরা নারী সদস্য। কিন্তু কর্তৃপক্ষের ভাষ্য হচ্ছে, সেবার পরিধি যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে সেন্টারে আরও বেশি দক্ষ জনবল প্রয়োজন। বিশেষ করে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অফিসারের প্রয়োজন বেশি। এ ছাড়া সেন্টারে থাকা অফিসারদের বিভিন্ন সময় বদলি হওয়ায় সেভাবে দক্ষ জনবলও তৈরি হচ্ছে না। ভিকটিমদের থাকার জন্য সেন্টারে আছে দুটি বড় ডরমেটরি। একটি নারী ও কন্যাশিশুদের, অন্যটি ১০ বছরের কম বয়সী ছেলেশিশুদের। প্রতিটি ডরমেটরিতে ১৬ জন ভিকটিমের থাকার ব্যবস্থা আছে। তবে যখন সেন্টারে আসা ভিকটিমের সংখ্যা ধারণক্ষমতার চেয়ে বৃদ্ধি পায় তখন খাটগুলো জোড়া দিয়ে এবং মাটিতে জাজিম বিছিয়ে ভিকটিমদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়। বর্তমানে এখানে আছে ৮ জন ভিকটিম। সারা দেশে আছে মোট ৮টি ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার। উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের উপ-কমিশনার ফরিদা ইয়াসমিন মঙ্গলবার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের আন্তরিকতার জন্য বাড়ি ফিরে যাওয়ার সময় এলে এখানে কিছুদিন আশ্রয়ে থাকা ভিকটিম সেন্টার ছাড়তে চান না। বিশেষ করে শিশুরা আমাদের জড়িয়ে ধরে কান্নকাটি করে। কিছুদিন আগে এক শিশু সেন্টার ছেড়ে যাওয়ার সময় আমাদের ধরে কান্নাকাটি করে বলছিল, ‘আন্টি আমি এ জায়গা থেকে যেতে চাই না। এখানেই থাকতে চাই। এই শিশুদের অনেকে আছে যারা উচ্চবিত্ত পরিবারের ইংরেজি মাধ্যমে পড়ুয়া শিক্ষার্থী। এই শিশুরা পারিবারিক অশান্তির শিকার। আবার অনেক নারী সংসারের অশান্তি ও স্বামী কর্তৃক নির্যাতিত হয়ে বাড়ি ফিরে যেতে চান না। তারা এখানে থেকে যাওয়ার এবং তাদের চাকরি দেওয়ার অনুরোধ করেন। তবে আমরা শুধু নারী-শিশুদেরই কাউন্সিলিং করাই না, পারিবারিক অশান্তির শিকার পুরুষদেরও কাউন্সিলিং দিয়ে থাকি। এমনও হয়েছে যে মধ্যরাতে অনেক নারী ফোন দিয়ে আত্মহত্যা করার কথা বলছেন। আমি নিজে কথা বলে তাদের বাধা দিই, মনোবল বৃদ্ধি করি।’ পুলিশ বিভাগের এই সেবা দিন দিন জনপ্রিয় হলেও  সেন্টারটির জনবল স্বল্পতা আছে। এখানে কোনো স্থায়ী চিকিৎসক নেই। একজন ছিলেন কিন্তু সে চিকিৎসকও বিদেশ গেছেন। এনজিওর মাধ্যমে কিছু নার্স সেবা প্রদান করলেও তারা নির্ধারিত সেবার বাইরে রাতে কাজ করতে চান না। অথচ রাতে আঘাতপ্রাপ্ত অনেক ভিকটিম সেন্টারে আশ্রয় নেয়। সংকট আছে কাউন্সিলর ও আইনজীবীরও।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর